শিরোনাম
জেলহত্যা দিবস: যে শোক ভুলবার নয়
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০১৮, ২২:১৯
জেলহত্যা দিবস: যে শোক ভুলবার নয়
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

৩ নভেম্বর, শনিবার জেলহত্যা দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি বেদনাবিধুর কালো দিন। ১৯৭৫ সালের এ দিনে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে কারাপ্রকোষ্ঠে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকেরা।


বাঙালি জাতির মুক্তির ইতিহাসে এই মহান নেতাদের অবদানের কথা স্বল্প পরিসরে বলা সম্ভব নয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৬৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে দলের প্রথম সহ-সভাপতি, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী অন্যতম সহ-সভাপতি, তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।


১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালো রাতে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী গ্রেপ্তার করে। নেতার অনুপস্থিতিতেও বিভ্রান্ত না হয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্র ও পুনর্বাসনবিষয়ক মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান সাফল্যের সঙ্গে তাঁদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাঁরা।


এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত খন্দকার মোশতাক আহমেদ নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন। তার নেতৃত্বে ষড়যন্ত্রকারীরা জাতীয় এই চার নেতাকে তার সরকারে যোগদানের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তাঁরা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এ কারণে তাঁদেরকে গ্রেফতার করে ২২ আগস্ট কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে ৩রা নভেম্বর খন্দকার মোশতাক আহমাদের প্ররোচনায় এক শ্রেণীর উচ্চাভিলাসী মধ্যম সারির জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা তাঁদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যাকারীরা শুধু গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাঁদের মৃত্যু নিশ্চিত করে।


জেল হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জেলহত্যা মামলার প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করে। এর দু বছর পর ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর এ হত্যার সাথে জড়িত ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ বিচারকাজ চলার পর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়।



রায়ে চার নেতা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০ আসামির মধ্যে ১৫ জনের সাজা হয়। এর মধ্যে ৩ সাবেক সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। অন্যদিকে মামলার তদন্তে পাওয়া হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মরহুম কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, নূরুল ইসলাম মঞ্জুর এবং মেজর (অব.) খায়রুজ্জামানসহ ৫ জনকে খালাস ঘোষণা করা হয।


পরবর্তীতে এ রায় পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযুক্ত হয়। জাতীয় চার নেতার স্বজনরা সাক্ষ্য-প্রমাণের বাইরে গিয়ে দেয়া ওই রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এরই প্রেক্ষিতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ঘোষণা করে, জেলহত্যা মামলার পুনর্বিচার এবং খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।


বিবার্তা/হুমায়ুন/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com