শিরোনাম
আর প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না : শেখ হাসিনা
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২৩:০৮
আর প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না : শেখ হাসিনা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটিই তার শেষ মেয়াদ। তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হবেন না। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাই এবার তিনি নতুনদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চান।


বৃহস্পতিবার জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।


ডয়েচে ভেলের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনার বিষয়ে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বর্তমানে চতুর্থ মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু এবারই শেষবার। তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হতে চান না। তিনি মনে করেন, নতুনদের সুযোগ পাওয়া উচিত।


সাক্ষাৎকারে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়েও তার অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি তা নিশ্চিতে পদক্ষেপও নিয়েছেন। বাংলাদেশ বহু বছর ধরে সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। তখন দেশ একটি মাত্র টেলিভিশন চ্যানেল চলত, যা ছিল রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি বেসরকারি খাতে টেলিভিশন চ্যানেল চালুর অনুমতি দেন।


শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গত এক দশকে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে৷ বছরে গড়ে ৬ থেকে ৭ ভাগ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে৷ বাণিজ্য বেড়েছে৷ বিদেশি বিনিয়োগও এসেছে৷


এই উন্নয়নের পরও বিশ্বব্যাংকের হিসেব বলছে, এখনো বাংলাদেশের প্রতি চার জনে একজন দরিদ্র৷ শেখ হাসিনা তার সম্ভাব্য শেষ মেয়াদে এই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইকেই অগ্রাধিকার দিতে চান৷


‘‘খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান– এসব মৌলিক চাহিদা,’’ ডিডাব্লিউকে বলেন তিনি৷ ‘‘প্রত্যেক মানুষই তার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে চায়৷ আমাদের সেটাই নিশ্চিত করতে হবে৷’’


উন্নয়ন বনাম বাক স্বাধীনতা


তবে এই উন্নয়ন দিয়ে সেসব সমালোচকের মুখ বন্ধ করতে পারেননি শেখ হাসিনা, যাদের অভিযোগ, তিনি বা তার সরকার বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন এবং মুক্তচিন্তা ও মুক্তচিন্তকদের ওপর আঘাত থামাতে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি৷


কিন্তু হাসিনা তা অস্বীকার করে বলেন, মুক্ত চিন্তাকে শতভাগ সমর্থন করেন তিনি৷ সমালোচনাও তাই স্বাভাবিক৷ তিনি বলেন, যত কাজ করবেন, তত সমালোচনা শুনবেন। আপনি আমার দেশের মানুষকে প্রশ্ন করুন, তারা সন্তুষ্ট কিনা; তাদের যা যা প্রয়োজন, সব পাচ্ছে কিনা, কিংবা আমি সব দিতে পারছি কিনা৷


তিনি৷ বলেন, এখন কোনো দল যদি তাদের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে না যেতে পারে, জনগণের বিশ্বাস, আস্থা অর্জন করতে না পারে, আর যদি ভোট না পায়, সে দায়-দায়িত্ব কার? সে তো ঐ দলগুলোর দুর্বলতা৷


মুজিবকন্যা বলেন, তাঁর নীতি নারী শিক্ষার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের চিন্তাও বদলে দিয়েছে৷ তার মতে, আগে বাবা মায়েরা চিন্তা করতেন যে, মেয়েকে পড়িয়ে লাভ কী, সে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে৷ এখন সেভাবে চিন্তা করেন না তাঁরা৷ এখন ভাবেন যে, মেয়েকে শিক্ষিত করা উচিত যেন সে নিজে উপার্জন করতে পারে৷ এরপর সে বিয়ে করবে৷ খুব ধীরে ধীরে আমরা পরিবর্তন আনছি৷ বাল্যবিবাহ এখন অনেক কমে গেছে৷


রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ


জীবনমান উন্নয়ন এবং উদারপন্থি ও মৌলবাদীদের মাঝখানে একটি রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়াও শেখ হাসিনার সরকারকে নতুন করে সাত লাখ রোহিঙ্গার দায়িত্ব নিতে হয়েছে৷ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ‘জঙ্গিবাদের’ বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের বলি হয়ে এরা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন৷


বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে কক্সবাজারের দু'টি ক্যাম্পে বেশিরভাগই খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন৷ এই মানুষের স্রোত এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলেছে৷ এদের অনেকেই স্থানীয়দের কাজ, থাকার জায়গা ও ব্যবসায় ভাগ বসিয়েছে৷


রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার হাজার হাজার শিশু-কিশোর-তরুণ যারা বেড়ে উঠছে, তাদের জন্য মধ্যবর্তী বিকল্প উপায় ভাবার চেষ্টা করছে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা দ্বীপ বেছে নিয়েছি৷ সেখানে আমরা বাঁধ দিয়েছি৷ সাইক্লোন শেল্টার ও ঘরবাড়ি তৈরি করেছি৷ আমরা তাদের সেখানে নিয়ে যেতে চাই এবং কাজ দিতে চাই৷ তাহলে তরুণ ও নারীরা অর্থ উপার্জন করতে পারবে৷


তবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়াকে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বলে মনে করেন হাসিনা৷ তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই এই দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে যেতে চায় বাংলাদেশ৷ এক্ষেত্রে ভারত ও চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভূমিকা রাখতে পারে৷


শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না৷ আমাদের সাথে একটা চুক্তিও হয়েছে যে, তারা ফেরত নিয়ে যাবে৷ চীন ও ভারতের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি এবং মিয়ানমারের সঙ্গে যে পাঁচটি দেশের বর্ডার আছে, চীন, বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড ও লাওস, আমরা সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি যে, কীভাবে এই সমস্যা সমাধানে তাদের কাজ করা উচিত৷


তিনি যোগ করেন, এটাই চাই যে, তারা মিয়ানমারকে এ কথাটি বুঝাক যে, এরা যখন মিয়ানমারে চলে যাবে, তখন তাদের যা যা সাহায্য দরকার, থাকার বাড়িঘর, তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা, এখানে যা যা দিচ্ছে, তা ওখানেই দেবে এবং তাদের একটা নিরাপত্তার ব্যবস্থাও তারা করবে৷ জাতিসংঘ এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে৷ সূত্র : ডয়চে ভেল


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com