শিরোনাম
বৈশাখে করোনা বিলাপ
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৩৭
বৈশাখে করোনা বিলাপ
প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীন মিতুল
প্রিন্ট অ-অ+

ইচ্ছে করেই কাউকে শুভেচ্ছা জানাইনি। গতকাল ছিল বড় বিষন্ন এক বৈশাখ। জনমানবহীন নিস্তব্ধ নিস্তেজ এক দ্বীপে যেনো আমি মুকুটহীন এক সম্রাট। রাজ্য আছে। রাজপ্রাসাদ আছে। সু-রম্য অট্টালিকা আছে। আছে শান বাধানো ঘাটসমেত এক আলিশান পুকুর। অথচ হুকুম তামিল করার কেউ নেই। এ যেনো আরব্য উপন্যাসের সেই রহস্যময় রাজ্যের রাজকুমার ইভানের গল্প। রাজকুমারীকে দৈত্যরাজ পুকুরে পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। তাকে উদ্ধার করতে এলে রাজকুমার ইভানকেও হত্যা করবে ওরা। ভূপৃষ্ঠে এখন অদৃশ্য দৈত্যদের রাজত্ব চলছে।


জনমানবহীন এ দেশে মনে হচ্ছে যেন ভিন্ন এক গ্রহ থেকে এলিয়েন টাইপের কিছু একটা এসেছে। নিজের গ্রহে ওরা বংশ বিস্তারে অক্ষম। তাই চলে এসেছে পৃথিবী নামক গ্রহে। অনেকটা রোহিঙ্গাদের মতো। নিজের দেশে বিয়ে এবং বংশ বিস্তার দুটোতেই নিষেধাজ্ঞা থাকায় এদেশে এসে ওরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। ভিন্ন গ্রহের এই অদৃশ্য অনুজীব প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ মানুষকে নাস্তানাবুদ করে নিজের আগ্রাসী আধিপত্যকে জানান দিচ্ছে। আর এই ভয়ে আমার সৈন্যরা দরজায় খিল এটে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গুটিয়ে আছে। কিন্তু শয়তান এলিয়েন জানে না। ঘরে থাকলেই ওদের মৃত্যু ঘটবে। কতদিন নিজের ফারটিলিটি ধরে রাখবে ওরা? জানোইতো ১৪ দিনের একটা পরীক্ষা। মেনে চলতে না পারলে আবার ১৪ দিন। তোমাকে তো মরতেই হবে করোনা।


বিবর্ণ করে দিয়ে সব উৎসব ভেবেছো আখের গুছিয়ে মানবদেহে স্থায়ী করবে তোমার আবাস? পেরেছো কি অতীতে তা? জানা আছে নিশ্চয়ই অতীত ইতিহাস? ১০০ বছর পর পর এসে কিছুদিন থেকে একটা ঝামেলা পাকিয়ে যাও তুমি। কখনো কি টিকে থাকতে পেরেছো? এবারো পারবে না। কারণ, তুমি স্রষ্টার নষ্ট জীব। যেভাবেই তোমার উত্থান হোক না কেনো স্রষ্টার সেরা জীবের সাথে এ যুদ্ধ বড়জোর কিছুদিনের তোমার। লেজগুটিয়ে চির বিদায় নিবে তুমি। আল্লাহপ্রদত্ত জ্ঞান, উন্নত প্রযুক্তি আর বিজ্ঞান তোমায় খুঁজছে। শুধু কয়টা দিন। তারপর আবার মিলবে প্রাণের মেলা। আবার এ জনমানবহীন রাজ্যে হবে মহাবিজয়ের উল্লাস।


দেশে-মহাদেশে রাজা-বাদশাহকে ভয় দেখিয়ে সাময়িক সবার মুকুট (স্পাইক) কেড়ে নিয়ে ভেবেছো তুমি একাই বিজয়ের মুকুট পড়ে থাকবে? স্কুল-কলেজ অফিস-মসজিদ এমনকি কা’বা শরীফের তাওয়াফ সাময়িক বন্ধ করে ভেবেছো ইতিহাস পাল্টে দিবে? কয়েক সপ্তাহ লকডাউন আর শাট-ডাউন দিয়েই মানবতার বিপর্যয় ঘটিয়ে দিবে? যে সন্তান বিদেশ থেকে মার কাছে আসার জন্য অস্থির হয়ে কান্না করছে তার সাময়িক যাত্রা বিরতি ঘটিয়ে মজা নিচ্ছো তুমি? ভেবেছো কন্টামিনেটের দারুন দাপট দেখিয়ে সকল মানুষের মনে কিছু মিথ ধরিয়ে দিয়ে যাবে তুমি? সবাইকে হোম-কোয়ারেন্টিনে রেখে চোখে ধূলো দিয়ে সোসাল মিডিয়াসহ তাবৎ মিডিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবে তুমি? ক্ষণে ক্ষণে জিন পাল্টে নিজেকে সব পরিবেশে এডাপট করে প্রমাণ করার চেষ্টা করছো-তুমি মানুষের চেয়ে ডারউইন বেশ বুঝো? তাই না?


ইউরোপ-আমেরিকার লক্ষাধিক ৭০ উর্ধ বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে নির্মুলের মধ্য দিয়ে তাদের নেক্সট জেনারেশনকে মেধাশুন্য করার অভিপ্রায় কেনো তোমার? অর্থনৈতিক মন্দায় ফেলে গোটা পৃথিবীর ৫০ কোটি মানুষকে দুর্ভিক্ষ আর অনাহারে মেরে ফেলার দূরভিসন্ধি কেন হলো তোমার? বাংলাদেশের মতো রক্ত দিয়ে পাওয়া দেশকে ৩০ বছর পিছনে ফেলে দেয়ার হুমকি কেনইবা তোমার?


পারবে না। তোমার কুৎসিত চেহারার ভয়ে মানুষ যেমনি দরজায় খিল লাগিয়ে আছে, তেমনি যেদিন তুমি সমূলে ধ্বংস হবে সেদিন গোটা বিশ্ব মাতিয়ে বিজয় উৎসব করবো আমরা। মনে রেখো-জয় মানুষেরই হয়। তুমি তো অদৃশ্য এক অনুজীব। দূর্বলদের কাবু করো। অজান্তেই চোরাগুপ্তা হামলা চালাও। জানবে কি করে মানুষ ধ্বংস হতে পারে কিন্তু পরাজিত হতে শিখেনি (Man can be destroyed but cannot be defeated). আর হ্যাঁ জানবেই বা কি করে-তুমিতো আর Ernest Hemingway এর লেখা The Old Man and The Sea পড়োনি।


লেখক: প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীন মিতুল. ডিন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়


বিবার্তা/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com