শিরোনাম
করোনার মহাবিপর্যয় রোধে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?
প্রকাশ : ২১ মে ২০২১, ১৮:৪৯
করোনার মহাবিপর্যয় রোধে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?
ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল
প্রিন্ট অ-অ+

সমগ্র বিশ্বই করোনা জ্বরে আক্রান্ত। কোনো কোনো দেশ এই অনাকাক্সিক্ষত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে ধকল কাটিয়ে উঠবার চেষ্টা করছে, সফলও হয়েছে। কিন্তু মর্মান্তিক ও বিস্ময়কর সময় না গড়াতে গড়াতেই, চোখের অশ্রু শুকাতে না শুকাতেই, চারিদিকে শবদাহের গন্ধ শেষ হতে না হতেই ফের শুরু হয়ে যায় করোনার মরণ কামড়। এরকম এক ভয়ানক ভাইরাসকে সঙ্গে করে আমরা দিনযাপন করছি। চোখের সম্মুখে অগুণতি মানুষের মৃত্যু দেখে মানবজাতি নিত্য ভাসছে দুঃখের অথই সাগরে। করোনা নানাভাবে বিপর্যস্ত করছে; শিক্ষা, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি সর্বোপরি মানবমনের ওপরে ফেলছে নিদারুণ প্রভাব। এর থেকে পরিত্রাণের পথ যে খুঁজছে না বিশ্ব তা নয় কিন্তু কোনোক্রমেই এই নিত্য পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া প্রতিদিন কুৎসিত রূপ বদলে ফেলে আরো অধিকতর ভয়ঙ্কররূপ ধারণ করা ভাইরাসটিকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।


সমগ্র বিশ্বে এখন কোথাও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অথবা তৃতীয় ঢেউ চলছে। বাংলাদেশে চলছে দ্বিতীয় ঢেউ। পৃথিবীর বহুদেশ দ্বিতীয় ঢেউ পাড়ি দিয়ে অসংখ্য জীবনকে সৎকার করে তৃতীয় ঢেউয়ে ক্রমাগত ধুকে যাচ্ছে, পরিত্রাণের পথ খুঁজছে। আমেরিকার মতো মহাপরাক্রমশালী দেশ পরাস্ত হয়ে গেছে করোনার কাছে; এটা এখন সুবিদিত। চিকিৎসাবিজ্ঞানে বহু উন্নত যুক্তরাজ্যও করোনার কাছে মাথা নত করেছে। আশার কথা যদিও সে দেশ অনেকটা করোনাকে বাগে আনতে সক্ষম হয়েছে। তারা ঘোষণা দিয়েছে আগামী আগস্টে দেশটিকে করোনামুক্ত করবে। বিষয় হলো সেই স্বপ্ন আমাদেরকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়, আশাবাদী করে। কিন্তু এটাওতো ঠিক সেইসব আশাগুলো সহসাই ধুলিস্মাৎ হয়ে যায়, যখন আমেরিকা ও ভারতে আমরা লাশের মিছিল দেখি।


আমেরিকার ধস না যেতে যেতে বহির্বিশ্বে করোনার থাবা নির্মূল না হতে সমগ্র ভারত জুড়ে চলছে মানুষ হারাবার শোকের নিত্য মাতম। লাশের সারি দেখলে মনে হয় এটা কোনো কল্পিত ছায়াছবির দৃশ্য, মনে হয় হয় কোনো হরর ছায়াছবি। শ্মশানে সারি সারি মৃতদেহ পোড়াবার অপেক্ষায়, ক্লান্ত, বিষণœ শবদাহকারীরা, বাতাসে লাশের গন্ধ, বিরামহীনহীন পুড়ে যাচ্ছে মানুষের সেইসব মূল্যবান দেহ। গোরস্থানে আর ফাঁকা জায়গা নেই যেখানে দাফন করা যাবে। কোথাও কোথাও তাই গণকবর দিতে হচ্ছে। কত মানুষ, কত পরিচিতজন, বিখ্যাতজনেরা চোখের ওপর দিয়েই চলে যাচ্ছেন খুব নীরবে, অগোচরে, কোনোরকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বলা যায় খুব গোপনে সেইসব চিরচেনা মানুষগুলোকে কবরে শায়িত করা হচ্ছে, দাহ করা হচ্ছে শ্মশানে। করোনা এমন এক বন্যহিং¯্র ভাইরাস যা মানুষকে মানুষের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। পৃথিবীতে এর আগে বহু মারণ ভাইরাসের জন্ম হলেও মানুষ থেকে মানুষকে পৃথক করে দেওয়ার এমন অদৃশ্য করুণাহীন ভাইরাস খুব কমই দেখা গেছে। পৃথিবীর এ এক বীভৎস রূপ।



