শিরোনাম
নুসরাত হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:২১
নুসরাত হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ফেনী সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ জড়িত সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।


শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টায় রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সংগঠন গৌরব ৭১ আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।পরে এ দাবিতে শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত পদযাত্রা করা হয়।


সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কবি মুহাম্মদ সামাদ, সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রুয়াইয়াত ফেরদৌস,গাজী টিভি ও সারাবাংলার ডট নেটের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, পূর্ণিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পূর্ণিয়া রাণী সেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা হাবীবুল ইসলাম হাবীব,গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক বাপ্পাদিত্য বসু, ড. নিরুপা পারভীন,ড. শেখ আবদুল্লাহ আল মামুনসহ প্রমুখ।সমাবেশ পরিচালনা করেন গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কবি মুহাম্মদ সামাদ তার বক্তব্যে বলেন, নুসরাতের ঘটনায় শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত হয়েছি। এ ঘটনায় শুধু অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নয়, এরসাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।নুসরাত তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে।তার মৃত্যুতে আমরা বসে থাকতে পারি না।দোষীদের শাস্তি যদি না হয় তাহলে আমি বলবো,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব জায়গায় এ ব্যাপার দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য।


সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, আমরা কিছুদিন পর পর এরকম ঘটনার জন্য রাস্তায় দাঁড়ায়। আসলে এভাবে কাজ হবে না! নির্যাতন,ধর্ষণ বন্ধ হয়েছে কি? যেখানে মাদরাসায় নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়ার কথা,সেখানে এরকম ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।


গোলাম কুদ্দুস বলেন, আজকে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মেয়েরা নিরাপদ! কিছুদিনের জন্য আমরা সোচ্চার থাকি।এরপর আবার আমরা চুপসে যায়।প্রচলিত আইনে এসবের বিচার হবে না। এটার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।এছাড়া
সারাদেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ গড়ে তুলতে হবে।তাহলে আমরা মূল্যবোধের শিক্ষা পাবো।


ঢাবি শিক্ষক ড. রুয়াইয়াত ফেরদৌস বলেন, আমরা বাংলাদেশ হেরে গেছি।এটা কি সভ্য দেশ? আমি একজন শিক্ষক হিসেবে বলছি,একজন শিক্ষক কিভাবে তার ছাত্রীর সাথে এরকম জঘন্য কাজ করতে পারে!আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের দাবি করলেও নুসরাতের ঘটনা সেই উন্নয়নের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় বলে মনে করেন এ শিক্ষক।



গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, সিরাজ উদ দৌলা ২০০৬ সাল থেকে এসব কাজ করে আসছে।ওই এলাকায় তার সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে।এলাকার ওসিসহ স্থানীয় রাজনীতিবিদরা এরসাথে জড়িত। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা কর অনেকে সেই অধ্যক্ষকে বাঁচাতে তৎপর হয়েছে। নায়ারণগঞ্জের ত্বকী হত্যা,তনু হত্যা, সাগর রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় এরকম ঘটনা বারবার ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।


পূর্ণিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পূর্ণিয়া রাণী সেন বলেন, সিরাজ উদ দৌলা যেভাবে নুসরাতকে পুড়িয়ে মেরেছে,তাকে সেইভাবে শাহবাগ অথবা প্রেসক্লাবে পুড়িয়ে মারা হোক।


সমাবেশের সঞ্চালক এফ এম শাহীন বলেন, মাদরাসা পরিচালনা পরিষদ সোনাগাজীর পুলিশ প্রশাসন, সোনাগাজী আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকেও যারা ধর্ষক-খুনি সিরাজ উদ দৌলার পক্ষ অবলম্বন করেছে, তারা শুধু এই ন্যক্কারজনক অপরাধের দোসরই না, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশকেও অমান্য করেছে। এ মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এনে ধর্ষক-খুনি এবং তার পক্ষ অবলম্বনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।


রাষ্ট্রকে উদ্দেশ্যে করে শাহীন বলেন, রাষ্ট্রকে বলতে চাই,যে আইন আছে তার যদি প্রয়োগ না থাকে, তাহলে আমরা আইনকে হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবো।



বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। নারীনেত্রীরা ক্ষমতায় অথচ এরকম ঘটনা বারবার ঘটে চলেছে। এই ধর্ষক-খুনি এবং তার মদদদাতা ও দোসরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে আর কেউ ধর্ষণের মতো গর্হিত অপরাধ সংগঠিত করার সাহস না দেখায়।


প্রসঙ্গত, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে নুসরাতের উপর যৌন হয়রানির অভিযোগে একটি মামলা করে নুসরাতের পরিবার। গত শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসার কেন্দ্রে যায় ওই ছাত্রী। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।গত বুধবার রাত ৯.০০ টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে নুসরাত শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।


বিবার্তা/রাসেল/আকবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com