শিরোনাম
ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যৎ
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:৫২
ছাত্ররাজনীতির  ভবিষ্যৎ
খন্দকার হাবীব আহসান
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ নামের এই রাষ্ট্রটি যে পথ দিয়ে স্বাধীনতা নামক সূর্যের সাক্ষাৎ পেয়েছে সে পথ তৈরি হয়েছে ছাত্ররাজনীতির ক্রমাগত অদম্য স্ফুরিত তারুণ্য শক্তিতে। এই সত্যের দীপ্তিমান আলোক এখনো বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, শিক্ষা দিবস, ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস সহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বৈরাচারী জলপাই রঙের দুঃস্বপ্ন পুড়িয়ে দিতে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা তারুণ্য বিপ্লবের প্রতিটি দিবসে। ছাত্ররাজনীতির ঐতিহ্যে মিছিল, বিক্ষোভে অদম্য থেকে রাজপথ দখলের সংস্কৃতি যুক্ত হয়েছিল পরাধীনতার অন্ধকার থেকে মুক্তি বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে। জীবন বাজি রেখে জনশক্তি প্রদর্শন করে শোষণ মুক্তির সংগ্রাম-ত্যাগ ছিল সেই সময়ের তারুণ্যের চ্যালেঞ্জ।


লড়াই সংগ্রামের সেই বিপ্লবী যুগে মিছিলের অগ্রভাগে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে সমাবেশে জ্বালাময়ী ভাষণে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, মাতৃভূমি রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কখনো জীবন, কখনো সময় বা স্বপ্ন ত্যাগের বিনিময়ে ছাত্র রাজনীতি থেকে অর্জিত হয়েছে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিচক্ষণ নেতৃত্ব। সেই নেতৃত্বের ত্যাগের রক্ত রং আজকের বাংলাদেশের নতুন সূর্য উদিত হওয়ার পেছনের গল্প। তবুও তাদের অধিকাংশের ত্যাগের মূল্যায়ন এখনো স্বপ্নে সীমাবদ্ধ।


আমাদের এই প্রজন্মের তারুণ্যের বোধদয় হওয়ার এখনি সময়, আমাদের এখন স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের প্রয়োজন নেই, স্বৈরশাসকের বুটের তলা থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ নিষ্প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর ৭৫ এর কালো অধ্যায় পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুখ দেখেছে স্বৈরাচারী শাসক মুক্ত অগ্রসরমান ডিজিটাল বাংলাদেশের। এখন সময় আলোক গতিতে অগ্রসরমান বাংলাদেশের সম্ভাবনায় পরিণত হতে সময়ের আলোকে নিজেকে তৈরির। যদি কখনো রাষ্ট্র পূর্বের ন্যায় সংকটে পড়ে, স্বাধীন হওয়ার প্রশ্ন উঠে আসে অথবা গণতান্ত্রিক অবরুদ্ধতার কালো মেঘ দেখা দেয়, তবেই প্রয়োজন হবে জনশক্তিতে গর্জে ওঠার রক্ত দিয়ে মুক্তি আনার লড়াই সংগ্রাম। অথবা আগামীর যুদ্ধ-বিল্পবে প্রতিযোগিতা হতে পারে তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবনী সম্ভাবনা বা স্নায়ুবিক বুদ্ধির।


উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির এই জোয়ারে গণতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলাদেশকে উন্নত বাংলাদেশ করে গড়ে তোলার যেই সংগ্রাম তা হতে হবে আধুনিক শিক্ষা নির্ভর এবং সময়ের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে। রাজনীতি সচেতন যেকোনো ছাত্র রাজনৈতিক কর্মীর দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে সেই উপলব্ধি আসা বাধ্যতামূলক যা কোনোভাবেই সময়ের অপচয়, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করে অগ্রগতির পথে বাধা প্রদান নয় বরং একান্তই সম্ভাবনাময় ভাবে অগ্রগতির সমান্তরালে যৌক্তিক চাহিদা নির্ভর এবং সহনীয় মনোভাব সম্পন্ন।


ছাত্র সংগঠন গুলো যদি সময় স্রোতে আধুনিক বিশ্বের সাথে লাল সবুজের এই পাল'কে গতিশীল না করতে পারে তবে রাষ্ট্রের অগ্রগতির পথে যেমন বাধা হয়ে দাঁড়াবে তেমনি ছাত্র সংগঠন গুলো সময়ের সাপেক্ষে অপ্রয়োজনীয় বোঝায় পরিণত হবে।পূর্বের স্বাধীনতা সংগ্রামের ন্যায় যদি পেশি বা অস্ত্র শক্তির রক্ত ঝরানো মানসিকতা পোষণ করেই থাকি তবে জাতিতে বিভক্তি টা স্বাধীনতা নিয়েই থেকে যাবে। স্বৈরশাসকের শাসন শোষণ থেকে মুক্তি যেভাবে পেয়েছি যেকোনো দাবিতে তেমন সংগ্রাম যদি উন্নয়নের পথে অগ্রসরমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলমান রাখি তবে ক্ষমতালোভী গোষ্ঠীর জন্য চক্রান্তের সহায়ক ছাড়া কিছুই হবে না।


