শিরোনাম
বিএসটিআই অনুমোদিত ১১ কোম্পানির দুধে সিসা
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০১৯, ১৪:৩৩
বিএসটিআই অনুমোদিত ১১ কোম্পানির দুধে সিসা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারেরমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিএসটিআই অনুমোদিত ১৪টি কোম্পানি পাস্তুরিত দুধ বিক্রি করছে। এর মধ্যে ১১টির নমুনায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টকে এ তথ্য জানিয়েছে। পাশাপাশি বাজারে বিক্রি হওয়া খোলা দুধের নমুনায় ক্যাডিমিয়ামের উপস্থিতিও পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে তাদেরপ্রতিবেদনে।


মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এ প্রতিবেদন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়।


প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সে বিষয়ে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।


আদালত বলেছেন, পশু চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ফার্মেসি অ্যানিমেল অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বা বিতরণ করতে পারবে না। কোনো খামারি বা কেউ প্রেসক্রিপশন ছাড়া গবাদিপশুকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতেও পারবে না।


পাশাপাশি একটি রুলও জারি করেছে হাইকোর্ট। জনস্বার্থে দুধের দূষণ পরীক্ষা ও গবেষণায় বিএসটিআই নিবন্ধিত দুধ কোম্পানিগুলোকে একটি তহবিল গঠন করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।


বিএসটিআই এবং দুধ উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোকে এ রুলের জবাব দিতে বলেছেন আদালত।


এর আগে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গো খাদ্য, দুধ, দই এবং বাজারে থাকা প্যাকেটের পাস্তুরিত দুধ নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগার (এনএফএসএল) একটি জরিপ চালায়।


এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরুর দুধের ৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করে এনএফএসএল। ঢাকাসহ তিন জেলার ছয়টি উপজেলাসহ ১৮টি স্থান থেকে দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। গরুর দুধ ও গোখাদ্য সরাসরি খামার থেকে সংগ্রহ করা হয়।


ঢাকার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান ও আশপাশের উপজেলার দোকান থেকে দই সংগ্রহ করে। বিভিন্ন সুপার স্টোর থেকে সংগ্রহ করা হয় বাজারে প্রচলিত প্রায় সব ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত তরল দুধ এবং আমদানি করা প্যাকেট দুধ।


জরিপের ফলে গোখাদ্যের ৩০টি নমুনা পরীক্ষা করে কীটনাশক (দুটি নমুনায়), ক্রোমিয়াম (১৬টি নমুনায়), টেট্রাসাইক্লিন (২২টি নমুনায়), এনরোফ্লোক্সাসিন (২৬টি নমুনায়), সিপ্রোসিন (৩০টি নমুনায়) এবং আফলাটক্সিন (চারটি নমুনায়) গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়ার কথা জানায় এনএফএসএল।


গরুর দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা পাওয়া যায় ওই গবেষণায়। সেই সঙ্গে ৯৬ শতাংশ দুধে পাওয়া যায় বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া।


প্যাকেটের দুধের ৩১টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে টেট্রাসাইক্লিন পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশ দুধের নমুনায় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া পাওয়ার কথা বলা হয় প্রতিবেদনে।


দইয়ের ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে একটিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা পাওয়ার কথা জানায় এনএফএসএল। ৫১ শতাংশ নমুনায় পাওয়া যায় বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া।


এরপরই বিষয়টি নিয়ে দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তবে দুগ্ধজাত কোম্পানিগুলো দাবি করে- একটি মহল দুগ্ধখাত ধ্বংস করতে মাঠে নেমেছে। দুধে ক্ষতিকারক সিসা ও নানা দ্রব্য পাওয়ার বিষয়টি আদালতেও গড়ায়। আদালত এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।


এর মধ্যেগত ২৫ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োমেডিকেল রিসার্স সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুকসহ ফার্মেসি অনুষদের কয়েকজন শিক্ষক দুধে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন। পরদিনই পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এ গবেষণাকে মিথ্যা বলে দাবি করেন। ৯ জুলাই গবেষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।


দুধ নিয়ে গবেষণা করায় অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুককে হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের বহিষ্কার চেয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সামাজিক এবংসাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব’৭১।


সোমবার (১৫ জুলাই) বেলা১১টায় রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে ওই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে সংগঠনটি। এ সময় অধ্যাপক ফারুকের পাশে থাকার ঘোষণাও দেয় সংগঠনটি।


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com