প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগুনে দগ্ধ কাউকে চিকিৎসার জন্য যেন আর বিদেশ যেতে না হয় সেই ব্যবস্থা করছি। এখন থেকে দগ্ধ রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দেশেই হবে।
তিনি বলেন, এজন্য বাইরে থেকে উন্নত যন্ত্রপাতি আনার পাশাপাশি ডাক্তার ও নার্সদের বাইরে বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। দেশে চিকিৎসাসেবার মান উন্নত করতে যা যা করা দরকার আমরা তা করছি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) প্রাঙ্গণে বুধবার দুপুরে ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। ৫০০ শয্যার এই ইনস্টিটিউটে বিশ্বের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু আগুনে পোড়া রোগী নয়, যে কোনো রোগীর চিকিৎসার জন্য সব ব্যবস্থা করছি। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা একান্ত কাম্য। সেই লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।
পুড়ে যাওয়া মানুষের চিকিৎসায় ঢামেকের বার্ন ইউনিটের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে এবং ২০১৫ সালে সরকার উৎখাতের নামে হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, পেট্রোল বোমা মারা হয়েছে গাড়িতে। আগুন দিয়ে রেল পুড়িয়েছে, লঞ্চ পুড়িয়েছে, ৫৮২টি স্কুল পুড়িয়েছে। এখনো সেই পোড়া ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ।
তিনি আরো বলেন, আমরা গড়ে তুলি, বিএনপি-জামায়াত ধ্বংস করে। তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে সে সময় পোড়া মানুষগুলোকে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। আগুনে পুড়ে ৫০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। যারা গাড়ি-ব্যবসা হারিয়েছে, তাদের সাধ্যমতো সাহায্য করেছি। আহতদের অনেককে বিদেশ থেকেও চিকিৎসা করিয়ে এনেছি।
প্রধানমন্ত্রী বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ও নার্সদের বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই, আমাদের বার্ন ইউনিটে সীমিত শক্তি থাকা সত্ত্বেও যেভাবে কষ্ট করে সবাই, তাদের চিকিৎসা করেছে এবং এখনো অনেকের চিকিৎসা কিন্তু করতে হচ্ছে। অনেকে এখন কোনো কাজ করে খেতে পারে না। কাজ করবার ক্ষমতা তাদের নাই। সে ক্ষমতা হারিয়েছে ফেলেছে। এখন পর মুখাপেক্ষী হয়ে দিন কাটাচ্ছে। আমি আমার সাধ্যমতো তাদের সাহায্য করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, পুরান ঢাকার নিমতলীতে যখন আগুন লাগে তখন বিষয়টি প্রয়োজন হয়ে পড়লো। আমরা দেখলাম প্রায়ই মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয় কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা সেবা তারা পায় না।
দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ পুড়িয়ে কোনো আন্দোলন হোক, আর চাই না। অতীতে জনগণ তাদের প্রতিরোধ করেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিরোধ করেছে। ভবিষ্যতেও সরকার যা যা পদক্ষেপ নেয়ার নেবে। কেউ যেন ভবিষ্যতে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে না পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেশি কিন্তু ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা কম। সে কারণে ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমরা তাদের বাইরে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিটি জেলার হাসপাতালগুলোকে উন্নত করার চেষ্টা করছি। সেখানেও বার্ন ইউনিট তৈরি করার চেষ্টা করছি। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন তৈরি করে দিচ্ছি। এর জন্য যা যা যন্ত্রপাতি ক্রয় করা দরকার, তা আমরা করে দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বার্ন ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের দ্বিতীয় মেয়াদের ৫ বছর সময় প্রায় শেষ। আগামী নির্বাচনে যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে বাকি কাজ শেষ করতে পারব। আর যদি ভোটে না আসতে পারি তাহলে তাহলে বার্ন ইউনিটের মতো কর্যক্রম যেন থমকে না যায়। এর উন্নয়ন অগ্রগতি আপনারা অব্যাহত রাখবেন।
এছাড়া অতি দ্রুত এই ইনস্টিটিউটের কাজ সম্পন্ন করায় যারা সাহায্য করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
আর্থ-সামাজিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল, ১০ বছর হয়ে গেল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আজ বাংলাদেশের মানুষের জীবনে সত্যিই একটা পরিবর্তন এসেছে।
উন্নত বাংলাদেশের কামনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে, প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম শহরে উন্নীত হবে। গ্রামের মানুষ নাগরিক সুবিধা পাবে, শহরের সুবিধা পাবে। সবদিক থেকে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে দেশের জনগণকে নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, অনেক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে এসব উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা যাবে। গত ১০ বছরে স্বাস্থ্য খাতকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। দেশের মানুষ উপকার পাচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন ও মেজর জেনারেল মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সিরাজুল হক খান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি স্মারক উপহার দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনালে আজিজ আহমেদ।
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]