শিরোনাম
বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বিজয় পূর্ণতা পায়
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ১০:০৩
বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বিজয় পূর্ণতা পায়
মাহবুবউল আলম হানিফ
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ১০ জানুয়ারি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের এই দিনে তিনি পাকিস্তানের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় পূর্ণতা পায়।


স্বয়ং বঙ্গবন্ধু তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ১০ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় পৌঁছানোর পর আনন্দে উদ্বেল লাখ লাখ মানুষ বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানায়। বিকেল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় দশ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন।


১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ’ ঘোষণার পরপরই পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তাঁকে বন্দী করে রাখা হয় পাকিস্তানের কারাগারে।


বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আন্তর্জাতিক চাপে শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।


জাতির পিতাকে মুক্তি দিয়ে পাকিস্তান থেকে লন্ডনের একটি বিমানে উঠিয়ে দেন । লন্ডনে পৌঁছে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী এ্যাওয়ার্ড হিথ এর সংগে বৈঠক করেন । লন্ডন হতে একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু দিল্লি পৌছেন ১০ই জানুয়ারি সকালে ।


দিল্লি বিমানবন্দরে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি , প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্য গন এবং তিন বাহিনীর প্রধান গন বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেন ।


১০ই জানুয়ারি দুপুরে বিশেষ একটি বিমানে বঙ্গবন্ধু দিল্লি থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্য রওয়ানা করেন এবং ১:৪০ টার সময় ঢাকায় ( তেজগাঁও বিমানবন্দর ) পৌঁছান। সেদিন সারাদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ ছুটে আসেন তাদের নেতাকে এক নজর দেখার জন্য। স্বাধীন দেশে ফিরে বাঙালির ভালবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। লক্ষ লক্ষ মানুষ বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হন ।


সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স) প্রায় দশ লক্ষ মানুষের সমাবেশে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেছিলেন , ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি ফিরে যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন’।


তিনি বলেছিলেন, বাঙালি আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে সেই বাঙালির জন্য আমি রক্ত দিতেও প্রস্তুত। এর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শত্রু ও দেশি-বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঘাতকের হাতে সপরিবারে জীবন দেন তিনি।


যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে জাতির জনক পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেন, দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় তারই সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আজ স্বাধীন বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে অর্থনৈতিক সর্ব সূচকে এগিয়ে। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান এই পাঁচটি সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার আজ মানুষের দোরগোড়ায়।


শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। দ্রুত উন্নয়নের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে বাংলাদেশ। ঐক্যবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বেই একটি সুজলা সুফলা অসাম্প্রদায়িক চেতনার আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশ বিনির্মাণই আজকের দিনের প্রত্যাশা।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।


লেখক: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com