প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তোরণের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং ক্ষুধাও দারিদ্রমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠা করতে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সফল পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন লাভ করেছে, তার ধারবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এই ধারবাহিকতা বজায় রাখার জন্য এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। এই শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি আরো বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে শিক্ষিত জাতি ও মেধাবী জনগোষ্ঠীর বিকল্প নেই।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার দুপুরে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ পদক-২০১৭’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের প্রথম স্থান অধিকারকারী ১৬৩ জন শিক্ষার্থীর মাঝে স্বর্ণপদক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।
শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষার খরচটাকে আমি খরচ হিসেবে দেখি না, এটাকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখি। আজ আমরা যাদের পেছনে বিনিয়োগ করছি তারাই একদিন এ দেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবে। বিভিন্ন উদ্ভাবনী ও আবিষ্কারে তারা এগিয়ে থাকবে। তখনই এ দেশ হবে সোনার বাংলা।
তিনি বলেন, আজ যারা স্বর্ণপদক পেল তাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। আজকের ছেলেমেয়েরা এ দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলবে। আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত করছি। ভবিষ্যতে ছেলেমেয়েরা এ দেশকে সত্যিকারের সোনার বাংলা হিসেবে গড়বে -যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন।
স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছি। এ গতি যেন থেমে না যায়। এ দায়িত্ব তোমাদের। কেউ যেন বলতে না পারে বাংলাদেশ ভিক্ষুকের দেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমি খুব শান্তি পাচ্ছি। কারণ এক সময় এ দেশে মেয়েদের শিক্ষায় বিরাট বাধা ছিল। আজ যে ১৬৩ জনকে স্বর্ণপদক দিলাম তার মধ্যে ১০১ জনই মেয়ে, আর ৬২ জন ছেলে। খুব ভালো লাগার পাশাপাশি একটু খারাপও লাগছে যে, ছেলেরা পিছিয়ে থাকবে কেন? আমি চাই ছেলেমেয়ে সমান গতিতে এগুবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তোমাদের মেধা, জ্ঞান ও কর্মের ফলে দেশের উন্নয়নে অধিক গতি সঞ্চারিত হবে ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। আর দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানব সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবো।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষা-জীবনে তোমরা যেমন কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছ, তেমনি ভবিষ্যত কর্মজীবনেও নিজেদের মেধা, দেশপ্রেম, ত্যাগ ও তিতীক্ষার মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়নেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে তোমরা যথাযথ ও সঠিক নেতৃত্ব দেবে, আমি এ প্রত্যাশা করি।
শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আর এই প্রকল্পের অর্থায়নে ৪২২টি রিসার্চ প্রজেক্ট দুটি টেকনোলজি ট্রান্সফার অফিস, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম ছাড়াও ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গবেষণার প্রকৃত পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এসব কিছু দেখার জন্যে মঞ্জুরি কমিশন রয়েছে। তবে তা যে আকারে আছে তাতে এটা সম্ভব না। সে কারণে আমরা একটা উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করবো। তবে যা কিছু হবে তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথেই হবে।
তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ‘অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইন’ পাস হয়েছে এবং শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মানসমৃদ্ধ করা এবং তাদের তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান প্রিয়া এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সজন ধর স্বর্ণপদক প্রাপ্তদের পক্ষে নিজস্ব অনুভুতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য হিসেবে অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম এবং ড. সৌমিত্র শেখর তাদের রচিত ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’ শীর্ষক গ্রন্থটিও প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক, পদস্থ সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ, জাতীয় অধ্যাপকবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, গবেষক এবং পদকপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]