শিরোনাম
থাইল্যান্ডের ভিক্ষু, মিয়ানমারের ভিক্ষু
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০১৮, ১৭:৩১
থাইল্যান্ডের ভিক্ষু, মিয়ানমারের ভিক্ষু
আশীষ চক্রবর্ত্তী
প্রিন্ট অ-অ+

ব্যাংকিং নিয়ে একটি প্রতিবেদন আমাকে চমকে দিয়েছিল। সেটা পড়ে জানলাম, থাইল্যান্ডে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ঋণ দেয়া হচ্ছে। প্রায় সুদহীন ঋণ, তবে শর্ত প্রযোজ্য।


কী শর্ত? সেখানেই অভিনবত্ব। ঋণ তাঁদেরই দেয়া হচ্ছে যাঁরা বুদ্ধের বাণী মনে রাখেন, যাঁরা বৌদ্ধ ধর্মের নীতি-আদর্শ থেকে কখনোই বিচ্যুত হন না।


শর্ত পূরণের ব্যাপারটি পুরোপুরি দেখা সম্ভব কিনা, তা দেখেই ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে কিনা জানি না, তবে ‘অধর্ম' থেকে দূরে রেখে ভিক্ষুদের ধর্মে রাখার চেষ্টা হচ্ছে - এ ব্যাপারটি চমৎকার লাগল।


আজকাল ভিক্ষুদের নাম শুনলেই মিয়ানমারের ভিক্ষুদের কথা মনে পড়ে। তাদেরও ''অহিংসা পরম ধর্ম'' হওয়ার কথা। অথচ মিয়ানমারের ভিক্ষুরা গৌতম বুদ্ধের অহিংসার বাণী ভুলে এমন নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে যে রোহিঙ্গা মুসলমানরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। মিয়ানমার সরকারও রোহিঙ্গাবিমুখ। সহিংস ভিক্ষুদের বাধা দিয়ে কে বাঁচাবে রোহিঙ্গাদের?


থাইল্যান্ডও স্বর্গ নয়৷ মানবপাচারকারীদের কারণে অনেক রোহিঙ্গা, অনেক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে সেখানেও। তারপরও থাইল্যান্ড সরকার ও ভিক্ষুদের কাছ থেকে মিয়ানমারের অনেক কিছু শেখার আছে। থাইল্যান্ডেও সাম্প্রদায়িকতা আছে, মৌলবাদও আছে। দক্ষিণ থাইল্যান্ড থেকে অনেক দিন পর পর হলেও সেরকম কিছু খবর সত্যিই আসে। তবে সেই অঞ্চলের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কিন্তু মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেনি। সেখানে বরং এমন ভিক্ষুও আছেন যাঁরা মানুষকে তো ভালোবাসেনই, বাঘকেও ভালোবাসেন, বাঘকে পোষ মানান। সেই ভিক্ষুরা মন্দিরে বাস করেন বাঘের সঙ্গে। বাঘের সঙ্গেই তাঁদের নাওয়া-খাওয়া-ঘুম-খেলাধুলা সব!


বাঘকে ভালোবাসেন বলে অন্য প্রাণীদের প্রতিও তাঁরা এতটুকু নির্দয় নন। ইউটিউবে দেখলাম, ভিক্ষুদের পোষা বাঘ হঠাৎ গরু-মহিষ কাছে পেয়ে তেড়ে যাচ্ছে আর ভিক্ষুরা কী কষ্ট করে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তাদের বাঁচাচ্ছেন।


এক দেশের ভিক্ষু মানুষ মারছে, পাশের দেশের ভিক্ষুরা আবার গরু-মহিষ বাঁচাতেও মরিয়া। থাইল্যান্ডের ভিক্ষুরা মানুষের তো বটেই, গরু-মহিষের প্রাণের দামও বোঝেন, অথচ মিয়ানমারের ভিক্ষুরা এতই স্বার্থান্ধ যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশান্তরিত করতে গৌতম বুদ্ধের আদর্শকে ভুলুণ্ঠিত করতেও তাদের বাধছে না।


মিয়ানমারের সরকার এবং ভিক্ষুরা যদি থাইল্যান্ডের ওই ভিক্ষুদের কাছ থেকে গৌতম বুদ্ধের আদর্শের পাঠটা নতুন করে নিতেন! যদি তাঁরা মানুষের সঙ্গে মানুষের মতো আচরণ করতে আবার শিখতেন নতুন করে! তাহলে রোহিঙ্গাদের এবং সমগ্র মানবজাতির খুব উপকার হতো। সূত্র : ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com