শিরোনাম
পিপলস রিপাবলিক রক্ষা করতেই হবে
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৫৬
পিপলস রিপাবলিক রক্ষা করতেই হবে
বাপ্পাদিত্য বসু
প্রিন্ট অ-অ+

অস্বাভাবিক গুমোট এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দেশে। সবার একই প্রশ্ন - কি হতে যাচ্ছে?


সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায়, রায়ের ‘অবাঞ্ছিত’ পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধান বিচারপতি ও সরকারি দলের লাগাতার বাহাস এবং এ পরিস্থিতিতে বিএনপি’র অপরাজনীতি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক ও আইনী অঙ্গন রীতিমতো সরব।


বিচার বিভাগ নিয়ে এতো বড় বিতর্ক স্মরণকালে আর সৃষ্টি হয়নি। অতীতে কখনো বিচার বিভাগ এভাবে জাতীয় সংসদের ওপর এতো বড় খবরদারি করেনি। বিচার বিভাগ যেসব মন্তব্য ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে জুড়ে দিয়েছে, সে ধরনের বড় কোনো ঘটনাও এর আগে দেশে খুব একটা ঘটেনি। এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ স্বয়ং সার্বভৌম আইনসভার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে নিজেকেই। ফলে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ বিষয়ে এখন এমনকি সাধারণ মানুষও খোলাখুলিই তাদের মত দিচ্ছেন - চায়ের দোকান থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। সব মিলে বিষয়টি এক ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এই বিতর্কের পরিণতিতে আগামীতে পরিস্থিতি আরো ঘোলা হবে কিনা, বিশেষ করে প্রধান বিচারপতির বাকি পাঁচ মাস মেয়াদে তার ভূমিকা আরো কতোখানি ‘সর্বনাশা’ হতে পারে - এসব নিয়ে গুঞ্জন ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।


১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে গণপরিষদে দেশের সংবিধান প্রণীত হয়। সংবিধানে গণতন্ত্র, জনগণের ক্ষমতায়ন ও জাতীয় সংসদের ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়। এসব কারণে তাবৎ দুনিয়ার গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান বিশেষ মর্যাদা পায়। ওই সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অসদাচারণ ও শপথভঙ্গের মতো ঘটনায় তাদের অপসারণ ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে অর্পণ করা হয়। পাকিস্তানি জেনারেলরা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ন্যস্ত করেছিলো।


১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দেশের আইনী ব্যবস্থা থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক বিধিবিধানের ওপর নানা ধরনের খড়গ চাপিয়ে আবারো পাকিস্তানিকরণ শুরু হয়। গণতন্ত্র ও জনগণের ক্ষমতায়নের সমস্ত বিধিবিধানকে হত্যা করে অগণতান্ত্রিক-অনির্বাচিত-অসাংবিধানিক বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতায়নকে জোর দেওয়া হয়। সে সময় ক্ষমতা দখলকারি জেনারেল জিয়াউর রহমান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বাতিল করে পাকিস্তানি কায়দায় আবার তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতেই ন্যস্ত করেন।


ক্ষমতা দখলকারি আরেক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও একই ধারা অব্যাহত রাখেন। বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদে আবারো ধীরে ধীরে বাহাত্তরের সংবিধানের দিকে ফিরে যাবার পথযাত্রা শুরু হয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্যদিয়ে বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি (গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ) পুনর্বহাল করা হয়। যদিও ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ও ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অধিকার’ বাতিল করার পথে এখনো হাঁটা শুরু করতে পারেনি সরকার। আর ষোড়শ সংশোধনীর মধ্যদিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিল করে বিচারপতিদের অসদাচরণ ও শপথভঙ্গের ঘটনায় তাদের অপসারণ করার ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে পুনর্ন্যস্ত করা হয়।


কিন্তু এটা মানতে পারেনি অগণতান্ত্রিক-অসাংবিধানিক ক্ষমতায়নে বিশ্বাসীরা। তারা এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করে। সেই মামলার ফলস্বরূপ হাইকোর্ট ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় ও কিছু পর্যবেক্ষণ দেন। সরকারপক্ষ তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল আবেদন করে। কিন্তু হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগও।