এইসব দৃশ্য, এইসব করুণ দিন আর মর্মান্তিক মানব বিসর্জন দেবার দুঃখ, বিমর্ষ, হতাশাযুক্ত দিন দেখে কেঁপে উঠেছে মানুষের গোটা বিশ্বের মানবমন। কিন্তু অবাক এবং অপার বিস্ময় কেঁপে ওঠেনি, জাগেনি বাংলাদেশের সাহসী, দৃঢ়চেতা, হার না মানা মানবসমাজের এক বিশাল বপু-বৃহৎ হৃদয়। এরা এখনো করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে বলা যায় অজ্ঞ, এদের আচরণ দেখলে মনে হয় করোনা এক কল্পিত আখ্যান, এরা মনে মগজে, চিন্তা-চেতনায় বেশ সাহসী ও অগ্রগামী; করোনা এই জাতিকে কিছু করতে পারবে বলে তারা মনে করে না, তারা ভাবে নিয়মিত পান খেলে করোনা চলে যাবে, করোনা হলো বড়লোকদের রোগ, গরীবদের এসব রোগ হয় না, ঠা-া এসিতে থাকলে এসব রোগ হয়! এরকম নানা ধরনের মিথ সৃষ্টি করেছে এই রসিক জাতি। তার ওপর অন্ধ, মূঢ়তা ও ধর্মান্ধতাতো রয়েছেই। পার্শ্ববতী রাষ্ট্র ভারতের করোনায় অকাতরে প্রাণ বিসর্জনের ভিতর দিয়েও এদের কাপেনি অন্তর, উদয় হয়নি চেতনাশক্তি, জাগ্রত হয়নি বিবেক আর শানিত হয় না মরচেপরা মন। একি বিস্ময়, একি অপার বিস্ময় এহেন পরিস্থিতিতে জীবন বিলিয়ে দিয়ে হলেও তারা বাড়িতে যেকোনো উৎসবে মিলিত হতে চায়, গৃহবধূর জন্যে তাদের অন্তর পোড়ে।


কিন্তু পোড়া মন একবারও বোঝে না, এইসব নিত্য উৎসব যাত্রা, মিলনমধুরক্ষণ পরিণত হতে পারে চিরবেদনায়। এসব কে কাকে বোঝাবে! সরকারকেও তারা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়, তাদের একস্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাঁধা প্রদান করলে আন্দোলনে লিপ্ত হয়। এই জাতি চিরকালই বেপরোয়া, নিয়ম মানতে নারাজ। লকডাউন দিলে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকান, শপিংমল বন্ধ হলে, তারা বলে ঘরে খাবার নেই, না খেয়ে মরে যাবো! যখনই এসব আবার খুলে দেওয়া হয় তখনই এসব জায়গায় সেইসব না খাওয়া মানুষের পদচারণায় তিলধারণের জায়গা থাকে না। দ্বিচারী স্বভাবের, আত্মকেন্দ্রিক, আরামপ্রিয়, সুখপায়ী এসব মানুষকে নিয়েই হয়েছে বেশ যন্ত্রণা ও করোনা রোধে প্রবল অন্তরায়। সরকারের পক্ষ থেকে নি¤œবর্গ, ব্রাত্য, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের জন্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবেও তাদের দেখভালের কথা বলা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে দুঃস্থ মানুষের কাছে বিকাশ করে টাকা পাঠানো হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সাপেক্ষে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।


তবুও তাদের ভরেনা অন্তর কাজ করে না মস্তিষ্ক। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকবে। করোনা কনসেপ্ট তারা মানতে রাজি নয়। যেকোনো মূল্যে তারা তাদের দাবী আদায়ে, তাদের স্বস্ব কর্মক্ষেত্রগুলো, প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে রাখার পক্ষে। খুলে রেখেও যে স্বাস্থ্যবিধি অনেকটা মানা যায়, তাও তারা পালন করবেন না। এরকম এক বিভিষীকাময় পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ নিমজ্জমান। কিন্তু তবুওতো আমাদের থামতে হবে, থামাতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। জনসচেতনতা খুব গুরুত্বপূর্ণ এখন করোনা রোধকালে। এটা ঠিক যে পৃথিবী যখন প্রথম করোনার ভয়াবহ করালগ্রাসে ভেসে যাচ্ছিল তখনো বাংলাদেশ ছিল স্থির, শান্ত ও অনেকটাই বিপদমুক্ত। সরকার ও প্রশাসন যন্ত্রের যথেষ্ঠ সতর্কতা আন্তরিকতায় সচেষ্ট থাকার প্রতিফলনও দেখা দিয়েছিল।


