শিরোনাম
রক্তস্নাত বিভীষিকাময় সেই রাত
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০১৮, ২৩:০৫
রক্তস্নাত বিভীষিকাময় সেই রাত
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কেঁদেছিল আকাশ, ফুঁপিয়েছিল বাতাস। বৃষ্টিতে নয়, ঝড়ে নয়, এ অনুভূতি ছিল শোকের। পিতা হারানোর শোক। প্রকৃতি কেঁদেছিল; কারণ মানুষ কাঁদতে পারেনি। ঘাতকের উদ্যত সঙ্গিন তাদের কাঁদতে দেয়নি। কিন্তু ভয়ার্ত বাংলার প্রতিটি ঘরে পড়েছিলো চাপা দীর্ঘশ্বাস।


কী নিষ্ঠুর, কী ভয়ঙ্কর সেই রাত। যা ৪১ বছর পরও ৫৬ হাজার বর্গমাইলের জনপদের ধূলিকণা ভুলতে পারেনি। ভুলতে চায়নি, ভুলতে পারবে না স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অশ্রুভেজা, কলঙ্কময় রাতের কথা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের কথা। যে রাতে স্ত্রী-সন্তানসহ সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


শোকাবহ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী।



১৯৭৫-এর এই কালো দিনটিতেই জাতি হারিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। রক্তঝরা এই দিনটিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবার-পরিজনসহ নৃশংসভাবে শহীদ হন ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসভবনে।


কিছু বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকের চক্রান্ত এবং সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্যের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন প্রাণ হারান তার প্রিয় সহধর্মিণী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল ও দশ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল এবং নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। তবে প্রবাসে থাকায় সেদিন প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।



সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কমকর্তা ও কর্মচারী।


জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী জাতির জনক ও তার পরিবারের সদস্যদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।


দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সারাদেশে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মার্যাদায় দিবসটি পালনে সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।


বুধবার সরকারি ছুটি। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।


সকাল সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ অর্পণ করবেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনী অনার গার্ড প্রদান করবে। সেখানে বিশেষ মোনাজাত ও কোরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠিত হবে।


প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য ও অন্য শহীদদের কবরে এবং সকাল ১০টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুস্পার্ঘ অর্পণ করবেন। এ সময় ফাতেহা পাঠ ও সশস্ত্র বাহিনী অনার গার্ড প্রদানসহ বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।


বাদ জোহর সারাদেশের সব মসজিদে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা ছাড়াও দুঃস্থ ও এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে।


এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন শোক দিবসের অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচার করবে। এছাড়া বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এছাড়া পোস্টার, সচিত্র বাংলাদেশ-এর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ ও বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে।


জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দিবসটি পালনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভা, জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হামদ্ ও নাত প্রতিযোগিতা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে।



এবার আওয়ামী লীগ দেশজুড়ে মাসব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি পালন করছে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় শোক দিবসে সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সবস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল পৌনে ৭টায় ধানমণ্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতি ও সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল, ১০টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল, দুপুরে অসচ্ছল দুঃস্থ মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।


এছাড়া সিপিবি, গণফোরাম, জাসদ, ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, তরুণ লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, আনসার ও প্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পর্যটন করপোরেশন, বিএফইউজে, ডিইউজে, সাংবাদিক সমাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, খেলাঘর, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু শিল্পী গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, আইডিইবি, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা পরিষদ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, এফডিসি, কচি-কাঁচার মেলা, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমী, সোনার বাংলা যুব পরিষদ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, ডায়াবেটিক সমিতি, পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, খ্রিস্টান এসোসিয়েশন, খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ফ্রন্ট, বৌদ্ধ সমিতিসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, প্রার্থনা সভা, খাবার বিতরণ, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com