রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাত ১১টার দিকে উত্তরার একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি অরিত্রির শ্রেণি শিক্ষক ছিলেন।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার খন্দকার নুরুন্নবী বলেন, গ্রেফতারের পর তাকে ডিএমপির ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।
ডিবি পূর্ব বিভাগের (মতিঝিল) সহকারী কমিশনার আতিক জানান, শিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার বিকেলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে র্যাব ও পুলিশকে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তিন শিক্ষক হলেন- ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আখতার ও অরিত্রীর শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা।
এরও আগে মঙ্গলবার রাতে পল্টন থানায় ওই তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী। পরে বুধবার বিকেলে ওই মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, বুধবারের (৫ ডিসেম্বর) স্থগিত বার্ষিক পরীক্ষা শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) এবং বৃহস্পতিবারের (৬ ডিসেম্বর) পরীক্ষা ১১ ডিসেম্বর নেয়া হবে। এছাড়া আগামী রবিবার থেকে স্কুল-কলেজের ক্লাস স্বাভাবিক হবে। এসব বিষয় সব অভিভাবক-শিক্ষার্থীকে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আগামী দুই বা তিন দিনের মধ্যে নতুন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হবে। যোগ্য শিক্ষকদের নামের তালিকা করে গভর্নিং বডির সভায় তোলা হবে। সবার সম্মতিতে নতুন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নিয়োগ দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, রবিবার পরীক্ষা চলার সময় অরিত্রির কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। সে নকল করছে, এমন অভিযোগে সোমবার মা-বাবাকে ডেকে পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ সময় তাকে ও তার মা-বাবাকে অপমান করেন এক শিক্ষক। এছাড়াও অরিত্রিকে ছাড়পত্র নিয়ে যেতে বলা হয়। এরপর বাড়ি এসে অরিত্রি সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়নায় ফাঁস দেয়।
অরিত্রিদের শান্তিনগরের বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসকেরা অরিত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মঙ্গলাবার সকালে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে।
এ ঘটনায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত সব পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আন্দোলনরত ছাত্রীরা। একইসাথে বুধবার সকাল থেকে কলেজ ফটকে অবস্থান নেয় তারা।
এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রি আত্মহত্যার ঘটনায় অধ্যক্ষসহ ৩ শিক্ষককে বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলার নির্দেশ ও এমপিও বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এই নির্দেশের পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা ও প্রভাতি শাখার প্রধান শিক্ষক জিনাত আরাকে বরখাস্ত করা হয়। তাদের এমপিও বাতিল করা হয়েছে। ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণের কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
বিবার্তা/খলিল/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]