দেশের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনের নাম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। প্রতিদিন এ স্টেশন থেকে হাজার হাজার মানুষ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। আবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার লোক ঢাকায় আসছেন। কিন্তু গুরত্বপূর্ণ এ স্টেশনে নানা ধরনের ভাগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। সম্প্রতি রেল স্টেশনটি ঘুরে এবং যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, কমলাপুর রেলস্টেশনে গেলেই হয়রানির শিকার হতে হয়। টিকিট সংগ্রহ, ট্রেনে ওঠা-নামার সময় তো ভোগান্তির শিকার হতে হয়ই। এছাড়াও স্টেশন থেকে বের হয়ে রিকশা ও সিএনজি চালকদের কাছে হয়রানির শিকার হতে হয়।
গত শনিবার সিলেট থেকে আসা যাত্রী মুহিবুর রহমান বিবার্তাকে জানান, তিনি তার স্ত্রী শাহানারা বেগমকে নিয়ে পরীক্ষা দিতে ঢাকায় আসেন। কিন্তু ট্রেনযোগে ঢাকা পৌঁছানোর পর কমলাপুর রেলস্টেশনে হয়রানির শিকার হন।
তিনি বলেন, আমি প্রথমে ট্রেন থেকে নামার সময় কুলিদের হাতে হয়রানি শিকার হই। পরে স্টেশনের গেট থেকে বের হওয়ার সময় নিরাপত্তাকর্মী ও টিকিট যাচাইকারী ব্যক্তিরা হয়রানি করেন।
এমন অভিযোগ শুধু মুহিবুর রহমানের নয়, ট্রেনে যাতায়াতকারী বেশিরভাগ যাত্রীই এমন পরিস্থিতির শিকার।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা আব্দুর রহমান নামে এক যাত্রী বিবার্তাকে বলেন, নির্ধারিত সময় থেকে ৩০ মিনিট দেরিতে ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে আসে। তবে কমলাপুর আসার পর ট্রেন থেকে নামার সময় কুলিরা তার ব্যাগ নিয়ে টানাহেচড়া শুরু করে। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে রক্ষা পেলেও স্টেশনের বাইরে এসে আবার বিপাকে পড়তে হয়।
তিনি জানান, রেলস্টেশনের বাইরে অনেক সিএনজি ও রিকশাচালক যাত্রীদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন। আর যাত্রী এলে তারাও টানাহেচড়া শুরু করেন। এমন পরিস্থির মধ্যে তিনিও পড়েছিলেন।
আব্দুর রহমান আরো জানান, ট্রেন থেকে নেমে কুলিকে ১০০ টাকা দিতে হয়েছে। আবার স্টেশন থেকে বের হয়েও বাড়তি টাকা দিয়েই সিএনজি নিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়।
আখলিমা নামের আরেক যাত্রী বিবার্তাকে বলেন, ট্রেন থেকে নামার পরই কুলিরা দৌড়ে এসে তার সঙ্গে থাকা লাগেজ নিয়ে টানাটানি শুরু করে। পরে বাধ্য হয়েই কুলিদের দিয়ে লাগেজ বহন করান। টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে বাসে করে গন্তব্যে যেতে চাইলেও সিএনজি অটোরিকশাচালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। পরে বেশি ভাড়ায় সিএনজি অটোরিকশা যোগে যেতে বাধ্য হন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমলাপুর রেলস্টেশনে প্রতিদিন হাজারো যাত্রী এভাবে হয়রানির শিকার হন। তবে এমন হয়রানির সত্যতা নিশ্চিত করতে শনিবার (১৩ জুলাই) থেকে শুক্রবার (১৯ জুলাই) পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশনে একাধিকার অবস্থান করেন এ প্রতিবেদক। এ সময়ের মধ্যে বহু যাত্রীকে হেনস্তা ও হয়রানি হতে দেখেন তিনি।
তবে কমলাপুর রেল কর্তৃপক্ষ বিবার্তাকে জানায়, যাত্রীদের সুবিধার জন্যই স্টেশনে ট্রলি রাখা হয়েছে। যেসব যাত্রী ওই ট্রলি দিয়ে মালামাল বহন করতে চান না, শুধু তারা কুলিদের সহযোগিতা নিতে পারেন। বিনিময়ে তাদের দিতে হবে নির্ধারিত ২০ টাকা। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের এমন আইন কেউই তোয়াক্কা করছেন না। উল্টো যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি টাকা। এমনকি কারো কারো কাছ থেকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মো. আনিসুল হক বিবার্তাকে বলেন, হয়রানির শিকার হলে যাত্রীরা অভিযোগ করবেন। আর অভিযোগ করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
ট্রেন যোগাযোগে আগের চেয়ে অনেক মান বৃদ্ধি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যাত্রীদের সেবায় এখানে নিরাপত্তাকর্মীরা কাজ করছেন। কেউ হয়রানি বা হেনেস্তার শিকার হলে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা স্টেশন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিতে আহ্বান জানান তিনি।
দেশের সবচেয়ে বড়ে এ রেলস্টেশনটি ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত। এটি ঢাকার সাথে বাংলাদেশের অন্য জায়গার মধ্যে যোগাযোগের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল। এছাড়া এর অত্যাধুনিক ভবনটি নকশা করেছেন মার্কিন স্থপতি রবার্ট বাউগি। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬০ সালে। চালু হয় ১৯৬৯ সালে।
বিবার্তা/খলিল/উজ্জ্বল/রবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]