ছাত্র সংগঠন গুলোর এখন প্রয়োজন উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার আলোক গতিতে এগিয়ে যাওয়ার।


ছাত্র নেতাদের উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ থাকুক, কাজ করুক তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, জানুক ইতিহাস ঐতিহ্য, শিখুক কারিগরী শিক্ষা, সাফল্য আনুক উদ্ভাবনে, তৈরি হোক ক্রীড়াঙ্গনের বিশ্ব মঞ্চে বিজয়ী হতে, ধারণ করুক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু, যুদ্ধ করুক বিশ্ব মঞ্চে অর্থনৈতিক বিজয়ে, মুক্তির সুরে মাতাল হোক বাংলা গানে, বিপ্লবীদের মিছিল স্লোগান গর্জে উঠুক মেধা-মনন আর পরিশ্রমীর স্বপ্ন সাহসে। তাহলেই সম্ভব পূর্বের ন্যায় এই বাংলাদেশকে ছাত্র রাজনীতির সুফল দিয়ে উন্নত করা। এই দশকে ছাত্র রাজনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মেধার অপচয় রোধ ও মেধা-সময়ের সমন্বিত সদ্ব্যবহার।


রাজনীতিতে বহুল ব্যবহৃত ‘ত্যাগী’ শব্দটা বর্তমান সময়ের ছাত্র রাজনীতির প্রেক্ষাপটে যুক্তিহীন, বর্তমানে ত্যাগী হওয়ার সুযোগ আছে কি নেই সেটা আপেক্ষিক, বরং ত্যাগী হওয়াটাও অমূলকও বটে। ‘ত্যাগী’ শব্দটি স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ের রাষ্ট্রের সাপেক্ষে যুক্তিসংগত এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের ঘুরে দাঁড়ানো বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থে বিভিন্ন দলের সাপেক্ষে ছিল যুক্তিসংগত এবং যার প্রয়োজনীয়তা বিগত দশকেও ছিল।আবার যদি রাষ্ট্র দলের সংকট মুহূর্ত আসে তবেই প্রয়োজন হবে নতুবা অপ্রয়োজনীয়। আলোক গতিতে এগিয়ে যাওয়া বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে মহা অগ্রযাত্রায় ডিজিটাল উন্নত বাংলাদেশ করে গড়ে তুলতে এই প্রজন্মের একজন ছাত্রের বা তরুণের ‘সময়, জীবন, স্বপ্ন’ বা এমন যেকোনো কিছু ত্যাগ করাটা ইতিবাচক কিছু নয় বরং এই ত্যাগ করা মানে পিছিয়ে পড়া, অগ্রগতির পথ থেকে ছিটকে পড়া, মূল্যহীন হওয়া।


যোগ্যতা প্রমাণের জন্য স্বাধীনতার এত বছর পর মহা অগ্রগতির এই যুগে এসে বলতে পারেন আপনি 'সম্ভাবনাময়ী'। রাষ্ট্র বাদলের জন্য আপনি ত্যাগ নয় অর্জন করেছেন অনেক। আপনিই পারবেন সময়ের এই রোলার কোস্টারের সাথে তাল মেলাতে, আপনার কাছ থেকে রাষ্ট্র বা দল কিছু পাবে। আপনি এমন কেউ নন-যে, হারাচ্ছে বা ত্যাগ করে ফেলছে অনেকটা-হতে পারে তা সময়, শ্রম, জীবন বা স্বপ্ন, যা কিছু কোনো কাজে আসছে না। এই ত্যাগের প্রয়োজন ছিল রাষ্ট্র বা দলের দুঃসময় যখন ছিল তখন। সেই ত্যাগীদের মূল্যায়নেরও প্রয়োজনীতা ছিল এবং আছে, অথচ তারাই অনেকে বঞ্চিত। তাই এখানে আবার ত্যাগ করে নয় ‘সম্ভাবনা’ হয়ে জ্বলে উঠুন। এক সময়ের ত্যাগী অগ্রজরা যেমন বলতে পারে তারা দলের প্রয়োজনে পাশে ছিল, আপনিও সম্ভাবনাময় কেউ হয়ে জ্বলে উঠুন, আপনিই হবেন দলের বা দেশের জন্য এই সময়ের সব চেয়ে প্রয়োজনীয় তরুণ । এটি ত্যাগী না সম্ভাবনাময় হওয়ার সময়।


বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার তারুণ্যের এই প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে, স্বপ্নের বাংলাদেশটাকে এগিয়ে নিতে ছাত্র রাজনীতিকে ইতিবাচক ধারায় গর্জে উঠতে হবে। নতুবা ছাত্র রাজনীতি হবে আগামীর জন্য সোনালী ঐতিহ্য নির্ভর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সরুপ এই প্রজন্মের বোঝা, যা ছাত্র রাজনীতির শুভাকাঙ্খী সকলের জন্য নিদারুণ বেদনার। ছাত্র রাজনীতির এই নতুন আলো জ্বলে ওঠার জন্য সম্ভাবনার প্রদীপটা আমাদের বর্তমানদেরই জ্বালাতে হবে আগামীর উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য।


লেখক: খন্দকার হাবীব আহসান


উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ


বিবার্তা/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com