শিরোনাম
হোসেনি দালানে গ্রেনেড হামলা : ৩ বছরেও শেষ হয়নি বিচার
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:০২
হোসেনি দালানে গ্রেনেড হামলা : ৩ বছরেও শেষ হয়নি বিচার
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে গ্রেনেড হামলার ঘটনার তিন বছর পার হলেও শেষ হয়নি মামলার বিচার কাজ।


মামলাটিতে গত বছরের ৩১ মে ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। চার্জগঠনের পর গত ১৬ মাসে ৪৬ মাসে ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।


২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে পবিত্র আশুরার মিছিলের প্রস্তুতিকালে তাজিয়া মিছিলে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ওই ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। মামলাটির তদন্ত করতে সময় লেগেছে এক বছর। গত বছরের মে মাসে ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ। চার্জগঠনের পর ওই আদালতে মামলার বাদী চকবাজার থানার তৎকালীন এসআই মো. জালাল উদ্দিন সাক্ষ্য দেন। এরপর মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বদলি হয়। মামলাটি বদলি হওয়ার পর থেকে গতি পেয়েছে। এ আদালত গত ছয় মাসে ৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। মোট ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আগামী ১১ অক্টোবর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।


মামলা সম্পর্কে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপক্ষের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মামলাটি গত এপ্রিল মাসে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য বদলি হয়ে আসে। এ কোর্টে মামলাটি আসার পর এখন পর্যন্ত ৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আর আগে মাত্র একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।


সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পেশকার মো. রুহুল আমিন বলেন, এ মামলায় বর্তমানে পাবলিক সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সমন দেয়া হচ্ছে। পাবলিক সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পুলিশ ও অন্যান্যদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সমন দেয়া হবে।


তিনি বলেন, মামলার ১০ আসামির মধ্যে ৬ জন কারাগারে ও ৪ জন জামিনে আছেন। আর ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে মোট ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।


প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে তাজিয়া মিছিলে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করে পুলিশ। পরে এর তদন্তভার ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশে এর আগে তাজিয়া মিছিলে কখনো বোমা হামলা হয়নি। হামলার পর আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলার দায় স্বীকার করে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, ওই ঘটনায় আইএসের কোনো যোগসূত্র নেই।
তদন্ত শেষে ডিবি দক্ষিণের পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখ ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ১০ জঙ্গিকে আসামি করে চার্জশিট অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ওই বছরের অক্টোবরে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। গত বছরের ৩১ মে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।


জানা গেছে, ওই হামলায় ১৩ জঙ্গি জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযানের সময় তিন জঙ্গি ক্রসফায়ারে মারা যায়। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা সবাই জেএমবির সদস্য। এরা হলেন-জাহিদ হাসান ওরফে রানা ওরফে মোসায়েব, আরমান, কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিক, রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব, মাসুদ রানা, আবু সাঈদ সোলায়মান ওরফে সালমান, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ, শাহ জালাল, ওমর ফারুক ওরফে মানিক ও চাঁন মিয়া। আসামিদের শেষের চারজন জামিনে রয়েছে। অপর ছয় আসামি বর্তমানে কারাগারে। এছাড়া আসামিদের মধ্যে প্রথম তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।


জবানবন্দিতে তারা জানায়, প্রথমে তাদের মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পের শিয়াদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল। পরে হোসনি দালানে হামলার পরিকল্পনা করে দ্রুত কামরাঙ্গীরচরে বাসা ভাড়া নেয়। জঙ্গিদের পরিকল্পনা ছিল, হামলার দৃশ্য ভিডিও করার। কিন্তু আলোকস্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হোজ্জা হোসেনি দালানের কবরস্থান থেকে পাঁচটি হ্যান্ড গ্রেনেড ছুরে মারে। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিল কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিক। সে জেএমবির আত্মঘাতী হামলাকারী দলের সদস্য।


উল্লেখ্য, তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী শাহাদাৎ ওরফে আলবানি ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর রাজধানীর গাবতলীতে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়। পরের বছর ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় অপর দুই জেএমবি কমান্ডার আবদুল বাকি ওরফে আলাউদ্দির ওরফে নোমান ও সাঈদ ওরফে হিরণ ওরফে কামাল।


উল্লেখ থাকে, ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতি ও আটজনকে হত্যার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীও ছিল হোজ্জা।


বিবার্তা/খলিল/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com