মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা আর মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে যে রাখাইন থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তার প্রাথমিক আলামত খুঁজে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তথ্যানুসন্ধানকারী দলের সদস্যরা।
এ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তে পাঁচ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছে আইসিসির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) আইসিসির উপকৌঁসুলি জেমস স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে দলটি ঢাকায় পৌঁছাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ সফরের সময় আইসিসির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আইন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তারা জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলবেন। এ সফরে আইসিসির কর্মকর্তারা কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নেবেন।
জানা যায়, আইসিসির তথ্যানুসন্ধানকারী দল রোহিঙ্গাদের গণহত্যা আর মানবতাবিরোধী চালিয়ে রাখাইন থেকে তাড়িয়ে দেয়ার প্রাথমিক আলামত খুঁজে পায়। এরপর আদালতের কৌঁসুলি ফেতু বেনসুদা এ নিয়ে তদন্ত শুরু করতে আইসিসির অনুমতি চান।
মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের জোর করে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী হয়েছে কিনা, তা নিয়ে আইনি মত চেয়ে দিতে গত বছরের ৯ এপ্রিল প্রাক-শুনানি আদালতে আবেদন জানান ফেতু বেনসুদা। এর দুই মাস পর জুনে আইসিসির অনুরোধে সাড়া দিয়ে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ পাঠায় বাংলাদেশ।
তবে রোম সনদে সই করেনি বলে আইসিসিতে কোনো পর্যবেক্ষণ না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানায় মিয়ানমার। এ নিয়ে আইসিসির কাজ করার এখতিয়ার নেই বলেও বিবৃতি দেয় দেশটি।
এদিকে ঢাকার একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ২৫ ও ২৬ জুলাই মিয়ানমারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজার সফর করবে। নেপিডো আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকাকে এ তথ্য জানিয়েছে। তবে ওই প্রতিনিধিদলটি কার নেতৃত্বে, কত সদস্যের এবং তারা এই সফরে কী কী করতে চায়, তার কিছুই উল্লেখ করেনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমার সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট কাটাতে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ বৈঠকে ৩ মে (শুক্রবার) নেপিডোতে অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ‘রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। তারা যাতে স্বেচ্ছায় দেশটিতে ফিরে যায় এজন্য মিয়ানমারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলো সফর করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’
তিনি আরো জানান, গত ৩ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৫ ও ২৬ জুলাই মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার সফর করবে।
যদিও প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ কয়েক দফা মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের তালিকা দিয়েছে। প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের জন্য ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমার প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছে।
মিয়ানমারের যাচাই-বাছাইয়ে আপত্তি ওঠা রোহিঙ্গাদের বিষয় সমাধানে খুব শিগগিরই ঢাকায় বৈঠক হবে বলে চতুর্থ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। তবে গত ৩ মে’র বৈঠকের পর এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে হালনাগাদ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠিত হয়।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে নেপিডোর সঙ্গে স্বাক্ষর করা চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, ‘৯ অক্টোবর ২০১৬ এবং ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। চুক্তি স্বাক্ষরের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রায় দেড় বছর পার হলেও প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্টো একাধিক অজুহাতে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি এড়িয়ে গেছে তারা।
ঢাকা সফরে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আব্দুল্লাহ ৭ জুলাই (রোববার) বলেছিলেন, ‘নিজের বসতভিটায় ফিরে যাওয়াই রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান। এ সংকট সমাধানে মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে যথাসাধ্য সহযোহিতা করছে। আশা করছি, এই বছর শেষ হওয়ার আগেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে যথাযথ প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখেরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
বিবার্তা/রবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]