শিরোনাম
শের-ই বাংলার ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী আজ
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৪৩
শের-ই বাংলার ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী আজ
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ২৬ অক্টোবর, অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও বাংলার বাঘ খ্যাত শের-ই বাংলা একে ফজলুল হকের ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৭৩ সালের এই দিনে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়ার মিয়া বাড়িতে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ওয়াজেদ আলী একজন প্রখ্যাত আইনজীবী ছিলেন এবং মাতা বেগম সৈয়েদুন্নেছা ছিলেন একজন গৃহিনী।


শের-ই বাংলার জন্মস্থানে তাঁর বহু জন্মস্মৃতি থাকলেও তা এখন বিলুপ্ত প্রায়। অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে শের-ই বাংলার জন্মভবনটি। তার জন্মের প্রায় দেড়শ বছর কেটে গেলেও অবহেলা ও অযত্নে পড়ে রয়েছে তার জন্মস্থান।


ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া মিয়াবাড়ির মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের স্বপ্নদ্রষ্টা শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। এ মহান নেতার জন্মগৃহ এবং তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি আজও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটক এখানে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সাতুরিয়া গ্রামের শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের জন্মভবনটি প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণার প্রায় ৭ বছর হলেও সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়নি। নামে মাত্র ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন ও আতুরঘরটি ছাদ সংস্কার হলেও অযত্ন আর অবহেলার মধ্যে পড়ে রয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রবক্তা ও বাংলার অবিসংবাদিত এ নেতার বিভিন্ন স্মৃতি চিহ্নগুলো। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা।


তথ্য মতে, এ দিন মধ্যরাতে ‘বাংলার বাঘ’ জন্ম নেন সাতুরিয়ার নানাবাড়িতে। বাড়িটি ‘সাতুরিয়া মিয়াবাড়ি’ নামে পরিচিত। শেরে বাংলার শৈশব ও কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে এ গ্রামে। এখানকার একটি মক্তবে তিনি লেখাপড়া করেন। যে পুকুরে তিনি সাঁতার কাটতেন তা আজও বিদ্যমান। ১৯৪১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাতুরিয়া এমএম হাই স্কুল। এক সময় তিনি সাতুরিয়াকে রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করেন। এছাড়াও সাতুরিয়ায় ছড়িয়ে রয়েছে তার অনেক স্মৃতি। মহান এ নেতার জন্ম নেয়া ভবনসহ মোঘল আমলে নির্মিত আরও কয়েকটি ভবন এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে অধিকাংশই জরাজীর্ণ। দীর্ঘদিন সংষ্কার করা হয়নি। ইমারতগুলো যে কোন মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে অনেক স্মৃতিচিহ্ন হারিয়েও গেছে।


এক সময়ে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের কর্নধার, কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মূখ্য মন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি একাধিক বার সাতুরিয়ায় এসেছিলেন। তার ছেলে মরহুম একে ফাইজুল হক ও বাংলাদেশের মন্ত্রী ছিলেন। অথচ শেরে বাংলার জন্ম ভিটা এবং সাতুরিয়ায় তার নিজের প্রতিষ্ঠিত স্কুলটিও আজ জরার্জিণ। জন্ম ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তার মাতুল বংশধররা। স্কুলটিতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। বহুবার এখানে একটি যাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হলেও এ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।


বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজাপুরের সাতুরিয়ার মিয়া বংশের জমিদার বাড়ি এটি। এ বাড়িতেই জন্মেছিলেন শের-ই বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক। শৈশবের বেশির ভাগ সময় তিনি কাটিয়েছেন তাঁর এই মামার বাড়িতেই। এখানে ঘাট বাঁধানো পুকুরে গোসল করা, পাশের নদীতে সাঁতার কাটা, গাছ থেকে বাদাম পেড়ে খাওয়াসহ অনেক স্মৃতি পড়ে আছে এই বাড়িতে।


তবে তাঁর জন্মস্থান সাতুরিয়ায় মিয়া বাড়ির সেই দালান সংস্কার বিহিন পরে আছে। মাত্র কয়েকবছর আগেও শের-ই বাংলার ব্যবহৃত বহু আসবাবপত্র এই বাড়িতে পড়ে থাকতে দেখা গেলেও মূল্যবান ওইসব জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। এমনকি তাঁর প্রতিষ্ঠিত সাতুরিয়া এম এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিও বেহাল দশা। ভবন বেঞ্চ সংকটসহ শিক্ষা ব্যবস্থার নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে এই প্রতিষ্ঠানটি।


শের-ই বাংলার বাল্যকালের শিক্ষাজীবন কেটেছে রাজাপুরের সাতুরিয়ায়। শিক্ষা জীবন শেষে শের-ই বাংলা রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রাখেন। এবং রাজনীতিতে তিনি সফলতা লাভ করেন। তিনি অভিবক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে অগণিত খেটে খাওয়া মানুষের জমিদারদের করাল গ্রাস থেকে দিয়েছেন মুক্তি। এছাড়া তিনি অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেন। যার ফলে বাঙালী জাতি আজ শিক্ষার আলো দেখতে পেয়েছে।


শের-ই বাংলার জন্মস্থান ও তার জন্মস্মৃতি দেখতে দূর দূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ন বহু পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। তবে তারা হতাশ হয়ে ফিরে যান তার জন্মস্মৃতি আর জরাজীর্ণ ধ্বংসস্তুপ দেখে।


নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা এখানে বেড়াতে আসেন শের-ই বাংলার জীবন ইতিহাস সম্পর্কে দেখতে শুনতে আর জানতে। এখানে ঘুরতে আসা পর্যটক রুমানা পিয়া বলেন ‘আমরা দূর দূরান্ত থেকে এখানে ঘুরতে আসি শের-ই বাংলার জীবন সম্পর্কে এবং তার ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য। কিন্তু এখানে এসে এই মহান নেতার জন্ম স্থানের জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে আমাদের হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।’


স্থানীয়সহ দূর দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকদের দাবী এখানে শের-ই বাংলার নামে একটি স্মৃতি জাদুঘর ও একটি লাইব্রেরিসহ তার জন্মভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।


রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা বেগম পারুল বলেন, ‘শের-ই বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হকের জন্মস্মৃতি রক্ষা এবং ওখানে জাদুঘর নির্মান করা হবে। প্রতœতত্ব অধিদপ্তরে সকল কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। ভবনের আতুরঘরটি ইতোমধ্যেই সংস্কার করা হয়েছে এবং ভবনটির বাহিরে স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য কাজও করা হবে।


উল্লেখ্য, এত বছর পরে প্রত্নতত্ব বিভাগ একটু নজর দিয়েছেন, ভবনের যে রুমটিতে শের-ই বাংলা জন্ম গ্রহন করেছিলো সেই আঁতুরঘরের ভিতরটার কিছু অংশ এক বছর পূর্বে সংস্কার এবং ভবনের বাহিরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করেছে যাহাতে তার জীবনী সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে।


বিবার্তা/আমিনুল/কামরুল


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com