শিরোনাম
নির্বাচনে তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র খতিয়ে দেখার নির্দেশ
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:৫৭
নির্বাচনে তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র খতিয়ে দেখার নির্দেশ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হওয়া সংঘাত ও সহিংসতার পেছনে তৃতীয় কোনো শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি না তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।


কেউ ষড়যন্ত্র করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় কি না সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।


রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচনে আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে এই সভার আয়োজন করা হয়।


সিইসি বলেন, পেছনের একটা ঘটনার রেশ টানা প্রয়োজন। সেটি হলো ২০১৪ সালের নির্বাচন। সেই নির্বাচনের অবস্থা ভুলে গেলে চলবে না। তখন ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ঘটনার আলোকে এবারের নির্বাচন প্রস্তুতির রূপরেখা ও কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন।


তিনি বলেন, তখন মাঠে সব বাহিনী ছিল। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিও ছিল। তবুও আমরা তখন কী দেখেছি! তখন তাদের উপস্থিতিতে পুলিশ সদস্য, প্রিজাইডিং অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেট নিহত হয়েছেন। শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পোড়ানো হয়েছে।


তিনি আরো বলেন, তখন সেটার কী প্রেক্ষিত ছিল, কেন আমরা সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি তা আলোচনার প্রয়োজন আজ আমি মনে করছি না। তবে সেটা আমাদের মনে রাখতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, সেই অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণের চেষ্টা করতে হবে। সে রকম কোনো পাঁয়তারা যেন না হয়, আবার যেন সেই রকম পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে, সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।



এবারো এমন কিছু ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না, উল্লেখ করে নুরুল হুদা বলেন, যেদিন প্রতীক বরাদ্দ হলো, তারপরের দিনই দুর্ঘটনা। সে ঘটনাগুলো যত ছোটই হোক না কেন, দুটো জীবন চলে গেল। সে দুটো জীবনের মূল্য অনেক। কিন্তু কেন হলো? তারপর এখানে–ওখানে ভাঙচুর, প্রতিহত করা। এগুলোর পেছনে কি রাজনৈতিক, সামাজিক কারণ? নাকি সেই ২০১৪ সালের মতো ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে? এগুলো ভালোভাবে নজরে নিতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্ক নজরদারি থাকতে হবে।


কোনো ঘটনা ঘটে গেলে একজনের দোষ আরেকজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হালকাভাবে নিলে হবে না। রাজনৈতিক নেতাদের সতর্ক অবস্থান নেয়ার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে তৃতীয় কোনো শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি সতর্ক নজরদারি রাখার অনুরোধ করব।


নুরুল হুদা বলেন, আর মাত্র ১৬ দিন পর ৩০ ডিসেম্বর। অত্যন্ত প্রত্যাশিত একটি দিন জাতীয় নির্বাচনের দিন। ওই নির্বাচনে নতুন সরকার সংসদ গঠন করবে। সে কারণে আজকে আমাদের এই অনুষ্ঠান। আনুষ্ঠানিক বৈঠক আমাদের আজকেই শেষ। এরপর আর কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে না। এর আগে প্রত্যেকটি বাহিনী, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের লোকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বিভিন্ন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।


তিনি বলেন, নির্বাচনী দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই আমরা রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করে মতবিনিময় করেছি। আমরা আজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। নির্বাচনের সামগ্রিক প্রস্তুতি, যেমন ক্রয়যোগ্য মালামাল শতকরা ৯৫ ভাগ কেনা সম্পন্ন হয়েছে। ব্যালট পেপার, ভোটকেন্দ্র, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত প্রস্তুত করা হয়েছে।


আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে সিইসি বলেন, এবারের নির্বাচনে আপনাদের দায়িত্ব জনগণের জীবন রক্ষা, মালামাল রক্ষা, দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত রাখা। আমি প্রত্যাশা করবো, পেশাদারি দায়িত্ব পালনে আপনাদের যে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও মানসিকতা তা কাজে লাগাবেন।


নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, এবার আমরা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চাই। জনগণের ভোট মাস্তানদের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না। বাক্স ছিনতাইকারীদের হাত থেকে ভোটারদের মুক্তি দিতে হবে। তার প্রথম ও প্রধান যে পদ্ধতিতে ভোট হচ্ছে, সে পদ্ধতির পরিবর্তে আরেকটি পদ্ধতি আনতে হবে।


তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন মনে করে, ইভিএম সে রকম একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ভোটারদের ভোটের নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভব হবে। আমরা ছয়টি এলাকায় ইভিএম ব্যবহার করতে যাচ্ছি। সে ছয়টি এলাকায় যার যার দায়িত্ব, তাদের অনুরোধ করব আলাদাভাবে দৃষ্টি দিতে, সতর্কতামূলক ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে।
তিনি আরো বলেন, ইভিএম সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় এ দেশের শতকরা ৮০ ভাগ অনিয়ম দূর হবে।


বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, গ্রাম পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসার বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/জাকিয়া



সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com