আমরা বাংলাদেশ করোনাকে দমিয়ে দিয়েছিলাম, বেঁধে রেখে ছিলাম তাকে নির্দিষ্ট সীমায়; বিশ্ব প্রশংসায় উন্মুখ হয়েছিল। করোনার প্রথম ঢেউটা আমরা ভালোভাবেই শেষ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়লে সেই ফলাফল বদলে যেতে থাকে। মৃত্যু প্রতিদিন বাড়ছে। বারো হাজার ছাড়িয়ে তেরতে পা রাখতে যাচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী বুঝতে পারছে না যে, এখন সময়টা কার্যত বেঁচে থাকার সংগ্রাম। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, বদল করা হয়, রিপিট করা হয়। একটা হযবরল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। লকডাউন দেয়া হয়। দূরপাল্লার গাড়িসমূহ বন্ধ থাকে। কিন্তু ছোট যানসমূহ চলে অবাধে। অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে পর্যন্ত যাত্রী ভরাট করে এপারে ওপারে, এঘাটে ওঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়।


প্রশাসনযন্ত্রের বহু চেষ্টা ও দুর্মর আন্তরিকতার ভিতর দিয়ে মানব সম্প্রদায়কে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বেশ কঠোর ভূমিকা পালন করতে দেখা গেলেও জনগণ ছিল এ বিষয়ে রহস্যজনক আচরণে বিদ্ধ ও হাস্যরসে বন্দি! অপার বিস্ময়ে আমরা এসব কর্মকা- দেখেছি। একটা গাছাড়া ভাব ছিল সর্বত্র। হাটবাজার খোলো, দোকানগুলো খুলে দাও এসব নিয়ে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ। এসব করতে করতে রোজার ঈদ চলে এলো আমাদের ঘরে। আমরা রোজার ঈদ পার হয়ে এলাম। এর আগে সরকারিভাবে জানানো হয়েছিল, অফিসসমূহ বন্ধ হলেও যে যার জায়গায় অবস্থান করবে। কে শোনে কার কথা! ঢাকা থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে আপামর জনগণ ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাবার জন্যে পাগল হয়ে ছুটে গেলো। তারা বুঝেও বোঝেনি।


লকডাউনের ভিতরেও রাস্তায় রাস্তায়, অলিগলিতে, মোড়ে মোড়ে, বাসস্টান্ডে, ট্রেনে, ফেরিতে লোকে লোকারণ্য অবস্থা। পা ফেলবার জায়গা রইল না। তাছাড়া ঈদের ছুটিতে রাজধানীর বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন জায়গাগুলোতেও প্রচুর ভীড় জমেছে অতি উৎসাহী দর্শনার্থী জনগণের। খুবই স্পর্শকাতর বিষয়, ঈদের ছুটিতে ঘুরমুখো মানুষ, কিছু বলার ভাষা নেই। জনগণকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তাদের নানা যুক্তি উপস্থাপন। ভয়াবহ এসব দিনের ভিতরেও তারা উৎসবে মেতে উঠবে। শেষপর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির লোক নিয়োগ করতে হয় তাদের সুনিশ্চিত বাড়ি ফেরার জন্যে। কারণ এসবের মধ্যে একশ্রেণির মানুষের নোংরা রাজনীতি থেমে নেই। সুযোগ বুঝে তারা কোপ মারতে পারে। আমাদের দেশে এমন দুর্দিনের ভিতরে কুৎসিত ক্ষমতালাভের বাসনা থেমে থাকে না। বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। তার ওপর চলছে ঈদের উৎসব। সমগ্র দেশব্যাপী লোকজন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করেছে। আমরা জানি যে, বাংলাদেশে করোনার প্রধান জোন হলো রাজধানী ঢাকা।


