প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতান্ত্রিক ধারা ধরে রেখে, দেশপ্রেম আর জনগণের প্রতি ভালোবাসার কারণেই বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে বাংলাদেশ।
অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকার ব্যাপক কাজ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। যে কাজগুলো আমরা করেছি, যেন সেসব উন্নয়নকাজের ধারাবাহিকতা থাকে।
রাজধানীর শাহবাগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
পাঁচ মাস মেয়াদি এই বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে একে একে ১০৭, ১০৮, ১০৯তম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে কোর্স সমাপনী সনদ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রশিক্ষণ নেয়া নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া দিক নির্দেশনামুলক বক্তব্য সরকারপ্রধান, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেবার মনোভাব নিয়ে সততা সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালনের তাগিদ দেন। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ মাদক, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা দেখতে চান তিনি।
দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়নের কারণেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশে দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে সফলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ৩২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন দিয়ে সরকারের কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। এখন আমরা ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। দেশের ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি, প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালবো।
বিগত পাঁচ বছরের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকার ব্যাপক কাজ করেছে।
২০২১, ২০৪১, ২০৭১ ও ২১০০ সাল টার্গেট করে সরকারের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বয়স এখন ৭২ বছর। ২০৪১ সাল পর্যন্ততো বাঁচবো না। তবে সে পর্যন্ত দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যে নেতৃত্ব, তারা এখানেই (প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারীরা) প্রস্তুত। সবার প্রতি আহবান থাকবে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষকে ভালোবেসে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কার্যক্রম আর দুর্নীতি করে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, আগামীতে এ ধরনের ঘটনা রোধে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কেবল ২০০১ সালেই সুন্দরভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৪ সালের সময় নির্বাচন ঠেকাতে বিরোধীদের জ্বালাও-পোড়াও এবং অগ্নিসন্ত্রাসে প্রায় ৩৯০০ জন আহত ও ৫০০ জন মারা যায়। আমরা চাই না এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক।
শেখ হাসিনা বলেন, তবু এসব প্রতিকূলতাকে জয় করে আমরা সরকার গঠন করেছি বলে দেশের মানুষের কাছে আজ উন্নয়ন দৃশ্যমান।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, আমরা কর্মকর্তাদের কথা বিবেচনা করে তারা যেন সুখে-শান্তিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতে পারে সে বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১২৩ ভাগ বেতন বৃদ্ধি করেছি, যা পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের নজির নেই।
তিনি বলেন, আগে প্রশাসনে প্রমোশন পদ্ধতিতে প্রচণ্ড জটিলতা ছিল। এখন সে জটিলতা কেটে গেছে। আমরা ক্ষমতায় থাকার সময় যেভাবে পদোন্নতি দিয়েছি অতীতের কোনো সরকার এভাবে পদোন্নতি দিতে পারেনি।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তারা হলেন ২০৪১ সালের সৈনিক। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে-এটা আপনাদেরই নির্মাণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা যখন বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করবেন তখন কোন জেলায় কী উৎপাদন হয় বা কোন ফসলের সম্ভাবনা বেশি তার প্রতি গুরুত্ব দেবেন। আপনারা নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করলে বাংলাদেশে এগিয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। এদেশের জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন দেয়া হয়। আপনারা যখন যে জায়গায় দায়িত্ব পালন করবেন, যে জেলায় কাজ করবেন, সেখানকার জনগণকে মূল্যায়ন করবেন। সেখানকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশের উন্নয়ন করবেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর মোশাররফ হোসেন।
প্রধানমন্ত্রীকে বই ও শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করেন রেক্টর মোশাররফ হোসেন।
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]