কোনো-কোনো দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না-দেয়ার যে সিদ্ধান্ত সেদেশের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিয়েছিলেন, মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট তা বহাল রেখেছে। এদিকে আফ্রিকা ও সিরিয়ান অভিবাসীদের চাপে বেশ ভুগছে ইউরোপের দেশগুলো। কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ক্যাম্প বানিয়ে সেখানে অভিবাসীদের ঠাই দিয়েছে। এসব ক্যাম্পে বাসিন্দাদের দুর্দশার কোনো সীমা নেই। অন্যদিকে সম্প্রতি কানাডা ঘোষণা দিয়েছে যে আগামী তিন বছরের মধ্যে তারা এক মিলিয়ন (১০ লাখ) অভিবাসীকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
১৯৯০এর দশকের শেষ পাদে যেমনটি ভেবেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, একই ভাবনা আজ ভাবছে কানাডা যে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে অভিবাসীরা। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ কোনো-কোনো দেশের অভিবাসীদের গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে।
কানাডা যে মিলিয়ন ইমিগ্র্যান্টকে স্বাগত জানানোর ঘোষণা দিয়েছে, তা যে কেবলই মানবিক কারণে, তা কিন্তু নয়। তারা কেবল সেসব অভিবাসীকেই নেবে, যারা শিক্ষিত, মেধাবী অথবা ধনাঢ্য। অন্যান্য পশ্চিমা দেশের মতোই কানাডাও সেসব অভিবাসীর জন্যই তার দরজা খুলতে যাচ্ছে, যারা শিক্ষিত অথবা ধনী।
একইভাবে গত বছর তুরস্কও ঘোষণা দেয় যে তারা সিরিয়ান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও কলেজ ডিপ্লোমাধারীদের নাগরিকত্ব দেবে। সে অনুযায়ী ছয় মাসে তারা ৩০ লাখ সিরিয়ান শরণার্থীর মধ্য থেকে ৪০ হাজারের বেশি অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দেয়ও।
কোনো দেশ যদি যোগ্য অভিবাসীদের আকর্ষণ করে, আমরা তাদের দোষ দিতে পারি না। তুরস্কের আগে ইউরোপও এ কাজ করেছিল। ইউরোপেরও আগে দীর্ঘ দিন যাবত একই কাজ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর তাই মার্কিন বিজ্ঞানীদের প্রায় ৪০ শতাংশের জন্ম ভিনদেশে। যেসব অভিবাসী একটি শক্তিশালী দেশ ও অর্থনীতি গড়ায় অবদান রাখতে পারবে, পশ্চিমা দেশগুলো তাদেরই স্বাগত জানায়, আর যেসব অভিবাসী গরীব ও অকাজের, তাদের তারা প্রত্যাখ্যান করে।
সউদি আরবে বর্তমানে প্রায় ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি প্রবাসী শ্রমিক রয়েছে। তাদের মধ্যে এমন কতো জন রয়েছে যাদের সউদি নাগরিকত্ব দেয়া যেতে পারে? আমাদের প্রথমেই দেখতে হবে কারা উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন, যাদের দিয়ে আমাদের দেশ উপকৃত হবে আর কারা অদক্ষ এবং তাদের কাছ থেকে পাওয়ার কিছু নেই। আর যারা এদেশে জন্মগ্রহণ করেছে, তাদেরকে সউদি নাগরিকত্ব দেয়া উচিত বলেই আমি মনে করি। কারণ, এটা তাদের মৌলিক অধিকার।
প্রবাসী শ্রমিকদের ছাড়া আমাদের চলবে না। আবার যেসব প্রবাসী শ্রমিক অদক্ষ, আমাদের উচিৎ তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া। যেসব বিদেশী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও কলেজ-এডুকেটেড পেশাজীবী দীর্ঘদিন ধরে সউদি আরবে বসবাস করছেন, আমাদের উচিৎ তাদেরও নাগরিকত্ব দেয়া।
প্রবাসী শ্রমিকদের নিজ দেশে অর্থ পাঠানোর দিক থেকে সউদি আরবের স্থান দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দু'দেশের মধ্যে তফাৎ এটুকুই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীরা সেদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছে এবং এ কারণে তারা যত অর্থ দেশে পাঠায় তার চাইতে বেশি উপার্জন করে। অপরদিকে নন-সউদিদেরকে এদেশে সর্বক্ষণ বিদেশি শ্রমিক হিসেবেই গণ্য করা হয়। এসব বিদেশি শ্রমিক যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠায়, সে বাবদে আমরা প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের অর্থ হারাচ্ছি।
আল রিয়াদ থেকে অনুবাদ : হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী
বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]