আর সেখান থেকেই বহুসংখ্যক জনগণ বাংলাদেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। ধারণা করা হয়ে থাকে, গবেষণালব্ধ নয়, ঢাকার তুলনায় গ্রামাঞ্চলে তুলনামূলক করোনার প্রকোপটা কম। সেটা তো ভালো খবর। কিন্তু ঢাকার করোনাতো এবার ছড়াবে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে! সরকারের সমস্ত রকম করোনারোধী মনোভাব ও আত্যান্তিক প্রচেষ্টা থাকলেও বড় বিপর্যয় এসে দাঁড়ালে দরজায় শেষপর্যন্ত এর দায়তো এক সময় সরকারকেই নিতে হবে। এদেশের জনগণের ভাবমূর্তি সম্পর্কে ব্যাপক বিস্তর ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা মানুষের রয়েছে। তারা ভালোটা নেবে খারাপটা আর কষ্টটার দায় চাপাবে সরকারের ওপর। ক্ষতিতো হয় আসলে মানুষের, হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিটির বা যে পরিবারটি ক্ষতিগ্রস্থ হবে, হয়েছে তাদের এমনকি রাষ্ট্রেরও। কারণ রাষ্ট্রের প্রধান সম্পদ হলো মানব সম্পদ। ভাবনার আরো নানা বিষয় আছে, ভারতে করোনার যে ভয়াবহ মরণযজ্ঞ চলছে, সেই মরণযজ্ঞের করোনার চেহারাটার ধরন আবার আলাদা, যাকে বলা হচ্ছে ‘ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট’।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই জাতীয় ভাইরাসের প্রকোপ নিয়ে ইতোমধ্যে গভীর উদ্বেগ ও সংশয় প্রকাশ করেছে। এটা নিয়ে বিশ্বব্যাপী বেশ তোড়জোড় চলছে। কিন্তু আমাদের এখানে একশ্রেণির মানবগোষ্ঠী এটা নিয়ে নানা মিথে জোকসে এবং ভাইরালে ব্যস্ত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই অনভিজ্ঞ, আত্মঘাতী শ্রেণিটির জীবনচিন্তা, বাস্তবতা ও জীবনাভিজ্ঞতা শূন্যের কোঠায়। এদের না আছে মাতৃপ্রেম, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা না আছে জীবনবেদ। কিন্তু চিন্তা আছে, ভয়াবহ সংশয় আছে রাষ্ট্রযন্ত্রের। ভারতীয় ভাইরাসের নতুন ধরন বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে ঢুকে গেলে তাকে সামলে উঠা সম্ভব হবে কীনা! আরো যে প্রবল উদ্বেগ রয়েছে, তাহলো ভারতীয় করোনা সংস্করণ ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ফেলেছে কিনা? ভারতে করোনার ব্যাপক দূরাচারের ভিতরেও বাংলাদেশের অগুণতি মানুষ সেখানে তাদের নানা কাজে গমনাগমন করেছে। অবশ্য চেকপোস্টগুলোতে সতর্ক নজরদারী বসানো হয়েছে। নিয়মিত আইসুলেশন ও কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাতে ফলাফল কতটুকু সেটা সময়ই বলবে।


কেননা ভাইরাস ছড়াতে সময় লাগে না। আমরা জানতে পেরেছি যে নতুন যে ভাইরাস আমাদের আশেপাশে ঘাতকের মতো ছড়িয়ে আছে তা একজন মানুষের এক হাঁচিতেই অন্তত চারশতজনের ওপরে আক্রান্ত করা সম্ভব! এগুলো কে ভাববে আর কে ভাবাবে? সে কারণে জনসচেতনতা খুবই জরুরি এখন। আর দরকার কঠোর সব পদক্ষেপ। পৃথিবীর বহু ধনী দেশ করোনার ছোবলে পড়ে তাদের অর্থনীতি, জীবন-জীবীকা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, চাপ সামলে উঠতে তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। ভারতের মতো দেশ তাদের করুণ দৃশ্য দেখছি প্রতিদিন, ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা, আর আমরা এখনো এতোটা স্বাবলম্বী নই যে, করোনার ভয়াবহ যে তা-ব চলছে আর তার প্রকোপ যদি দৌর্দ- প্রতাপে বাড়তে থাকে, তা আসলে সত্যিকারভাবে কতটা সামাল দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে। ভাবনার আরো যৌক্তিক কারণ আছে। রোজার ঈদ শেষ না হতে না হতে আবার এসে পড়বে কোরবানীর ঈদ। গবেষকগণ এরই মধ্যে মন্তব্য করেছেন আগামী জুন মাস থেকে বাংলাদেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ জাগার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং তা যৌক্তিক বলেও আমরা মনে করি।


