শিরোনাম
‘আমার মা ছিলেন আসল গেরিলা’
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০১৮, ১২:৫৩
‘আমার মা ছিলেন আসল গেরিলা’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা খুব জ্ঞানপিপাসু ছিলেন। লেখাপড়ার তেমন সুযোগ না পেলেও চিন্তা ভাবনায় তিনি খুব উচ্চমানের ছিলেন।


তিনি বলেন, বাবার প্রতিটি সিদ্ধান্তে মা পাশে ছিলেন। তিনি বাবার পাশে থেকে জাতি গঠন কর্মকাণ্ড এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।


বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মার খুব বই পড়ার অভ্যাস ছিল। আব্বার জন্য বই কিনতেন। লেখাপড়ার তেমন সুযোগ না পেলেও চিন্তা ভাবনায় তিনি খুব উচ্চমানের ছিলেন।


পাকিস্তানী শাসনকালে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাবন্দী করা হলে এই মহীয়সী নারীকে অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালেও অসীম সাহস, ধৈর্য ও প্রজ্ঞার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন।


শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা ছিলেন একজন সত্যিকারের গেরিলা। আমার মা এমন গেরিলা ছিলেন যে পাকিস্তানিরা কিন্তু তাকে ধরতে পারে নি। এমনকি কোনো রিপোর্ট লিখতে পারে নাই তার নামে। তিনিই ছিলেন আসল গেরিলা।


তিনি বলেন, দেশের ক্রান্তিকালে যখন কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার পড়তো তখন আমার মা আব্বাকে সাহায্য করতেন। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মা আব্বাকে সবকিছু থেকে কিছুক্ষণের জন্য আলাদা করে রাখতেন। বলতেন ১৫ মিনিট শুয়ে রেস্ট নাও। অনেকে অনেক কথা বলবে, কিন্তু তোমাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। গোটা দেশ তোমার দিকে তাকিয়ে। তোমার মনে যে কথাটা আসবে সেই কথাটাই বলবে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারিবারিক ও মানুষকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে যেমন ছিলেন উদারমনের দেশের স্বার্থে তেমন কঠোর ছিলেন বঙ্গমাতা। তার কঠোর মনোবল ও দৃঢ়তাই দেশকে স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছে।


তিনি বলেন, আমার মা কখনই নাই শব্দটা বলতেন না। মায়ের মুখে কোনো সময় অভাব অনটনের কথা শুনতাম না। আমাদের কঠোর নির্দেশ দিতেন, ঘরে কোনো জিনিস না থাকলে নাই বলা যাবে না। ঘরে চিনি না থাকলে বলতেন, ফুরিয়ে গেছে, আনতে হবে। তিনি কখনই দৈন্য, অভাব-অনটন প্রকাশ করতেন না। কখনো হতাশা ছিল না তার মধ্যে।


তিনি আরো বলেন, মা অনেক উদারমনা ছিলেন। গরীবদের-দলের নেতাকর্মীদের সাহায্য করতে তিনি গহনা বিক্রি করে দিয়েছেন। বলতেন ডিজাইন পুরনো হয়ে গেছে তাই বিক্রি করে দিয়েছি, পরে নতুন বানাব। ঠাণ্ডা পানি খেলে গলা ব্যথা হয় এটা বলে ফ্রিজ বিক্রি দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি বড় মেয়ে, সব বুঝতাম। মা রাজনৈতিকভাবেও ছিলেন দৃঢ়চেতা। রাজনীতিতে সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ গুণটিও তার মধ্যে ছিল।


বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে জাতির পিতা হত্যাকারীদের নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে তিনিও শাহাদাত্বরণ করেন।


শহীদ বঙ্গমাতা মাত্র ৩ বছর বয়সে পিতা ও ৫ বছর বয়সে মাতাকে হারান। তার ডাক নাম ছিল ‘রেণু’। পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। দাদা শেখ কাসেম চাচাতো ভাই শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিয়ে দেন।


তখন থেকে বেগম ফজিলাতুন্নেছাকে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুর মাতা সাহেরা খাতুন নিজের সন্তানদের সঙ্গে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করেন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে তিনি প্রাথমিক লেখাপড়া করেন। অতঃপর সামাজিক রীতি-নীতির কারণে গ্রামে গৃহশিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করেন।


বিবার্তা/জাকিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com