শিরোনাম
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সচেষ্ট হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:২৬
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সচেষ্ট হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং অর্থায়ন রয়েছে। আমাদের এখন কেবল প্রয়োজন সমাজের সর্বত্র ধনিক শ্রেণির ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের বিষয়ে বিশ্বনেতাদের আরো মনোযোগী হতে হবে।


শনিবার স্থানীয় সময় বিকেলে জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের (এমএসসি) ফাঁকে ‘নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন’ শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অব্যাহত উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জন্য সত্যিকার এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে সাইক্লোন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং মৌসুমী বন্যা মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সমষ্টিগত প্রচেষ্টার অঙ্গীকার হিসেবে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে ২০১২ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার অঙ্গীকারের বিষয়টি পুনরুল্লেখ করে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে কারও কোনো সামান্যতম সন্দেহ থাকার কথা নয়। যদি থাকে, তবে তারা বাংলাদেশে এসে যেন প্রকৃত অবস্থা দেখে যান। আমি তাদের হেঁটে হেঁটে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপতা দেখাতে প্রস্তুত।


শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের আরো অনেক হুমকির কারণে লাখ লাখ মানুষ পৈতৃক ভিটা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে, নদী ভাঙন, লবণাক্ত পানি এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মিশ্রণের কারণে এসব ঘটছে। বঙ্গোপসাগরে পানিতে অ্যাসিডিটি বাড়ছে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের ভূমিকা সামান্যই।


প্রতি বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়ছে এবং হাজার হাজার একর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৃষ্টিপাতে অনিয়ম ও অতিবৃষ্টি এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কৃষকের জন্য চাষাবাদ কঠিন হয়ে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে দেখা দিচ্ছে পানির সংকট।


বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নতুন রোগ-ব্যাধি বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে ম্যালেরিয়া সফলভাবে নির্মূল করা হলেও সেটি আবার ফিরে আসার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। একই ধরনের রোগ-ব্যাধি বাড়ছে খাদ্যশস্য, পশুসম্পদ ও পোল্ট্রিতে। তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজননও হুমকির মুখে পড়েছে।


জলবায়ুর এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিশ্বে চাল ও মাছ উৎপাদনে চতুর্থতম অবস্থানে রয়েছে এবং সবজি উৎপাদনে পঞ্চম ও হর্টিকালচারে শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।


তিনি বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্বের কাছে যাদুকরী পরিবেশবান্ধব পাটের আঁশ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় আমরা নিজস্ব উদ্যোগে বৈরী অবস্থায় টিকে থাকার উপযোগী শস্যের জাত উদ্ভাবন করেছি।


বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব সম্পদ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল গঠনের পাশাপাশি অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল গঠন করেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলায় জিডিপির ১ শতাংশ ব্যয় করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।


অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা ও মানবীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের মূলে যে পরিবেশ সংকট প্রধান ও একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়াবে, তা প্রশ্নাতীত। তাই জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্যে জীবনযাত্রা, আচরণ, পদ্ধতি ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।


সভায় সভাপতিত্ব করেন জার্মানির পোস্টডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট পরিচালক হানস জোয়াকিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডয়চে ভেলের চিফ পলিটিক্যাল করসপন্ডেন্ট বার্লিন ম্যালিন্ডা ক্রেনি রোর্স।


অংশ নেন নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইনে ইরিকসন, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর শেলডন হোয়াইটহাউস, গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনালের কো-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বুন্নি ম্যাকডিয়ারমিড।


বিবার্তা/মাইকেল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com