শিরোনাম
বোনের বিয়ের কেনাকাটায় গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রোহান
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:২১
বোনের বিয়ের কেনাকাটায় গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রোহান
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রোহান চকবাজার গিয়েছিলেন ছোট বোনের বিয়ের কেনাকাটার জন্য। কিন্তু সেখান থেকে তাকে লাশ হয়ে বাসায় ফিরে আসতে হয়েছে।


বুধবার রাতে চার বন্ধুকে নিয়ে রোহান বের হয়েছিলেন বোনের বিয়ের কেনাকাটা করার জন্য। সঙ্গে আরো বেশ কিছু কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার কথা ছিলো তাদের।


আগামী মাসেই তার ছোট বোনের বিয়ে। কয়েক দিন ধরেই বেশ ছোটাছুটি আর ব্যস্ততায় দিন কাটছিলো তার। কিন্তু বুধবার রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড সেই উৎসব থেকে নাই হয়ে গেলেন তিনি। থামিয়ে দিল তার সব আনন্দ ও উৎসব।


আর কোনো দিন ফিরে আসবেন না রোহান। রোহানের সঙ্গে ছিলেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র আরাফাত। আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করলে লাশ হলেন তিনিও। কাজী আলাউদ্দিন রোডসংলগ্ন মসজিদ এলাকার বাসিন্দা আরাফাত।


এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সময় যত যাচ্ছে লাশের সংখ্যাও তত বাড়ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকেই চলছে লাশের সন্ধান। একের পর এক ব্যাগ ভর্তি করে লাশ বের করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ব্যাগে ভর্তি করে ৮১ জনের মরদেহ বের করা হয়েছে।


শার্ট ব্যবসায়ী মমিন রোহানের চাচাতো ভাই। তিনি বলেন, তার মরদেহ মর্গে আছে বলে নিশ্চিত হলেও কেউ শনাক্ত করতে পারছি না। অপর একটি মোটরসাইকেলে রোহানের সঙ্গে ছিলেন তার ভাগ্নে লাবিব, রমিজ ও সোহাগ।


লাবিবের মাথার সামান্য অংশ পুড়লেও তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। বৃহস্পতিবার মর্গের সামনে ছিলেন রোহানের বাবা হাসান খান। তবে তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না।


রোহানের নানা ইউনুস খান বলেন, রোহানের ছোট বোনের বিয়ে আগামী মার্চে। আর তাই বন্ধুদের নিয়ে সে খুব ব্যস্ততার ভেতর ছিল। বুধবার সে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া ও ডেকোরেশনে কথা বলতে গিয়েছিল। কিছু কেনাকাটার কাজও বাকি ছিল, তখন এ দুর্ঘটনা ঘটে।


চকবাজারের চুড়িহাট্টায় একটি আবাসিক ভবনে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের সময় রাস্তায় যানজটে আটকে থাকায় অনেকে প্রাণে রক্ষা পাননি। আগুনের কবল থেকে পালিয়ে বাঁচার আগেই মৃত্যু তাদের গ্রাস করে নিয়েছে।


স্থানীয়রা বলেন, চুড়িহাট্টা বড় মসজিদের সামনের চৌরাস্তায় প্রায় যানজট লেগে থাকে, অগ্নিকাণ্ডের সময় এর ভয়াবহতা এতটা তীব্র ছিল যে, সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় অবস্থানরত প্রাইভেটকার, রিকশা, সাইকেল, ভ্যানগাড়ি, মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।


সরেজমিন দেখা যায়, চুড়িহাট্টা ওহাব ভবনের সামনে পড়ে আছে প্রায় ৩০টির মতো রিকশা, চারটি পিকআপভ্যান, তিনটি প্রাইভেটকার, প্রায় ২০টির মতো মোটরসাইকেল। আগুনে পুড়ে এগুলোর অবশিষ্টাংশ পড়ে আছে। বডি স্প্রে ও রাসায়নিক কারখানা থাকায় আগুনের ভয়াবহতা বেশি ছিল। সড়কজুড়ে বডি স্প্রে ও সুগন্ধির বোতল পড়ে থাকতে দেখা গেছে।


স্থানীয় বাসিন্দা জুবায়ের বলেন, যখন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে, তখন লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে কেউ কেউ নিরাপদে সরে যেতে পারেননি। অনেকে গাড়ির ভেতর থেকে বের হওয়ার আগেই গাড়িতে আগুন ধরে যায়, আশপাশে ভবনের আগুন লেগে অনেক দোকানি মারা গেছেন।


ইকবাল আহমেদ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, অনেকে গাড়ি থেকে বের হয়েছেন। বের হওয়ার পর আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ পাননি। অনেক রিকশা যাত্রী ও সাইকেলচালকও আগুনের কবলে পড়ে মারা গেছেন।


তিনি বলেন, বেশি মারা গেছেন রাস্তায় থাকা লোকজন। আগুন লাগার পর যারা ভবন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাস্তায় এসেছেন, তাদের অনেকে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারেননি।


বিবার্তা/শান্ত/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com