গেলো জুলাই মাসে আপিল বিভাগ এ রায় দেন। এ নিয়ে সে সময় চলমান সংসদ অধিবেশনে খুব স্বাভাবিকভাবেই সোচ্চার হন সংসদ সদস্যরা। ১ আগস্ট ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। রায়ের সাথে জুড়ে দেয়া হয় বিশাল পর্যবেক্ষণের ফিরিস্তি। প্রায় আট শ’ পৃষ্ঠার ওই রায় ও তার পর্যবেক্ষণে জাতীয় সংসদের সমালোচনা করে সার্বভৌম ও জনগণের নির্বাচিত ওই প্রতিষ্ঠানকে ‘অসম্মান’ করা হয়। সংসদকে ‘অকার্যকর’ ও ‘অপরিপক্ক’ আখ্যায়িতও করা হয়। এছাড়া স্বাধীনতাযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে একক নেতৃত্বকেও অস্বীকার করা হয় পর্যবেক্ষণের এক জায়গায়।


বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য এদেশের মানুষ দীর্ঘদিন লড়াই করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি এ নিয়ে সোচ্চার বরাবরই। মাসদার হোসেন মামলার সূত্র ধরে আদালতের একটি রায় অনুসারে বর্তমান সরকারই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু স্বাধীনতা বলতে তো এই নয় যে, বিচার বিভাগের কোনো পর্যায়ে কোনো ধরনের জবাবদিহিতা থাকবে না। দেশের মন্ত্রিসভা তথা সরকারকেও জাতীয় সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। জাতীয় সংসদ হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার সার্বভৌম ক্ষমতা আছে এবং সংসদ অন্য কারো অধীনস্ত নয়। সংসদের সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। অর্থাৎ জাতীয় সংসদের সদস্যরা সরাসরি জনগণের দ্বারা বিচার্য। আর প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় সংসদ সর্বোচ্চ সার্বভৌম ক্ষমতা উপভোগ করে। দেশের অন্য সকল প্রতিষ্ঠানকেই সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। এমনকি দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী প্রধানমন্ত্রীও জাতীয় সংসদের কাছেই জবাবদিহি করেন। সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং রাষ্ট্রপতিই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন সরকারের সুপারিশে। কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি স্বাধীন। এছাড়া অন্য সব নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের সুপারিশ অনুসরণ করেন রাষ্ট্রপতি। এটাই সংবিধানের বিধান।


কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের এই সার্বভৌম ক্ষমতার উপর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের আস্থা রাখতে না পারা এবং কথায় কথায় নির্বাচিত সংসদের উপর ‘অযাচিত খবরদারি’ করা সাম্প্রতিক সময়ে বিচার বিভাগের, বিশেষ করে প্রধান বিচারপতির প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার রাশ টেনে ধরে, সুপ্রিম কোর্ট সেখানে নিজেদের ‘সুপ্রিমেসি’ প্রতিষ্ঠায় যারপরনাই তৎপর। এ সংক্রান্ত বিচারকাজে এজলাসে বসে প্রধান বিচারপতি প্রায়ই সরাসরি এটর্নি জেনারেলের সাথে বাহাসে জড়িয়ে পড়ছেন। আর বর্তমান প্রধান বিচারপতি অতীতের সকল বিধিবিধান ও ঐতিহ্য ভঙ্গ করে ঘন ঘন জনসমক্ষে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। এ বিষয়টিকেও ভালোভাবে নেয়ার কোনো কারণ নেই।


বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা বলতে কিন্তু এ বোঝায় না যে, বিচারকাজের ওপর জাতীয় সংসদ খবরদারি করবে। বরং এটা বোঝায় যে বিচারপতিরা যদি কখনো কোনো অসদাচরণের মধ্যদিয়ে তাদের শপথভঙ্গ করেন তখন তাদের অপসারণের ক্ষমতাটুকু কেবল সংসদের হাতে থাকবে। সে কাজেও বহু সাংবিধানিক পথ পাড়ি দেবার বিধান ষোড়শ সংশোধনীতে ছিলো। চাইলেই কিন্তু সংসদ বা ক্ষমতাসীন দল কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণ করতে পারবে না, তার জন্য সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান ও পথ অনুসরণ করার ব্যবস্থা ষোড়শ সংশোধনীতে ছিলো। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ সুরক্ষার সকল বিধিবিধান ওই সংশোধনীতে নিশ্চিত করা হয়েছিলো। ষোড়শ সংশোধনীতে কোনোভাবেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এক চুলও খর্ব করা হয়নি, বরং বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রেখেই তার জবাবদিহিতার বিধান করা হয়েছিলো। এটা বাহাত্তরের সংবিধানেও ছিলো। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই বিধান বাতিল করে মূলত জেনারেল জিয়া-এরশাদের প্রবর্তিত বিধান তথা পাকিস্তানি জেনারেলদের বিধানেই ফিরে যাওয়া হয়েছে। অথচ এই সুপ্রিম কোর্টই সামরিক শাসনামলে প্রণীত সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে জিয়া, সাত্তার, সায়েম, এরশাদের সামরিক শাসনকেই অবৈধ ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতেও যাতে কোনোভাবেই কোনো অনির্বাচিত শাসক ক্ষমতা দখল করতে না পারে এবং জনগণের ওপর কোনো অনির্বাচিত শক্তি খবরদারি করতে না পারে তার বিধান দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। সেমতে জিয়ার প্রণীত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অবৈধ করেছিলেন খোদ সুপ্রিম কোর্টই। কিন্তু হঠাৎ করে এমন কী ঘটলো যে সেই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের উপরই তাদের আস্থা রাখার প্রয়োজন হয়ে পড়লো?


প্রশ্ন উঠেছে, জনগণের নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে এভাবে হেয় করে কোন উদ্দেশ্য সাধন করার পথ নির্মাণ করা হলো?


দেশের গণতন্ত্র ও সংসদীয় ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ করে অনির্বাচিত শক্তির শাসন প্রণয়নে একটি গোষ্ঠী সদাতৎপর। তাদের অন্যতম পুরোধা ড. কামাল হোসেন। সেই কামাল হোসেনসহ ওই মতের একাধিক ব্যক্তিকে আলোচ্য মামলার বিচারের অ্যামিকাস কিউরি বা আদালত বন্ধু হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। তারা খুব স্বাভাবিকভাবেই সংসদের সার্বভৌমত্বের বদলে জেনারেলদের প্রণীত বিধানের উপর আস্থা রেখে কোর্টে বক্তব্য দিয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন কামাল হোসেন ও আমিরুল ইসলাম কিন্তু বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। সেই তারাই কোন উদ্দেশ্যে বাহাত্তরের সংবিধানের বিধানকে অস্বীকার করলেন - সেটা কিন্তু পরিষ্কার।


বর্তমান নির্বাচিত সরকার ও সংসদকে উচ্ছেদ করে অসাংবিধানিক ও অনির্বাচিত সরকার প্রবর্তনে কামাল হোসেন, আমিরুল ইসলাম, শাহদীন মালিকদের তৎপরতা নতুন নয়। এর আগে ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতির ঘাড়ে চেপে বসে থাকা অনির্বাচিত অসাংবিধানিক শাসনের পেছনের অন্যতম কুশীলব হিসেবে কিন্তু এদের নামই আলোচিত ছিলো। এদের সাথে যুক্ত আছেন আবার মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো ঘৃণ্য চক্রান্তজীবী, যিনি স্বচ্ছ রাজনীতির নামে উপরে উপরে সুনাম কুড়ান আর তলে তলে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলে পরিস্থিতি ঘোলা করে সেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেন। তার ও বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার এ সংক্রান্ত টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়ে যাবার পর মান্না ওই মামলায় জেলও খেটেছেন। এমনই ঘোলা পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই ড. কামাল হোসেন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর আকষ্মিক ‘জাতীয় ঐক্য’র ডাক আরো খনিকটা অস্বস্তিই তৈরি করেছে বটে।


