শিরোনাম
স্বাধীনতাবিরোধীদের বয়কটের প্রত্যয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:১৩
স্বাধীনতাবিরোধীদের বয়কটের প্রত্যয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ (১৪ ডিসেম্বর)। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের সহযোগিতায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীকে বেছে বেছে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা।


শহীদ বুদ্ধিজীবী ‍দিবসে রাজধানীর মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার সকাল ৭টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তারা।


শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।


সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, মন্ত্রীবর্গ শহীদ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিন বাহিনীর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। এরআগে শহীদ পরিবারের স্বজনরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর, শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু করেন সাধারণ মানুষ।


এদিকে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলতনায়তনে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। দিবসটি উপলক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।


দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।


মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের এ দেশীয় দোসর আল-বদরের সাহায্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করা হয়। পরে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের হত্যা করা হয়। এ দু’টি স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত।


মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আল-বদর বাহিনী আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আল-বদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর কবরস্থানে নিয়ে হত্যা করে।



শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ আরো অনেকে।


অনেকেই মনে করেন, একাত্তরে ত্রিশ লাখ শহীদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তারা শহীদ হন এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে। হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী তাদের পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে।



তারা স্পষ্ট দেখে চরম বিপর্যয় আসন্ন, পরাজয় একেবারেই সন্নিকটে- তখনই তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে। তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে এভাবেই অন্ধকার করার পাঁয়তারা করেছিল।


একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টদের অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হলেও বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি জড়িত চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় বিচার এখনও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।


বিবার্তা/হাসান/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com