শিরোনাম
সমাপ্ত হলো দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ১০:১৮
সমাপ্ত হলো দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দশম জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশন সোমবার শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের অধিবেশন সমাপ্তি সম্পর্কিত ঘোষণা স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পাঠের মাধ্যমে অধিবেশন শেষ হয়।


এর মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দশম জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনেরও সমাপ্ত হলো।


দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সে থেকে এ পর্যন্ত এ সংসদের মোট ২৩টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ ২৩টি অধিবেশনে মোট ৪১০টি কার্যদিবস অতিবাহিত হয়েছে। এসব অধিবেশনে সর্বোচ্চ ১৯৩টি বিল পাস হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই আইনে পরিণত হয়ে কার্যকর হয়েছে।


এর আগে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাপনী ভাষণ দেন। এছাড়া বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খানন মেনন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী সমাপনী বক্তব্য দেন।


দশম জাতীয় সংসদের সমাপনী অধিবেশনে স্পিকার সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে আলোয় উদ্ভাসিত সমৃদ্ধ আগামীর পথ রচনার মধ্য দিয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন।


ড. শিরীন বলেন, দশম জাতীয় সংসদ সফলভাবে পূর্ণ মেয়াদ পূরণ করায় এক অনন্য সোপান রচনা করেছে। এ সংসদে সরকারি ও বিরোধীদল সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এতে সংসদীয় গণতন্ত্র সুদৃঢ় হয়েছে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সুনিশ্চিত হয়েছে।


তিনি বলেন, সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিক-নির্দেশনা, পরামর্শ দশম জাতীয় সংসদ সাফল্যের সাথে পূর্ণ মেয়াদ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে সংসদ কার্যকর ভূমিকা রাখতেও সক্ষম হয়েছে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিবাদন জানান।


তিনি আরো বলেন, বিরোধীদলের নেতা হিসেবে বেগম রওশন এরশাদ এ সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সংসদ বর্জন করার মতো কোনো ঘটনা জাতি প্রত্যক্ষ করেনি। বরং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে সংসদকে কার্যকর করতে সহায়তা করেছেন।


স্পিকার বলেন, সংবিধানের আলোকে জাতীয় সংসদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখা, স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত রাখা। দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, দেশের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে হবে। সাথে সাথে আইনের শাসনকে সমুন্নত রেখে গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে উন্নয়নের কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সকলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য ও সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।


স্পিকার সংসদের ২৩তম অধিবেশন পরিচালনায় সহযোগিতা করায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদ উপনেতা, চিফ হুইপসহ হুইপগণ, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, সকল সংসদ সদস্য, ডেপুটি স্পিকার ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, মিডিয়া কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।


দশম জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশন ২১ অক্টোবর শুরু হয়। মোট আট কার্যদিবসের এ অধিবেশনে ১৯টি সরকারি বিল পাস হয়। এর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮, সড়ক পরিবহন বিল ২০১৮সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল রয়েছে।


আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি কার্যপ্রণালী বিধির ৭১ বিধিতে ১৫৪টি নোটিশ পাওয়া যায়। নোটিশগুলো থেকে তিনটি গৃহীত নোটিশের মধ্যে একটি আলোচিত হয়। এছাড়া ৭১ (ক) বিধিতে দুই মিনিটের আলোচিত নোটিশের সংখ্যা ছিল ৪৫টি।


এছাড়া এ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক ও উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদানে ‘ইন্টার প্রেস সার্ভিস নিউজ এজেন্সি, ইউএন থেকে ‘হিউম্যানিটেরিয়ান এ্যাওয়ার্ড’ এবং গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন থেকে ‘স্পেশাল ডিস্টিংকশন এ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ’ সম্মাননা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়।


দশম জাতীয় সংসদে কার্যপ্রণালীর বিধির ১৪৭ বিধি অনুযায়ী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে ১৬টি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়।


এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরদানের জন্য সর্বমোট ৫৯টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। তার মধ্যে তিনি ১৫টি প্রশ্নের উত্তর দেন। মন্ত্রীদের জন্য আনা ৯২৪টি প্রশ্নের মধ্যে ৫৯২টি প্রশ্নের জবাব দেন।


সমাপনী ভাষণের পর স্পিকার দশম জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করেন।


আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে একাদশ সংসদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে এরই মধ্যে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।


সংসদের দুই অধিবেশনের মধ্যে ৬০ দিনের বিরতি থাকবে না, এমন বিধান রয়েছে। তবে সংসদের মেয়ার পূর্তির শেষ ৯০ দিনের মধ্যে এই বাধ্যবাধকতা থাকবে না। সেই হিসেবে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে জরুরি প্রয়োজন না হলে সংসদ বসছে না।


অন্য যে কোনো সংসদের চেয়ে নবম সংসদে বিরোধী দলের বর্জন ছিল রেকর্ড পরিমাণ। ওই সংসদে বিরোধী দল অনুপস্থিত ছিল ৩৪২ কার্যদিবস, উপস্থিত ছিল ৭৬ কার্যদিবস।


দশম সংসদের বিরোধী দল কোনোদিনই বর্জন করেনি। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সংসদে ছিলেন ২৪২ কার্যদিবস। গত নবম সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন ১০ কার্যদিবস।


দশম সংসদে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন ৩৩৮ কার্যদিবস।


এই পুরো সংসদে সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি কুমিল্লার দুজন সংসদ সদস্যের। তারা হলেন আওয়ামী লীগের আলী আশরাফ ও সুবিদ আলী ভূইয়া। তারা দুজনই গত ২২তম অধিবেশন পর্যন্ত ৩৭৮ কার্যদিবস সংসদে উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com