শিরোনাম
নির্বাচনের আগেই শ্রম আইনের পাস চায় ইইউ
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:১৩
নির্বাচনের আগেই শ্রম আইনের পাস চায় ইইউ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সংশোধিত শ্রম আইন পাস করতে সরকারকে অনুরোধ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশ অস্ত্র বাদে সকল পণ্যে যে শুল্কমুক্ত (ইবিএ) সুবিধা পায়, তা অব্যাহত রাখার জন্যই নির্বাচনের আগেই আইনটি পাস করতে বলেছে সংস্থাটি।


ঢাকায় ইইউ এর চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স কন্সটানটিনোস ভার্দাকিস শ্রম সচিব আফরোজা খান ও বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসুকে চিঠি লিখে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই আইনটি পাস করার অনুরোধ করেছেন।চিঠিতে তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগেই সংশোধিত আইনটি পাসের মাধ্যমে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ইইউতে বাংলাদেশী পণ্যের যে ইবিএ সুবিধা রয়েছে, তা অব্যাহত রাখার স্বার্থেই এটি করতে হবে।


বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ রফতানি পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইইউভূক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৬০ ভাগেরও বেশি সম্পন্ন হয়। অস্ত্র বাদে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া সকল পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে থাকে ইইউ।


২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর ওই বছরের জুন মাসে শুল্কমুক্ত বা জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন ইইউ ইবিএ সুবিধা স্থগিত বা বাতিল না করে শ্রমিক উন্নয়নে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি করে, যা সাস্টেইনিবিলিটি কমপ্যাক্ট নামে পরিচিত। গত জুনে সাস্টেইনিবিলিটি কমপ্যাক্ট এর বৈঠকে ব্রাসেলসে যেয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সংশোধিত শ্রম আইন পাস করার অঙ্গীকার করে আসে বাংলাদেশ পক্ষ।


এর আগে ইইউ এর তরফ থেকে সরকারকে বারবার সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, অঙ্গীকার অনুযায়ী শ্রম অধিকার সুরক্ষিত না হলে তদন্ত করে ইবিএ সুবিধা স্থগিত করবে ইইউ।


গত ২০ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য ও শ্রম সচিবকে পাঠানো চিঠিতে ইইউ চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বলেছেন, ২৫ জুন ইইউ ট্রেড কমিশনার সিসিলিয়া মামস্ট্রম এর সঙ্গে সাসটেইনিবিলিটি কমপ্যাক্ট নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করি, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সংশোধিত শ্রম আইন যাতে সংসদে পাস হয়, সরকার সে ব্যবস্থা নেবে। শ্রমিক অধিকার রক্ষার মাধ্যমে ইবিএ সুবিধা অব্যাহত রাখতে সময়মতো আইনটি পাস করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বিবার্তা২৪ডটনেটকে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলেই সংশোধিত শ্রম আইন পাস করার বিষয়ে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইতোমধ্যে খসড়াটি চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ের ভ্যাটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে। সেখান থেকে অনুমোদনের পর সংসদেও আগামী অধিবেশনেই তা পাস করা হবে।


নির্বাচনের আগেই আইনটি পাস করতে ইইউ এর প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইইউ এ ব্যাপারে কোন প্রস্তাব না পাঠালেও আমরা বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই এটি পাস করবো।


শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮’ নামে এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভা আইনের খসড়াটি নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন অনুযায়ী সংশোধিত শ্রম আইন ২০১৩ কে যুগোপযোগি করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করা। এর আগে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধন করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। তখন এই আইনের ৯০টি ধারা সংশোধন করা হয়।


মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শ্রম আইনে ৩৫৪টি ধারা রয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাবে দু’টি ধারা, চারটি উপধারা, আটটি দফা সংযোজন করা হয়েছে। বিলুপ্ত করা হয়েছে ছয়টি উপধারা। ৪১টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।


কর্মকর্তারা জানান, উল্লেখযোগ্য সংশোধনের প্রস্তাবগুলো হলো- কোন কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের ২০ শতাংশের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে। আগে ৩০ শতাংশ লাগতো। ১৪ বছর বয়সের নিচে কোন শিশুকে কারখানায় নিয়োগ দেওয়া যাবে না। ১৪ বছরের নিচে কাউকে নিয়োগ দিলে মালিকের ৫ হাজার টাকা জরিমারা হবে। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোরদের কারখানায় শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে। কারখানায় নারী শ্রমিকরা ৮ সপ্তাহের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। এর ব্যত্যয় হলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। কোন নারী শ্রমিক সন্তানসম্ভবা হলে তার প্রমাণ পেশ করার ৩ দিনের মধ্যে ছুটি দিতে হবে। ৫১ শতাংশ শ্রমিকের অনুমতি সাপেক্ষে ধর্মঘট করা যাবে। যেকোনও শ্রম আদালতে ৯০ দিনের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে। না হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে অবশ্যই করতে হবে। এই ১৮০ দিনের মধ্যেও যদি নিষ্পত্তি না হয়, তাহলে বাকি পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবে।


সংশোধিত শ্রম আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে কর্মরত অবস্থায় কোন শ্রমিক মারা গেলে দুই লাখ টাকা এবং দুর্ঘটনায় স্থায়ীভাবে পঙ্গু হলে আড়াই লাখ টাকা শ্রমিককে দিতে হবে। আর কোন শ্রমিক সংগঠন বিদেশ থেকে অনুদান আনলে তা সরকারকে অবহিত করতে হবে। শ্রমিক সংগঠনের নিবন্ধন ৬০ দিনের পরিবর্তে ৫৫ দিনের মধ্যে করতে হবে। শ্রমিকদের কল্যাণে যেকোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সরকার, মালিক ও শ্রমিক এই ত্রিপক্ষীয় পরিষদ করার বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।


বিবার্তা/কাশেম/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com