শিরোনাম
রাজধানীর ৪৩ খালের ৩৬টিই বেদখল
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০১৬, ১৪:৪৭
রাজধানীর ৪৩ খালের ৩৬টিই বেদখল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিভিন্ন সময়ে নানা পর্যায়ে উদ্যোগ নিয়ে রাজধানীর খালগুলো দখলমুক্ত করা হলেও কিছুদিন পরই এসব খাল আবার প্রভাবশালীরা দখল করে নিচ্ছেন। বর্তমানে রাজধানীর ৪৩টি খালের মধ্যে ৩৬টি খালেই দখল হয়ে গেছে। এতে রাজধানীর পরিবেশ ভয়াবহভাবে বিপন্ন হচ্ছে।



সূত্র মতে, রাজউক, সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা পৃথকভাবে ২০ দফা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েও কল্যাণপুর খালটি রক্ষা করতে পারেনি। ওই খালটিতে ২০০৭ সালেই ১১ দফা অভিযান চালিয়ে পুরোপুরি দখলমুক্ত করা হয়। কিন্তু এরপরও জবর-দখলকারীদের দৌরাত্ম্যের কাছে এ সাফল্য মলিন হয়ে যায়।



অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজউক ২০০৭ সালের ৩ এপ্রিল কল্যাণপুর প্রধান খালের ২৬টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। একই বছর ২৯ মার্চ, ১২ ও ১৩ আগস্ট ঢাকা সিটি করপোরেশন ৫১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। ১৪ মে পুনরায় অভিযান চালিয়ে আরও ১২টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ঢাকা ওয়াসা ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট অভিযান চালিয়ে ১৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। ওয়াসা কল্যাণপুর খালে সর্বশেষ অভিযান চালায় ১০ মে ও ১৬ আগস্ট। এ সময় ৩১টি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। তবে কল্যাণপুর খাল দখলমুক্ত করার পর ওয়াকওয়ে নির্মাণ, খালপাড় বাঁধাই বা পাড়জুড়ে নার্সারির কোনো ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। ফলে কয়েকদিনের ব্যবধানে আবার দখল হয়ে যায় এবং এখনো দখলকারীদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে খালটি।



সরেজমিন দেখা যায়, কল্যাণপুর খালের একাংশ দখল করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয় স্থাপন হয়েছে, গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট, বস্তি। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কার্যালয় থাকায় কেউ এখানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সাহস পাচ্ছে না। এ সুযোগে আশপাশে গড়ে উঠেছে আরও কিছু স্থাপনা।



শুধু কল্যাণপুরের খাল নয়, এভাবে একে একে রাজধানীর পানিপ্রবাহের মাধ্যম সচল খালগুলো প্রায় সবই বেদখল হয়ে গেছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও সেসব খালের দখলদারদের উচ্ছেদ করা যায়নি। সাবেক সংসদ সদস্য বেগম সানজিদা খানম বলেন, শ্যামপুর খাল দখলমুক্ত করা হলেও খনন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়নি। এতে খাল আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর উচ্ছেদকৃত খালের পুনর্বাসন ও সংরক্ষণের বর্তমান অবস্থা দেখার জন্য কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, রামচন্দ্রপুর খালের রেগুলেটিং পন্ডের ভিতর ব্যক্তিমালিকানা দাবি করে জায়গা ভরাট করে পিলার স্থাপন করা হয়েছে।



তিন দশক আগেও রাজধানীতে ৪৩টি খাল সচল ছিল। সেসব খালে ছিল অবাধ পানিপ্রবাহ। কিন্তু ১৯৭৮ সালের পর থেকে খালগুলো একে একে অস্তিত্ব হারাতে থাকে।



ধোলাইখালের অবস্থা আরও করুণ। পুরো খালজুড়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চল। ১৯৮৭-৮৮ সালে খালটি ভরাট করে নির্মিত হয় রাস্তা। এখন চলে বাস-ট্রাক, রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন। শ্যামপুর ও শুভাড্যা খাল সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হয়েছে, খালটির ওপর শ্যামপুর রেলক্রসিংয়ের কাছে স্থানীয় জনগণ বাঁশের বেড়া দিয়ে দুই ভাগ করে নিয়েছে।



এক ভাগ দিয়ে আলম মার্কেট ও আশপাশে বাড়ির সুয়ারেজের পানি দনিয়া খালে পড়ে এবং আরেক ভাগ দিয়ে ৩৬২টি ডাইং ফ্যাক্টরির বর্জ্য পানি প্রবাহিত হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে পড়ছে।



ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকা সিটি করপোরেশন ও রাজউক এর কাগজপত্রে ১৯৯০ সালেও ১২টি খাল সচল থাকার হিসাব দেখানো হয়। দুটি খালকে বক্স কালভার্টের নামে ‘বাক্সবন্দী’ করা হয়েছে। ১২০ মিটার চওড়া রামচন্দ্রপুর খালটিও ভরাট করে সিটি করপোরেশন বানিয়েছে প্রশস্ত সড়ক এবং গড়ে ওঠেছে হাটবাজার।



রাজধানীর খালগুলোকে ওয়াসা বক্স কালভার্টের মাধ্যমে দ্বিমুখী ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। ফলে দুর্ভোগ-ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়েছে। কথা ছিল, বক্স কালভার্টের নিচ দিয়ে ড্রেনেজ-সুয়ারেজ ব্যবস্থা সচল থাকবে আর ওপর দিয়ে হবে রাস্তা। সে অনুযায়ী সেগুনবাগিচা থেকে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত বক্স কালভার্টের কাজ সম্পন্ন হলেও কদমতলা-বাসাবো-পূর্ব রাজারবাগ পর্যন্ত কালভার্টের কাজ প্রায় ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত।



পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, খালের পাশাপাশি জলাভূমিগুলো নিশ্চিহ্ন হওয়ায় রাজধানীর পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বৃষ্টিপাতের সামান্য পানি ধরে রাখার এতটুকু জলাধারও নেই। বর্ষা এলেই বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে, রাস্তাঘাট ডুবে যায়।



বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com