শিরোনাম
জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৪৯
জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী
ছবি: পিআইডি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিভেদ ভুলে দেশকে এগিয়ে নিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের ঐক্যের যোগসূত্র হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতি।’


টানা তৃতীয়বার ও মোট চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিজয়ের পর আমরা সরকার গঠন করেছি। সরকারের দৃষ্টিতে দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিক সমান। আমরা সবার জন্য কাজ করব। সরকারি সেবাখাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় জীবনের সর্বত্র আইনের শাসন সমুন্নত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করব।


তিনি বলেন, একাদশ সংসদে বিরোধীদলের সদস্য সংখ্যা কম হলেও সংখ্যা দিয়ে বিচার করা হবে না। সংখ্যা যত কমই হোক, সংসদে যেকোনো সদস্যের ন্যায্য ও যৌক্তিক প্রস্তাব/আলোচনা/সমালোচনার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।


এ সময় বিরোধীদলের নির্বাচিত সদস্যদের শপথ নিয়ে সংসদে যোগদানের আহনও জানান প্রধানমন্ত্রী।


ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া পাওয়া নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবা-মা-ভাই, আত্মীয়-পরিজনকে হারিয়ে আমি রাজনীতি করছি শুধু জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তাবায়নের জন্য; এ দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। এ দেশের সাধারণ মানুষেরা যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারেন, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী হতে পারেন- তা বাস্তবায়ন করাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।’


নিজের বর্তমানকে উৎসর্গ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তরুণদের শক্তি, মেধা ও মননকে সোনার বাংলা গড়ার কাজে সম্পৃক্ত করব। আজকের তরুণরাই পারবে দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে।’


নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবীণদের অভিজ্ঞতা আর নবীনদের উদ্যম- এই দুইয়ের সমন্বয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।


দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের সমর্থন এবং সহযোগিতা চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখে যে রায় দিয়েছেন, কথা দিচ্ছি আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব সে আস্থার প্রতিদান দিতে।’


দুর্নীতিবাজদের শোধরানোর আহবান


দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কথা জানিয়ে, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শোধরানোর আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমি জানি, দুর্নীতি নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে অস্বস্তি রয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের নিজেদের শোধরানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’


আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতি উচ্ছেদ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মূল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’


দুর্নীতি বন্ধে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাই, গণমাধ্যমের সহায়তায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির কাজ অব্যাহত থাকবে।’


দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে ইতোমধ্যেই মাদক, জঙ্গি তৎপরতা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সফলতা অর্জন করেছি।’


শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ হানাহানি থাকবে না। সকল ধর্ম-বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। সকলে নিজ নিজ ধর্ম যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে পারবেন।


বৈশ্বিক প্রভাবে কিংবা স্থানীয় প্ররোচনায় কিছু কিছু তরুণ বিভ্রান্তির শিকার হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই।


'আগামী পাঁচ বছরে দেড় কোটি কর্মসংস্থান হবে'


তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী পাঁচ বছরে দেড় কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব শিক্ষিত তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।


প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে- তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা, তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা ও প্রণোদনা প্রদান, সরকারি উদ্যোগে কর্মসংস্থান পরিকল্পনা, তরুণ উদ্ভাবকদের উদ্ভাবনসমূহ আন্তর্জাতিকভাবে পেটেন্ট করার উদ্যোগ গ্রহণ, দেশ-বিদেশে কর্মে নিয়োগের জন্য কারিগরি বিষয়ে দক্ষ কর্মী তৈরি এবং কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনবল গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি কলেজ স্থাপন করা।



ইতোমধ্যে কারিগরি কলেজ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে আমরা দেড় কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।’


সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগের জন্য আসছেন।’


সারাদেশে দু’ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, পর্যটন, সেবাখাতসহ অন্যান্য খাতে প্রাতিষ্ঠানিক এবং আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।’


তরুণদের দেশের ভবিষ্যত কর্ণধার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারুণ্যের সৃষ্টিশীলতা, উদ্যম এবং শক্তির ওপর আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা ও আস্থা রয়েছে। তারুণ্য মানেই বাংলা ভাষার জন্য আত্মদান, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, আসাদ-মতিউর, নূর হোসেনদের রক্তদান।’


সূত্র: ইউএনবি


বিবার্তা/কামরুল


<<শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com