শিরোনাম
তারেকের পূর্ণ সমর্থনে হামলাকারীরা কাজ করে : মুফতি হান্নান
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৩০
তারেকের পূর্ণ সমর্থনে হামলাকারীরা কাজ করে : মুফতি হান্নান
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) প্রধান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম হোতা মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে জানায়, বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান ও পলাতক তারেক রহমানে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে তারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায়।


জবানবন্দিতে মুফতি হান্নান জানায়, তারেক জিয়া আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেয়।


সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে সিলেটে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যা চেষ্টা মামলায় সর্বোচ্চ আদালত মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং পরে তা কার্যকর হয়।


ইতিহাসের জঘন্যতম, বর্বরোচিত ও নৃশংস ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হামলায় ১৩ আসামি ১৪টি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এর মধ্যে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি নেতা হাফেজ মাওলানা মুফতি হান্নান দু’টি জবানবন্দি দেয়।


মুফতি হান্নানের জবানবন্দি, ‘২০০১ সালের অক্টোবরে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। তখন বিএনপির সাথে আমাদের সাথে সংগঠনের স্বার্থে সম্পর্ক আরো জোরদার করার লক্ষ্যে হরকতের আমীর মাওলানা আবদুস সালাম, শেখ ফরিদ, মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বক্কর, জাহাঙ্গীর বদর একত্রে চট্টগ্রামে বিএনপির এমপি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও কুমিল্লার মুরাদনগরের এমপি কায়কোবাদের সাথে যোগাযোগ করে। তারা আমাদের আমীর মাওলানা আ. সালামসহ তাদের সঙ্গে দেখা করে।


১৯৯৬ সালের যে ৪১ জন ধানখালীতে গ্রেফতার ছিল তাদেরকে হাইকোর্ট থেকে জামিনের ব্যবস্থা করে দেয়। এইভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত থাকে এবং আমরা তাদের সহায়তাও পেয়ে আসতে থাকি। ২০০৩ সালের শেষের দিকে আমাদের আমীর মাওলানা আবদুস সালাম, শেখ ফরিদ, মাওলানা তাজউদ্দিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সাথে যোগাযোগ করে। যোগাযোগের মাধ্যমে তারা বাবর সাহেবের বেইলি রোডের সরকারি বাসায় যায়। সেখানে উপস্থিত জিকে গাউস, আরিফুল ইসলাম আরিফ (কমিশনার), ইয়াহিয়া (মাওলানা), আবু বক্কর, ওরফে আবদুল করিম (মৌলভীবাজার ও বড়লেখা) উপস্থিত ছিল। এ সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম।


সেখানে আমীর সাহেবের সাথে কথা বলে এবং জিকে গাউস ও আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (এখন) এদেরকে সিলেটের কাজের ব্যাপারে বলে এবং স্থানীয়ভাবে কাজের জন্য হুকুম দেয়। সেখানে স্থানীয় বিএনপি ও হরকতের লোক দ্বারা বিভিন্ন জায়গায় গ্রেনেডের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটায়।


পরে ২০০৪ সালের প্রথম দিকে হরকাতুল জেহাদের একটি মিটিং হয় সেখানে উপস্থিত ছিল আমাদের আমীর মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, হাফেজ হাজাঙ্গীর বদর (জান্দাল)। ওই মিটিং হয় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডস্থ দারুল আরকান মাদ্রাসার (হরকতের অফিস) দোতলায়। ওই মিটিংয়ে আবুবক্কর ও ইয়াহিয়াও উপস্থিত ছিল। তারা মিটিং করে কিভাবে তারেক জিয়া ও বাবরের সঙ্গে কি কথা বলা যায় তা নিয়ে।


আমরা পরে মোহাম্মদপুর সাত মসজিদে মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা তাজউদ্দিন, কাশ্মিরী নাগরিক আবদুল মাজেদ বাটসহ একত্রে পরামর্শ করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা করি। মাওলানা তাজউদ্দিন গ্রেনেড সরবরাহ করার দায়িত্ব নেয়। তাজভাই উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর আমাদের সাহায্য করবে মর্মে জানায় এবং তারেক জিয়ার সাথে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত হয়।


এরপর একদিন (তারিখ ও সময় মনে পড়ছে না) মুরাদনগরের এমপি কায়কোবাদ সাহেব আমাদেরকে হাওয়া ভবনে নিয়ে গিয়ে তারেক জিয়া ও হারিছ চৌধুরী সাহেবদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমরা আমাদের কাজ কর্মের জন্য তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা চাইলে তারেক জিয়া আমাদের সর্ব প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। এরপর আমরা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যার জন্য মোহাম্মদপুরসহ আরো কয়েক জায়গায় গোপন মিটিং করি।


আমরা ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে সিলেটে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ঢাকার মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভার সংবাদ জানতে পারি। সেখানে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পুনরায় তারেক জিয়ার সাথে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হয়। আমি, মাওলানা আবু তাহের, শেখ ফরিদ, মাওলানা তাজউদ্দিন আল মারফাজুলের গাড়িতে করে মাওলানা রশিদসহ হাওয়া ভবনে যাই। সেখানে হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামের মুজাহিদ ব্রিগেডিয়ার রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার আবদুর রহিমকেও উপস্থিত পাইছি, কিছুক্ষণ পর তারেক জিয়া আসেন। আমরা তাদের কাছে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর হামলা করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তাদের সহায়তা চাই। তখন তারা আমাদের সকল প্রকার প্রশাসনের সহায়তার আশ্বাস দেয়।


তারেক সাহেব বলেন যে, আপনাদের এখানে আর আসার দরকার নাই, আপনারা বাবর সাহেব ও আবদুস সালাম পিন্টুর সাথে যোগাযোগ করে কাজ করবেন, তারা আপনাদের সকল প্রকার সহায়তা করবে।


১৮ আগস্ট আমি, আহসান উল্লাহ কাজল, মাওলানা আবু তাহের আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডির সরকারি বাসায় যাই। সেখানে আবদুস সালাম পিন্টু, বাবর, মাওলানা তাজউদ্দিন, কমিশনার আরিফ ও হানিফ পরিবহনের হানিফ উপস্থিত ছিল।


আবদুস সালাম পিন্টু ও লুৎফুজ্জামান বাবর বলে যে, কমিশনার আরিফ ও হানিফ সাহেব আপনাদের সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করবে এবং আমাদের সকল প্রকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। সে মোতাবেক ২০ আগস্ট মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল ওয়া ও আহসান উল্লাহ কাজল আবদুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে ১৫টি গ্রেনেড ও ২০ হাজার টাকা নিয়ে বাড্ডার বাসায় নিয়ে আসে। ২১ তারিখ আগস্ট মাস, ২০০৪ ইং আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে গ্রেনেড হামলা চালাই।’ সূত্র: বাসস


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com