রোজার ঈদ থেকে কোরবানীর ঈদ মাঝখানে সময়ের ব্যবধান দুমাস। অর্থাৎ ভয়াবহ সামাজিক মিশ্রণের সুযোগ তৈরি হবে। যারা গিয়েছিলেন গ্রামে তারা ফিরতে শুরু করেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষত রাজধানী ঢাকায়। তারপর কøান্তি না ঘুচতেই আবার এসে গেল কোরবানীর ঈদ। অতএব চলো চলো বাড়ি চলো। আর এরই মধ্যে যদি এসে যায় করোনার তৃতীয় ঢেউ ও ভারতীয় উন্নত সংস্করণ, তাহলেতো কথায় নেই, ষোলকলা পূর্ণ হয়ে যাবে। সরকার বাহাদুরেরা যে এমনি করে আমাদের মতো ভাবছেন না, চিন্তা করছেন না এবং এসব চিন্তা তাদের মাথায় নেই, এটা অবশ্য ভাবা যাবে না। প্রকৃতপক্ষে করোনা রোধে এখনই খুব যুতসই টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। লকডাউনের গ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে।


সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্তই একবার ঘোষণা দিয়ে দিলে সেখান থেকে আর ফিরে আসার সুযোগ নেই। জনগণকে বোঝাতে হবে ব্যক্তির চেয়ে একটি দেশের মূল্য অনেক। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রত্যেককে বাধ্য করতে হবে। গরীব, দুস্থ, অসহায় সম্প্রদায়কে প্রয়োজনে প্রশাসনযন্ত্র ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং উচ্চবর্গের মানুষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা, আর মাস্ক, সাবান, সোডা বিতরণের মাধ্যমে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। দোকানপাট, হাটবাজার, শপিংমল খোলা থাকলে সেখানে কঠোর নজরদারি থাকবে স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলার ক্ষেত্রে। এর ব্যতিক্রম হলে সঙ্গে সঙ্গে জরিমানার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গণ পরিবহণ ও দূরপাল্লার গাড়ি চললে সেখানে যাত্রী পরিবহণে স্বাস্থবিধি মেনে পরিমাণ নির্ধারণ করে দিতে হবে।


কিন্তু এসব করতে গেলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতিতো এখনকার তুলনায় আরো অনুকূলে থাকতে হবে। পরিস্থিতি যদি এর চেয়ে আরো খারাপের দিকে যায় সেক্ষেত্রে উপরোক্ত আলোচনার কোনোটাই আর যুক্তিতে টিকবে না। সবই বন্ধ হয়ে যাবে আপনাআপনি। এমনও হতে পারে তখন কারফিউয়ের বন্দোবস্ত চলে আসতে পারে। যদিও আমাদের তা প্রত্যাশিত নয়। আমাদের বুঝে আসে না, বোধে আসে না পৃথিবীর ভয়াবহ বিপর্যয়, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়ে যাবার পরেও বাংলাদেশের মানুষের সামান্য একটি মাস্ক পরিধানে ব্যাপক দ্বিধা ও নির্লজ্জ্ব মনোভাব এবং সামাজিক দুরত্ব মানতে ব্যাপক অনীহা, এ এক চরম অজ্ঞতার পরিচয়বাহী।


এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনযন্ত্রের তীব্র কঠিন কঠোর পদক্ষেপ জরুরি বলে অনুমিত হয়। পৃথিবীর পরিবেশ ফিরে আসুক, মানুষ বেঁচে থাকার শ্রেষ্ঠ স্থানটিতে পূর্ণ নিঃশ্বাস গ্রহণ করুক। কিন্তু মনে রাখার বিষয় মানুষের পৃথিবীটাকে মানুষকেই রক্ষা করতে হবে আর সেক্ষেত্রে বর্তমান যা করণীয় সেটাই করতে এবং নিয়মনীতি, সরকারিবিধি মানতে হবে। শুধু মেনে নেওয়াই নয় মনেও নিতে হবে। প্রিয় পৃথিবীর কল্যাণ হোক। মানুষের সচেতনতা, আন্তরিকতা, ভালোবাসা, উদারতা, সহায়তা, দেশপ্রেম ও নিয়মানুবর্তিতার ভিতর দিয়ে করোনামুক্ত হোক জননী জন্মভূমি মাতৃভূমি বাংলাদেশ।


ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com