শিরোনাম
`ছয় দফা’ বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের ভিত্তিস্তম্ভ ও মুক্তির সনদ
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২১, ১১:৫০
`ছয় দফা’ বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের ভিত্তিস্তম্ভ ও মুক্তির সনদ
মাহবুবউল আলম হানিফ
প্রিন্ট অ-অ+

ছয় দফা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আওয়ামী লীগ এর পক্ষ থেকে ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত বিরোধী দল সমূহের কনভেনশনে বাঙালির মুক্তি সনদ খ্যাত ছয় দফা উত্থাপন করে তার বিষয় অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য ছিল- পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেল বা যৌথরাষ্ট্র এবং ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই ফেডারেশন বা যৌথরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।


ছয় দফা কোন রাতারাতি কর্মসূচি ছিল না। এর প্রস্তুতি ছিল দীর্ঘদিনের। ‘৫২ এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, '৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ‘৬৬ এর ছয় দফার ভিত তৈরি হয়।


ছয় দফার দাবিগুলো ছিল এরকম:


১. পাকিস্তান একটি সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় ফেডারেশন হিসেবে গঠিত হবে।


২. ফেডারেল সরকারের এখতিয়ারে থাকবে কেবল প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র। অন্যান্য বিষয় প্রদেশগুলোর হাতে থাকবে।


৩. প্রতিটি প্রদেশের জন্য পৃথক তবে অবাধে রূপান্তরযোগ্য মুদ্রা থাকবে। যদি একক মুদ্রা হয় তাহলে মুদ্রা হস্তান্তর রোধ করার উপায় থাকতে হবে।


৪. রাজস্ব থাকবে প্রদেশের হাতে।


৫. প্রতিটি প্রদেশের মুদ্রা আয়ের জন্য পৃথক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।


৬. আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিটি প্রদেশকে মিলিশিয়া রাখার অনুমতি দিতে হবে।


১৯৬৬ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চের আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সর্ব সম্মতিক্রমে এই ৬ দফা পাশ করা হয়। এর পর সারা দেশে ৬ দফার ব্যপক প্রচার শুরু হয়। এরপর শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা। বঙ্গবন্ধুর বিরূদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং গ্রেফতারের প্রতিবাদে মে মাসে আওয়ামী লীগের এক জরুরী সভায় ৭ জুন দেশব্যাপী হরতাল আহবান করা হয়। সেই হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নেতা মনু মিয়াসহ ১১ জন দলীয় নেতা কর্মী নিহত হয়েছিল। সেই দিন হতে ৭ই জুন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।


৫ই ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন যে, “এখন থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে ‘বাংলাদেশ’ নামে অভিহিত করা হবে: একটা সময় ছিল যখন এই মাটি আর মানচিত্র থেকে ‘বাংলা’ শব্দটি মুছে ফেলার সব ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিলো। ‘বাংলা’ শব্দটির অস্তিত্ব শুধু বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত না। আমি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আজ ঘোষণা করছি যে, এখন থেকে এই দেশকে ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ বদলে ‘বাংলাদেশ’ ডাকা হবে।”


এই ঘোষণায় পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন। প্রয়োজনে তিনি অস্ত্রের ভাষায় ছয় দফার জবাব দেয়ার হুমকি দেন। ১৯৬৬ সালে কনভেনশনে মুসলিম লীগের সমাপ্তি অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বলেন দেশের অখণ্ডতা-বিরোধী কোন প্রচেষ্টা সরকার সহ্য করবে না। এরপর শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে কারাগারে আটক রাখা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা।


ছাত্র যুবক কৃষক শ্রমিক জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।


‘৬৯ এর গণআন্দোলনের মধ্য দিয়েই গোটা জাতির মধ্যেই স্বাধীনতার যে আকাঙ্খা তৈরি হয়েছিলো তারই ফলস্বরূপ ‘৭০ এর নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলো। ‘৭০ এর নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়ার পরই ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক সোরওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী বর্বরোচিত গণহত্যা শুরু করলে ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেন।


বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। বাঙালি একটি জাতি হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পায়, পায় জাতিরাষ্ট্র-স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুলত ‘৬৬ সালের বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ছয় দফাই স্বাধিকার আন্দোলন হতে স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিনত হয়েছিলো।


লেখক: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।


বিবার্তা/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com