প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের এ মাটিরই সন্তান আখ্যায়িক করে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবদান রাখার আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, অনাবাসিক প্রকৌশলীরা দেশের তথ্য প্রযুক্তি, কৃষি, শিল্পোৎপাদন, যোগাযোগ ও সমুদ্র সম্পদ আহরণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারেন। তারা পলিসি লেভেল চ্যালেঞ্জ এবং ইনস্টিটিউশন লেভেল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনাবাসী (এনআরবি) প্রকৌশলীদের প্রথম কনভেনশনের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নটা কেবল শহর কিংবা রাজধানী ভিত্তিকই নয়, পুরো গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন করতে চাই আমরা। আজকে আপনারা যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, বাংলাদেশের কোনো না কোনো গ্রামেই আপনাদের বাড়িঘর, সেখানে আপনাদের শিকড় রয়ে গেছে। শিকড়ের সন্ধান করে আপনাদের যার যার অঞ্চলের কিভাবে উন্নয়ন করতে পারেন, আপনাদের কাছে সে অনুরোধ আমি করবো। আপনারা সেদিকটাতেও একটু বিশেষভাবে নজর দেবেন।

তিনি প্রবাসী প্রকৌশলীদের উদ্দেশে আরো বলেন, বিদেশে আছেন এটা ঠিক, কিন্তু এই মাটির সন্তান আপনারা। এই দেশ এই মাটি ও মানুষ এটাই আপনাদের মূল জায়গা। এটাই আপনাদের শিকড়। আর এই শিকড়ের সন্ধানেই আপনারা আজকে এসেছেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী প্রকৌশলীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, আপনাদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

তিনি বলেন, আপনারা যে পলিসি লেভেল চ্যালেঞ্জ এবং ইনস্টিটিউশন লেভেল চ্যালেঞ্জ ভালভাবে চিহ্নিত করেছেন সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে এই দেশের যেন আমরা ভালভাবে উন্নয়ন করতে পারি সে বিষয়গুলোও আপনারা দেখবেন। আর আপনাদের এই ফাস্ট কনভেনশন অব এনআরবি ইঞ্জিনিয়ার্স -২০১৯ এর প্রহণযোগ্য সুপারিশসমূহ নিয়ে ভাল একটা নীতিমালা আমরা গ্রহণ করতে পারবো বলেই আমি মনে করি এবং সেভাবেই এটা তৈরি করবেন।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে যে দেশের উন্নয়ন সম্ভব তা আমরা করে দেখাতে পেরেছি। এক্ষেত্রে আপনারা (এনআরবি প্রকৌশলী) আরো যেসব চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন তা দূর করে দেশকে এগিয়ে নিতে আপনাদেরই ভূমিকা রাখতে হবে।

তার সরকার গত ১০ বছরে দেশের অভূতর্পূব উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃত। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, জনগণের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ ডলারে উন্নীত হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮৬-এ উন্নীত হয়েছে, একে আমার দুই অংকে নিয়ে যেতে চাই। আর এই সময়ের মধ্যেই দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন,উচ্চ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এবং মূল্যস্ফীতি কম থাকলে তার সুফলটা দেশের সাধারণ জনগণ ভোগ করে। যেটা এখন তারা ভোগ করছে।

দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণও শুরু হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে সিলেট-চট্টগ্রাম-দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নেও কাজ চলছে। সড়ক ও রেল যোগাযোগ আরো সহজ, দ্রুত ও আরামদায়ক করতে কাজ এগিয়ে চলেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা হয়েছে। কক্সবাজারেও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গড়তে কাজ এগিয়ে চলেছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), ব্রিজ টু বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফর্মেশন (এটুআই) প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে সরকারের নীতিগত পর্যায়ে এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অনিবাসী প্রকৌশলীরা কিভাবে সহযোগিতার মাধমে অবদান রাখতে পারেন সেজন্যই দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক ড.জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং ব্রিজ টু বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান আজাদুল হক বক্তৃতা করেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মনোয়ার আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন।

বিবার্তা/জাকিয়া