শিরোনাম
‘৭১ এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই জাতির পিতাকে হত্যা’
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০১৮, ০১:৩৩
‘৭১ এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই জাতির পিতাকে হত্যা’
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ’৭১-এর পরাজিত শক্তি পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই জাতির পিতাকে হত্যা করেছে।


গতকাল বুধবার শোকের মাস আগস্টের প্রথম দিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সম্মুখে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত স্মরণ সভা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদার কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘৭১-এর পরাজিত শক্তি জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে। তারা ভেবেছিল জাতির পিতাকে হত্যা করলে স্বাধীন বাংলাদেশের আর অস্তিত্ব থাকবে না।



শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পেছনে পরাজিত শক্তির লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশ যেনো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সাহস ও গৌরবকে হারিয়ে ফেলে পরাজিত পাকিস্তানীদের আবার পদতলে চলে যায়।


শেখ হাসিনা বলেন, যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না কিন্তু ঘটনাক্রমে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তারাই জাতির পিতার হত্যার মূল কুশীলব ছিলো।


আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং ড. আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল হক রেজা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।


অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষক লীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা।


প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে কৃষক লীগের নিয়মিত প্রকাশনা ‘কৃষকের কন্ঠ’র আগস্ট উপলক্ষ্যে বিশেষ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন।



অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা এবং বেগম মুজিবসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।


প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিচারপতি সায়েমকে অস্ত্রের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করে জিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল এবং বিখ্যাত সাংবাদিক এন্থনি মাসকারহান্সের সাথে ইন্টারভিউতে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী আত্মস্বীকৃত খুনী ফারুক-রশিদের জিয়াকে মুজিব হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করা এবং জিয়া তাদের এগিয়ে যাওয়ার কথা বলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া এই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলেই পরে সে খুনীদের বিদেশী দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে এবং ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে জাতির পিতার খুনীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিল।


বঙ্গবন্ধুর সকল খুনীদের বিচার এবং অনেককে শাস্তি প্রদান করা হলেও জিয়া আগেই ঘটনাচক্রে নিহত হওয়ায় তাকে এই হত্যার বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি বলেও এ সময় আক্ষেপ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ঘাতক উল্লেখ করে বলেন, ‘জিয়ার যা পরিণতি হয়েছিল তা তার অবধারিত। তবে আমার দুঃখ একটাই যে, তার বিচারটা আমি করতে পারলাম না। তার আগেই সে মরে গেলো।’


তিনি বলেন, ‘জিয়া ঘাতকদের বলেছিলেন এগিয়ে যাও, আমি আছি। খুনি মোশতাক আমাদের দলেই ছিল, তবু সে বেঈমানি ও মুনাফেকী করেছিল। অথচ তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।’


প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই এ কারণে যে, তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল বলেই আমরা ক্ষমতায় আসতে পেরেছি। খুনিদের বিচার করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে পেরেছি।


তিনি বলেন, ‘শত বাধা অতিক্রম করে ২১ বছর পর ’৯৬ সালে যখন আমি সরকার গঠন করলাম, তখন ওই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে আমরা জাতির পিতার খুনিদের বিচারের কাজ শুরু করি।’


প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগস্ট শোকের মাস। এ মাসে আমি হারিয়েছি আমার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু জাতি হারিয়েছে দেশের অভিভাবককে। বঙ্গবন্ধু আজ বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হতো।


তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো, তার অপরাধ কি ছিলো? তার অপরাধ ছিলো তিনি দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। দেশের মানুষকে শোষণমুক্ত করেছিলেন।


আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, যারা ঘটনাচক্রে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাস করতেন না সেসব কুলাঙ্গার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। তারা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধু না থাকলে এ দেশ আবার পাকিস্তানিদের করায়ত্ত হবে।



শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের খুনিরা প্রতিনিয়ত আমাদের বাসায় যাতায়াত করতো। বাবার কাছ থেকে নানা সুবিধা নিতো। এরপরও তারা বেঈমানী করেছে। তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যাই করেনি, এ হত্যার বিচার যাতে না হয় সেজন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশও জারি করে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর বহু অফিসার, বহু সৈনিক, বিমান বাহিনীর অফিসারদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল।


মুক্তিযোদ্ধা অফিসার কেউই ছিল না। একে একে সবাইকেই মেরে ফেলা হয়। এ দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ধ্বংস করা হয়।’


শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে আর রেহানাকে দেশে আসতে দেয়া হয়নি। রেহানার পাসপোর্ট পর্যন্ত নবায়ন করে দেয়নি জিয়াউর রহমান। আওয়ামী লীগ যখন আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে, জোর করে আমি তখন দেশে ফিরে আসি।’


তিনি বলেন, ‘দেশে আসার পর আমাকে এই বাড়িতে (ধানমন্ডির ৩২ নম্বর) ঢুকতে দেয়া হয়নি। এই বাড়ির গেইটে তালা ছিল। এই রাস্তার ওপর বসে বাবা-মা ও ভাইবোনের জন্য মিলাদ পড়েছিলাম আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ আমরা।’


বিবার্তা/শারমিন/শাহনাজ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com