শিরোনাম
ডাঃ ফেরদৌসের প্রতিপক্ষ কারা!
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২০, ১৫:২৫
ডাঃ ফেরদৌসের প্রতিপক্ষ কারা!
আতিক মাহামুদ রোমেল
প্রিন্ট অ-অ+

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী চিকিৎসক ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার। একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন নিউইয়র্কের স্বনামধন্য মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়েছেন বাংলাদেশেই। চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে নিয়েছেন এমবিবিএস ডিগ্রি। তারপর উচ্চতর ডিগ্রি কিংবা জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছেন সুদূর মার্কিন মুলুকে। দীর্ঘদিনের প্রবাস জীবনে অত্যন্ত সুনামের সাথেই নিজ পেশায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। কামিয়েছেন নাম যশ খ্যাতি। এতকিছুর পরও নাড়ির টান ভুলে যাননি। তাই বিপদে আপদে পাশে থেকেছেন নিউইয়র্কের বাঙ্গালী কমিউনিটির, পেয়েছেন তাদের ভালোবাসা।


বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে এর ডেউ গিয়ে পড়ে আমেরিকায়ও। পরে এটা মারাত্মক আকার ধারণ করে ডাঃ ফেরদৌসের কর্মস্থল নিউইয়র্কে। নিজ শহরের এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে তিনি বসে থাকতে পারেননি। ঝাঁপিয়ে পড়েন মানুষের চিকিৎসাসেবার কাজে। বিশেষ করে কাজ করেন স্থানীয় বাঙ্গালী ও দক্ষিণ এশিয়ান কমিউনিটিতে। হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি কর্ম হারিয়ে বিপদে পড়া অসহায় মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, করোনা থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন পরামর্শমূলক ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার, ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি আবার নতুন করে আলোচনায় আসেন। এই আলোচনার ডেউ এসে পড়ে বাংলাদেশেও। তার নায়কোচিত কাজকর্ম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসার বন্যা বইয়ে দেন অনেকে। কেউ কেউ আবার লোক দেখানো বলে সমালোচনাও করেন। আমেরিকার বিখ্যাত চ্যানেল এবিসি টেলিভিশন তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করে।


এটুকু পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। তবে বিপত্তি বাঁধে তখনই, যখন ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার চলমান করোনা পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও মানবিক সহায়তার উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দেশে ফিরে আসার ঠিক আগমুহূর্তে একটি পক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে নানা গুজব ও কুৎসা ছড়ানো শুরু করে। গুজব ছড়ানো হয়, তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাকের ভাগনে। আরেক খুনি কর্ণেল রশিদের খালাতো ভাই। আরো ছড়ানো হয়, ডা. ফেরদৌস চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করার সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। লন্ডনে অবস্থানরত সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা তারেক রহমানের অর্থের যোগানদাতা হিসেবেও তাকে প্রচার করছে কেউ কেউ।


তবে এসব অপপ্রচারে মোটেও দমে যাননি ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার। দেশের মাটিতে নেমেই তিনি অপপ্রচারকারীদের করা অভিযোগের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, দেশে এসেছিলাম নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে করোনা নিয়ে সবার পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে। তার জন্যে জীবনের ঝুঁকি নিতেও আমি পিছপা হইনি। যখন ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে আমি দেশে এসেছি, তখন একদল লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করেছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাচ্ছি। সেই সাথে প্রমাণের জন্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গও এসব অপপ্রচারে সামিল হয়েছেন। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছেন পিআইবি মহাপরিচালক একুশে পদক প্রাপ্ত বর্ষীয়ান সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ। তার মত একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে এমন একটি গুজব ছড়ানো ছিল সত্যিই অপ্রত্যাশিত। যদিও তিনি পরে তার ফেসবুকে পোষ্ট করা এ সংক্রান্ত বক্তব্যটি মুছে দিয়েছেন।


অপপ্রচারকারীরা ডাঃ ফেরদৌস খন্দকারের চ্যালেঞ্জ এর জবাব দিয়েছেন কিনা জানি না তবে, তার বিরুদ্ধে ছড়ানো অভিযোগগুলো যে মিথ্যা তা ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে সরকারের উপর মহলে। সূত্র মতে, ফেরদৌস খন্দকারের যে মামাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে তিনি খন্দকার মোস্তাক নন। তিনি হলেন, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাক আহমেদ। তিনি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। আর থাকেন যুক্তরাষ্ট্রর বস্টনে। ডাঃ ফেরদৌসের বিরুদ্ধে ছাত্রদল করার অভিযোগও সত্য নয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বলছেন, ডাঃ ফেরদৌস ছাত্রলীগই করতেন। দুঃসময়ের কর্মী ছিলেন। ছাত্রলীগের মিছিল মিটিংয়ের অগ্রভাগে থাকতেন। চমেকের ৩২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ডা. সাইফুল ভূইঁয়াও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া তিনি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও জড়িত। শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন, ইউএস ইংক এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মুক্তিযোদ্ধা ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে তার সংগঠন।


