সাগরে তিন সপ্তাহ ভেসে থাকার পর উদ্ধার হওয়া ১৭ বাংলাদেশি ফিরেছেন তিউনিশিয়া থেকে। ঢাকায় বিমানবন্দরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার সকালে তাদের বাড়ি ফিরতে দেয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে তিন সপ্তাহ ধরে তিউনিশিয়ার সাগরে ভেসে ছিলেন ৭৫ জন। তাদের মধ্যে ৬৪ জনই বাংলাদেশি। তিউনিশিয়া তাদের উপকুলে ভিড়তে দিলেও আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি।
অবশেষে তাদের মধ্য থেকে ১৭ বাংলাদেশিকে শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকিরাও অচিরেই ফিরে আসবেন।
ফিরে আসা বাংলাদেশিদের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুক্রবার রাতভর ইমিগ্রেশন ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
তাদের একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইদ্রিস জমাদ্দার। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমাদের মাছের জাহাজে করে ইতালি পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু ৩০-৩৫ জন বহন করতে পারে এমন একটি দোতলা নৌকায় আমাদের উঠানো হয়। নৌকার তলায় ৩০ জন ও ৪৫ জনকে উপরে তোলা হয়। এক সময় নৌকার তলা ফুটা হয়ে গিয়েছিল। আমরা ইতালির জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত যাই, তখন আমাদের নৌকার তেল শেষ হয়ে যায়। নৌকাটি সাগরে ডোবার উপক্রম হয়। কিন্তু কোনো জাহাজই আমাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। আমরা খাবার ও পানির কষ্টে পড়ি।
তিনি বলেন, আমরা নৌকাসহ সাগরে ভাসতে থাকি। এক পর্যায়ে আমিসহ কয়েকজন একটি জাহাজ দেখে সাগরে ঝাপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমরা সিদ্ধান্ত নেই হয় বাঁচবো, না হয় মরবো। এরপর আমরা ১৫-১৬ জন সাগরে ঝাঁপিয়ে পরলে ওই জাহাজটি আমাদের উদ্ধার করে তিউনিশিয়া উপকুলে নিয়ে যায়। পরে অন্যদেরও উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের আগেও একজন সাগরে পরে গিয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম তিনি মারা গেছেন। পরে তাকেও উদ্ধার করা হয়।
ডয়চে ভেলেকে ইদ্রিস বলেন, আমি এক বছর আগে লিবিয়া যাই। সেখানে ছয় মাস কাজ করার পর আমাদের আটকে রাখা হয়। আমাদের বাড়িতে যোগাযোগও করতে দেয়া হতো না। এরপর ২৭ মে আমাদের দালাল লিবিয়ার জোয়ারা থেকে নৌকায় ইতালি পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। দালাল আমার কাছ থেকে ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। তবে অনেকের কাছ থেকেই ৯-১০ লাখ টাকা নিয়েছে। আমরা সবাই প্রতারণার শিকার।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ওই দালালরা আরো অনেককে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় নিয়ে গেছে। তাদেরও সাগরপথে ইতালি পাঠানোর কথা বলে আটকে রাখা হয়েছে।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের রফিকুল ইসলামের বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। বেগমগঞ্জে তাদের যে জমিজমা ছিল তা বিক্রি হয়ে গেছে। এখন তার বাবা-মা, ভাই বোন মুন্সিগঞ্জে নানা বড়িতে থাকেন। তাকে কেউ বিমানবন্দরে নিতেও আসেননি। সকালে তিনি একাই মুন্সিগঞ্জ রওয়ানা হন। এর আগেই এয়ারপোর্ট থেকে রফিকুল ফোন করেন তার ভাই মোহাম্মদ জাহিদকে।
জাহিদের সঙ্গে কথা হয়েছে ডয়চে ভেলেরও। তিনি বলেন, চার মাস আগে আমাদের শেষ সম্পদ এক টুকরো জমি বিক্রি করে রফিকুলকে লিবিয়া পাঠানো হয়। প্রথমে এক মাস বেনগাজিতে ছিল সে। পরে সেখান থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে রুমের মধ্যে আটকে রাখা হয় তাকে। প্রথমে দালালরা ৫ লাখ টাকা নেয় লিবিয়া পাঠানোর জন্য। লিবিয়া নেয়ার পর সেখানে যুদ্ধের কথা বলে ইতালি পাঠানোর কথা বলে আরো ৩ লাখ টাকা নেয়।
লিবিয়া হয়ে ইতালি পাঠানোর নামে এই প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। চক্রটি একই সাথে বাংলাদেশ ও লিবিয়াতে সক্রিয়।
মে মাসে আরেক ঘটনায় তিউনিসিয়ার সাগরে নৌকাডুবিতে বাংলাদেশের ৩৯ জন নাগরিক নিখোঁজ হয়। এদের মধ্যে একজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তারাও লিবিয়া থেকে দালালের মাধ্যমে ছোট নৌকায় করে ইতালির পথে রওনা হয়েছিলেন। সূত্র: ডয়চে ভেলে
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]