এই ঘরপোড়ার মধ্যে খানিকটা আলুপোড়া খেতে লবণ হাতে করে এগিয়ে এসেছে আবার বিএনপি। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে নিজেদের রাজনৈতিক বিজয় বলে প্রচার করে খানিকটা আত্মসুখ অনুভব করছে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রবিরোধী দক্ষিণপন্থী রাজনীতির প্রধান প্লাটফরম ও ক্যান্টনমেন্টের জেনারেলের হাতে প্রতিষ্ঠিত এই দলটি। তাদের নর্তন কুর্দনও কোনো শুভ লক্ষণ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। যদিও আলোচ্য রায়ের পর্যবেক্ষণে তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনকালকে ‘ব্যানানা রিপাবলিক’ বলে তিরষ্কার করা হয়েছে, তা অবশ্য তারা আপাতত গায়ে মাখছে না। এই রায়ের প্রেক্ষিতে সরকার ও গণতন্ত্র সমর্থক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষের সমালোচনাকে আদালত অবমাননা বলছে বিএনপি। কিন্তু অতীতে এমন নজির আছে যে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে যুদ্ধাপরাধীদের সাজা হলে বিএনপি’র জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলাম হরতাল ডেকেছে এবং সে হরতালে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে প্রকারান্তরে। ফলে তাদের এই হঠাৎ আদালতপ্রীতি যে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য বহন করে তা তো নিশ্চয়ই পরিষ্কার। জনসমর্থন পুরোপুরি হারিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে বীভৎস আগুনসন্ত্রাসের জঘন্য নজির স্থাপন করেছিলো তারা। তাতেও হালে পানি পায়নি, বরং গণপ্রতিরোধে ঘরে উঠে যেতে বাধ্য হয়েছিলো। এখন ক্ষমতায় ফেরার আর কোনো রাস্তা না পেয়ে তারা ঘরপোড়া আর আলুপোড়া নিয়েই ব্যস্ত আছে।


প্রধান বিচারপতি জাতীয় সংসদের কাছে জবাবদিহিতার ব্যাপারে অনীহ হবেন তার কিছু কারণও আছে। সম্প্রতি তিনি এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির (বিচারপতি জয়নুল আবেদীন) দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত থেকে বিরত থাকতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এটাকে গুরুতর অসদাচরণ ও শপথভঙ্গ বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া তিনি ভয়ঙ্কর যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর আপিল মামলা চলাকালে তার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন - এটা প্রমাণিত। এটাও গুরুতর অসদাচারণ ও শপথভঙ্গের নজির। যেভাবে তিনি জনসমক্ষে সরকার ও সংসদের সমালোচনা করে একের পর এক তীর্যক বক্তব্য দিয়েছেন, তাও নজিরবিহীন অসদাচরণ বলে মনে করা হচ্ছে।


ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণ অংশে তার সাথে অন্য বিচারপতিদের অধিকাংশই কিন্তু পুরোপুরি একমত হননি, বরং তারা পৃথক পর্যবেক্ষণ লিখেছেন। ফলে বিচার বিভাগকে সংসদ ও সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবার দায় মূলত প্রধান বিচারপতির একার। ষোড়শ সংশোধনীর রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে কড়া আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই তিনি অন্য একটি মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করতে গিয়ে এজলাসে বসেই পাকিস্তানের বিচার বিভাগ কর্তৃক সেদেশের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে বরখাস্তের প্রসঙ্গ টেনে এনে বিচার বিভাগের ক্ষমতা সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিয়ে এটর্নি জেনারেল তথা সরকারকে শাসিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে আনা তার অবচেতন ভাবনা যে নয়, তা পরিষ্কার। বরং তিনি সচেতনভাবেই এ প্রসঙ্গ টেনেছেন। এটা আরো বড় ভাবনার বিষয়। কারণ প্রধান বিচারপতির মেয়াদ আছে আরো পাঁচ মাস - আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে আরো কিছু কি ঘটতে চলেছে? তবে সংবিধান ও সংসদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করে পিপলস রিপাবলিককে কোনোভাবেই জাজেজ রিপাবলিক বা আর্মি রিপাবলিক বা ইসলামিক রিপাবলিক বানানোর কোনো চেষ্টা সহজে সফল করতে দেবার কোনো সুযোগ নেই। সজাগ থাকাটাই এখন কর্তব্য।


লেখক : প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী। নির্বাহী সম্পাদক, সাপ্তাহিক নতুন কথা


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com