শিরোনাম
‘সিটি ভোটে ব্যর্থ হয়ে ‘ব্লেম গেমে’ নেমেছে বিএনপি’
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০১৮, ২৩:৪৭
‘সিটি ভোটে ব্যর্থ হয়ে ‘ব্লেম গেমে’ নেমেছে বিএনপি’
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোট চেয়ে ব্যর্থ হয়ে ‘ব্লেম গেমে’ নেমেছে বলে মন্তব্য করছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


আজ সোমবার সন্ধ্যায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) যখন দেখলো যে, জনগণের কাছে গিয়ে সাড়া পাচ্ছে না, তখন একটা ব্লেম গেম শুরু করলো এবং হাতেনাতেই ধরা পড়লো। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ ছিল, তাই তারা তদন্ত করে বের করতে চাইল, কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে।


রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে ১৭ জুলাই রাজশাহীর সাগরপাড়া এলাকায় রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নির্বাচনী পথসভায় বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে রাহশাহী জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।


রাজশাহীর পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই বিএনপি নেতৃবৃন্দ পরস্পর যোগসাজসে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।



জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর একটি অডিও পুলিশের হাতে এসেছে (এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়), যেখানে তিনি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে কথোপকথনে ঘটনার জন্য নিজ দলের দুই নেতাকে দায়ী করেন।


এরপরই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে বলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইখতিয়ার আলম জানান। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একটা জিনিস আপনারা আজকে লক্ষ্য করেছেন যে, রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চলছে।


এরমধ্যেই তারা (বিএনপি) অভিযোগ করলো যে, তাদের মিছিলে বোমা হামলার-এর প্রেক্ষিতে আমরা যখন নির্দেশ দিলাম যে, হামলাকারী যে দলেরই হোক, যেই হোক তাকে যেন গ্রেফতার করা হয়। কারণ এটা আমরা চাই না। সবাই স্বাধীনভাবে তাদের নির্বাচন প্রচার চালাবে। আমরা সেই পরিবেশ কিন্তু বজায় রেখেছি।


তিনি বিএনপি’র শাসনামলের উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি’র শাসনামলে আমরা দেখেছি যে, কিভাবে আমাদের নির্বাচনের সময় বাধা দেয়া হত, আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার, জুলুম করা হত। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমরা এটাও দেখেছি যে, তারা (বিএনপি) ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন করতে পারে। আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা- সেটাও আমরা দেখেছি।


এজন্যই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটতে পারে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি তার নির্দেশ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের (বিএনপি) মিছিলে তিনটা ককটেল ফুটলো, পরবর্তীতে দেখা গেল তাদের নিজেদেরই ভাষায় বেরিয়ে আসলো, এটা নিজেরাই করেছে। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করার জন্য।
সরকার প্রধান বলেন, তারাই ঘটনাটি ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে এবং সেটাকে ব্যাপকভাবে প্রচার করে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন-‘ বিএনপি’র এই অভ্যাসটা আছে- নিজেরাই বোমা মারবে, নিজেরাই গাড়ি ভাঙ্গবে, তারপর অন্যের নাম দেবে।


শেখ হাসিনা বলেন, এই মিথ্যাচারে বিএনপি’র সঙ্গে কেউ পারবে না।’ ‘তারা একটা নাটক সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়- এটাই তাদের চরিত্র’। তিনি ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি’র সন্ত্রাস-নৈরাজ্য এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের ওপর দমন-পীড়ন, বোমা ও গ্রেনেড হামলাসহ সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এসএম কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার এবং আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল ইমাম হত্যার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।


প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার কারাবাসের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, উনি জেলখানায় খান, দান বহাল তবিয়তে থাকেন। আর মামলায় হাজিরা দেয়ার সময়েই অস্স্থু হয়ে যান। এ আরেক নাটক শুরু হয়েছে। যখনই কোর্টের তারিখ পড়ে তখনই তিনি অসুস্থ। নাইকোর দুর্নীতি মামলায় এফবিআইতো বসেই আছে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য, বলেন প্রধানমন্ত্রী।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, এফবিআইয়ের অফিসার কিনে নিয়ে আমেরিকায় তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার পরিবল্পনাও এফবিআইয়ের তদন্তে ধরা পড়েছে। খালেদা জিয়াকে তার সরকার নয়, বরং এতিমের টাকা আত্মস্যাৎ করাতেই জেলে যেতে হয়েছে বলেও পুনরোল্লেখ করেন তিনি।


তার সরকারের সময়ে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কাছে তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন করে লাভ নাই। আমরা ছাড়তে পারবো না, যতক্ষণ না আদালত তাকে ছাড়ে।



তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ১০-১১ বছর আদালতে মামলা চললো, তাদের বাঘা বাঘা আইনজীবীরা সব ব্যর্থ হয়ে গেল এটা প্রমাণ করতে যে, খালেদা জিয়া অর্থ আত্মস্যাৎ করেন নাই। এখন আমাদের দোষ দিয়ে লাভ কি?


কারাগারে খালেদা জিয়াকে সব সুবিধা দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খানাপিনা কোনো দিক দিয়ে তো আমি কম দেখছি না। খোঁজ-খবর তো আমরা রাখি। তাকে মেইড সার্ভেন্ট দেওয়া হয়েছে। তার জন্য স্পেশাল খাট, স্পেশাল গদি.. কোনো কিছু তো কম দিই নাই। এয়ার কন্ডিশন.. সবই ব্যবস্থা তার জন্য জেলখানায়। যা যা চাচ্ছে, তাই পাচ্ছে। এই রকম আয়েশ করে তো, আর কেউ পায়েস খেতে পারে নাই।”


প্রধানমন্ত্রী এদিনের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আরো বলেন, সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করতে হবে। আর ২০১৪ সালের যে নির্বাচনী ইশতেহারের কতটুকু আমরা বাস্তবায়ন করতে পারলাম সেটা পর্যালোচনা করতে হবে।


তিনি বলেন, তবে আমি এটুকু বলতে পারি, যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম তার চাইতে বেশি কাজ আমরা করেছি। আর আগামীতে বাংলাদেশটাকে আমরা কিভাবে দেখতে চাই তার প্রতিফলন থাকবে আগামী ইশতেহারে।


প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালনের তার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন। আর ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হবে। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দেন তিনি।


বিবার্তা/শারমিন/শাহনাজ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com