এতসব প্রমাণ সামনে আসার পরও ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে নিস্তার পাননি ডাঃ ফেরদৌস। তারা এতই ক্ষমতাশালী যে, সেবা দিতে আসা এই ডাক্তারকে এখন ১৪ দিনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আটকে রাখা হয়েছে। তার সাথে একই বিমানে দেশে আসা ১২৯ যাত্রীর মধ্যে ১২৮ জনকে বাড়ি যাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া হলেও একমাত্র ডাঃ ফেরদৌসকেই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আটকে রাখা হয়েছে। করোনামুক্ত সনদ থাকার পরও ছাড় পাচ্ছেন না তিনি। শুধু তাই নয়, তার সঙ্গে আনা আট স্যুটকেস ভর্তি সুরক্ষা সামগ্রী, যা বিনামূল্যে ডাক্তার- নার্সদের মাধ্যে বিতরণ করার জন্য আনা হয়েছে, সেগুলোও বিমানবন্দরে আটকে রাখা হয়েছে ট্যাক্সের জন্য। একই বিমানের অন্য যাত্রীরা মালামালসহ নিজ নিজ বাড়ি চলে গেলেও তার জন্য যেন অন্য নিয়ম! এ কেমন নিষ্ঠুরতা!


বাংলাদেশের নাগরিক একজন প্রবাসী ডাক্তার মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে সুদূর মার্কিন মুলুক থেকে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে কি এমন অন্যায় করলেন যে তাকে নিয়ে এভাবে অপপ্রচার চালাতে হবে! কেন এভাবে তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে হবে! কেন তাকে কোয়ারেন্টাইনের নামে আটকে রাখতে হবে! যারা এসব করছেন এরা কারা? তাদের উদ্দ্যেশ্যই বা কি? এই প্রশ্ন এখন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে। বলা হচ্ছে, সরকারের ভিতরে এবং বাহিরে থাকা স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট একটা শক্তিশালী পক্ষ ডাঃ ফেরদৌসের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। আর তাদের সাথে যোগ দিয়েছে গণমাধ্যমের স্বার্থন্বেষী একটি মহল। তারা চায় না, ডাঃ ফেরদৌস দেশে ফিরে আসুক ও চিকিৎসা সেবা নিয়ে কাজ করুক। কারণ তারা হয়ত ভাবছে, ডাঃ ফেরদৌস নিউইয়র্কে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় সাফল্য দেখিয়েছেন। এখন, দেশেও যদি তিনি করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা ও মানবিক সেবা দিয়ে সাফল্যের সাক্ষর রাখেন তাহলে দেশের বর্তমান ভেঙ্গে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার নগ্ন চেহারা জনগণের সামনে প্রকাশ হয়ে যাবে। সবকিছু ঠিকঠাক আছে প্রমানে ব্যস্ত থাকা স্বাস্থ্য সিণ্ডিকেটের ব্যর্থতার চিত্র জনগণের সম্মুখে ফুটে উঠবে। তাইতো তাকে নিয়ে এত ভয়। আটকে রাখার এত চেষ্টা চলছে।


ডাঃ ফেরদৌস দেবদূত নন। তিনি সাধারণ একজন মানুষ, একজন চিকিৎসক, একজন সেবক মাত্র। তিনি চাইলেই দেশের বর্তমান করোনা সংকটের সমাধান করে ফেলতে পারবেন না। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থারও আমূল পরিবর্তন করে ফেলতে পারবেন না। এমন সক্ষমতা তার নাই। এমন উদ্দেশ্যও হয়ত তার নাই। বড় জোর তিনি কিছু বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবেন, তাদের সেবা দিতে পারবেন হয়ত। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে তাকে সেবা করার সুযোগ দিন। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সু্যোগ দিন। দেশের নাগরিক হিসেবে এই অধিকার তার রয়েছে। অযথা তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবেন না।


লেখক- আতিক মাহামুদ রোমেল
সাংবাদিক, সোস্যাল এক্টিভিস্ট
সংগঠক- দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চ।


বিবার্তা/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com