শিরোনাম
সোশ্যাল মিডিয়ায় চালানো অপপ্রচার বিশ্বাস করবেন না: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৪৯
সোশ্যাল মিডিয়ায় চালানো অপপ্রচার বিশ্বাস করবেন না: প্রধানমন্ত্রী
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেউ ধর্মের অবমাননা করলে কিংবা ধর্ম নিয়ে অপপ্রচার চালালে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে।


তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়, এই অপপ্রচারে কেউ বিশ্বাস করবেন না। এই অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য ইতিমধ্যে সাইবার ক্রাইম আইন তৈরি করা হয়েছে। কেউ যদি এই ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার করে, সঙ্গে সঙ্গে সেই আইন দ্বারা তাদের বিচার করা হবে, গ্রেফতার করা হবে।


ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রবিবার কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থা ‘হাইআতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমি বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে শুকরানা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলের প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।


তিনি বলেন, আমাদের ধর্ম ইসলাম ধর্ম। নবী করিম (সা.) সম্পর্কে কেউ কোনো কথা বললে আইন দ্বারাই তার বিচার হবে। আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেব না, আইনের দ্বারাই তাদের বিচার করে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেব যাতে কখনো তারা এ ধরনের অপপ্রচার চালাতে না পারে।


কওমী সনদের স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্য কেউ ক্ষমতায় এসে যেন কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীছের সনদের মাস্টার্সের মর্যাদা কেড়ে নিতে না পারে সেজন্যই আইন করা হয়েছে। কেউ এই স্বীকৃতি কেড়ে নিতে পারবে না।


তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম মানুষকে শান্তির পথ দেখায়। আর সেই দ্বীনি শিক্ষা যারা গ্রহণ করছেন তারা কেন অবহেলিত থাকবেন। তাদের কখনো অবহেলিত থাকতে দেয়া যায় না। যারা এতিমদের শিক্ষা দেয় তাদের স্বীকৃতি দেবো না এটা তো হতে পারে না। সেজন্যই আপনাদের প্রস্তাব অনুযায়ী আমরা কওমি শিক্ষার দাওরায়ে হাদিস সনদকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতি দিয়েছি।


তিনি আরো বলেন, আমরা মসজিদের ইমামদের ভাতা দিচ্ছি। বাংলাদেশের ৮০ হাজার আলেম-ওলামা ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ হচ্ছে। এসব মসজিদে ইসলামী কালচারের ব্যবস্থা থাকবে। এখানেও অনেক আলেম-ওলামার কর্মসংস্থান হবে। আমি হযরত মোহাম্মদ (স.) এর পথ অনুসরণ করি। আল্লাহর যা কিছু সৃষ্টি, আল্লাহর নবী যে শিক্ষা দিয়েছেন সেই শিক্ষা নিয়ে পথ চলি এবং চলবো। কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়, সকলের প্রতি রইলো আমার শুভ কামনা।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের শান্তি বিঘ্নিত হোক, তা আমরা চাই না। দেশে শান্তি থাকলেই উন্নতি হবে। উন্নতি থাকলে, সবাই লাভবান হবে। আপনারা আমাদের উন্নতি দেখেছেন। তৃণমূলে গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত উন্নয়ন করা হয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশে কোনো মানুষ ভিক্ষা করবে না। প্রত্যেক মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করব। প্রতিবন্ধী, অসুস্থদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, তাদের জন্য বিনা পয়সার খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।


প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিদের সংসর্গ যাতে না লাগে সেজন্য কওমি ছাত্রদের উদ্দেশে পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমরা আল্লাহ ও নবী (স:) এর শিক্ষা নিয়ে পথ চলবো। আজ বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি। অথচ অস্ত্র বেচে যারা তারা লাভবান হয়, আর রক্ত যায় মুসলমানদের। এই কথাটি আমি ওআইসির (ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা) সেক্রেটারির কাছেও তুলে ধরেছি। আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বিরোধী সম্মেলন করেছিলাম জাতিসংঘে, তখনো এই কথাটি বলেছি।


বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদের স্থান হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোনো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতির স্থান হবে না। বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হবে। সামান্য কয়েকটা লোক আমাদের ধর্মের (ইসলাম) নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে ইসলাম ধর্মের বদনাম দেয়।


তিনি আরো বলেন, আমি যখনই কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যাই, কেউ যদি বলে ইসলামি টেররিস্ট, আমি সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি জানাই। বলি, এটা বলতে পারবেন না। কারণ সবাই এই টেরোরিজমে বিশ্বাস করে না বা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। যারা সন্ত্রাসী তাদের কোনো ধর্ম নেই, দেশ নেই, কোনো সমাজ নেই তারা হচ্ছে সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী। যারা সত্যিকার ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে, তারা কখনো সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী হতে পারে না।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবার কাছে শিখেছি, আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথা নত করি না। আল্লাহকে মানি, ধর্মকে বিশ্বাস করি। বারবার আমার ওপর আঘাত এসেছে। আল্লাহই রক্ষা করেছেন। আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। মরা-বাঁচা আল্লাহর হাতে। যেদিন তিনি নিয়ে যাবেন সেদিন কেউ ঠেকাতে পারবে না। তবে এটুকু চাই যে, আল্লাহর রহমতে যেন মান-সম্মান নিয়ে যেতে পারি।


প্রধান অতিথির বক্তব্যের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলেম-ওলামাদের কাছে তার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া চান। সামনে নির্বাচন, এ উপলক্ষে সবার কাছে দোয়া চান। তিনি বলেন, আমি সব সময় আল্লাহর ওপর ভরসা করি। আল্লাহ যদি খেদমতের সুযোগ দেন তাহলে আবারও আসবো। না হলে আফসোস নেই।


কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে আইন পাস করায় প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে এ মাহফিলের আয়োজন করে কওমির ছয় বোর্ডের সমন্বিত সংস্থা হাইআতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমি বাংলাদেশ।


এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলেমদের সম্মান দিতে জানেন। এদেশে কোনো সরকার আলেমদের যেই স্বীকৃতি দেয়নি, শেখ হাসিনার সরকার তা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শুধু বাংলাদেশের নেতা নন। তিনি বিশ্বনেতা। তিনি মানবতার জননী। তাই তো নির্যাতিত নিপীড়িত রোহিঙ্গা মুসলিমদের এদেশে আশ্রয় দিয়েছেন।


সকাল ৯টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শোকরানা মাহফিল শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী। প্রধানমন্ত্রী সমাবেশ স্থলে এলে তাকে স্বাগত জানান কওমি মাদ্রাসার শীর্ষ আলেমরা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আলেমদের সঙ্গে সালাম বিনিময় করেন।


প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কওমী আলেমদের আগমনে জনসমুদ্রে পরিণত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। আলেমরা মুহূর্মুহূ স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। দীর্ঘদিনের দাবি বঙ্গবন্ধু কন্যা পূরণ করায় সবাই খুশি।


অনুষ্ঠান মঞ্চে কওমি আলেম ওলামাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/জাকিয়া


>>প্রধানমন্ত্রীকে এবার ‘কওমি জননী’ উপাধি দেয়া হলো


>>শোকরানা মাহফিলে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী


>>সোহরাওয়ার্দীতে আলেমদের ঢল, শাহবাগজুড়ে কড়া নিরাপত্তা


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com