শিরোনাম
রোহিঙ্গা বসতিতে কক্সবাজারের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে: ইউএনডিপি
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৩৯
রোহিঙ্গা বসতিতে কক্সবাজারের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে: ইউএনডিপি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়স্থল তৈরি, রান্নার কাঠ সংগ্রহ এবং অন্যান্য সুবিধা দিতে গিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে চার হাজার ৩০০ একর পাহাড় ও বন কেটে ফেলা হয়েছে।


এতে পরিবেশগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশের তিনটি স্থানের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে যে ক্ষতি হচ্ছে তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে না।


জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে পরিবেশগত প্রভাব’ বিষয়ক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।


পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ইউএনডিপি ও ইউএন ওম্যান যৌথভাবে এই জরিপ পরিচালনা করেছে।


এ সমীক্ষায় শরণার্থী সঙ্কটের ছয়টি সরাসরি, সাতটি প্রতিবেশগত প্রভাব চিহ্নিত করে এসব ঝুঁকি নিরসনের মাধ্যমে কক্সবাজারের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে ১৯টি সুপারিশ করা হয়েছে।


ইউএনডিপির সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের কুতুপালং ও বালুখালীর শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের রান্নার কাজে প্রতি মাসে ৬৮০০ টন জ্বলানি কাঠের প্রয়োজন হয়, যার মূল উৎস সেখানকার বনাঞ্চল। সেখানকার পরিবারপিছু বসতঘর নির্মাণের জন্য প্রয়োজন হয়েছে ৬০টি করে বাঁশ। ক্যাম্পগুলোতে বসানো হয়েছে কয়েক হাজার গভীর নলকূপ, যার প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমার পাশাপাশি ভূমিধসের ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।


ওই এলাকার ১৫০২ হেক্টর প্রাকৃতিক বনভূমির মধ্যে ৭৯৩ হেক্টরই রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে বলে সমীক্ষায় বলা হয়েছে। এছাড়া টেকনাফ, উখিয়া ও হিমছড়ির ১২০০ থেকে ১৬০০ হেক্টর এলাকার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।



সমীক্ষা প্রতিবেদনে আরো যেসব পরিবেশ ও প্রতিবেশগত প্রভাবের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাওয়া, বাড়তি ব্যবহার এবং দূষণের কারণে ভূ-উপরিস্থ পানির সংরক্ষণ সীমিত হওয়া, কঠিন এবং তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, বসতি স্থাপনে পাহাড় কাটা এবং ভূমিক্ষয়, রান্নার কারণে বায়ুদূষণ, প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের নষ্ট ও মানুষ-প্রকৃতির দ্বন্দ্ব এবং জলে প্রতিবেশগত ব্যাঘাত সৃষ্টি।


প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজারে আগে থেকে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা, স্থানীয় অধিবাসী এবং গতবছরের আগস্ট থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মিলে এখন সেখানে ১৫ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বসবাস। এতে এই এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর দারুণ নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়েছে। যার অনেকটাই এখনও আমরা উদঘাটন করতে পারেনি।


অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সরকার মূলত মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু ১১ লাখ রোহিঙ্গা সেখানে আশ্রয় নেয়ায় এখন সেখানকার পাহাড়ী জমি নষ্ট হচ্ছে। গাছ কেটে ফেলার কারণে পাহাড় ও পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।


তিনি বলেন, অল্প জায়গায় অধিক মানুষ থাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অগ্নি নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে। পরিবেশগত ক্ষতি রোধ করতে এই এলাকায় বনজ ও ফলজ গাছ লাগানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গার যেসব এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে, সেখানকার স্থানীয়রাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহবান জানান।


মন্ত্রী বলেন, আমি যে বিষয়গুলো নিয়ে শঙ্কিত, তার প্রথমটি হল- এটি এমন একটি সঙ্কট আগামী কয়েক বছরে যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন না সবাই। দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গারা যদি চলেও যায়, সেক্ষেত্রে পরিবেশের কী হবে? স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কেউ কি অর্থ দেবে? আমি তা মনে করি না। কারণ বিশ্বে এখন অনেক সমস্যা রয়েছে, সেসবের জন্যও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।


ইউএনডিপির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ এরই মধ্যে বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বৃক্ষরোপনের কার্যক্রম শুরু করলেও এ খাতে অর্থায়ন এখনও অপ্রতুল। এজন্য টেকসই সমাধান এবং দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি প্রয়োজন।


অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সচিব আব্দুল্লাহ আল মহসীন চৌধুরী, প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ শফিউল আলম চৌধুরী, ইউএনডিপি কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মহসীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com