শিরোনাম
ছাত্রলীগের কমিটি: চলবে আরো যাচাই বাছাই
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০১৮, ০৩:২৬
ছাত্রলীগের কমিটি: চলবে আরো যাচাই বাছাই
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম এবং এর বাইরেও সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদকসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ ও ঘোষণা করা হতে পারে।


আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারো নাম ঘোষণা না করলেও দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গ থেকে আসছেন এবারের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। একইসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির দুই শীর্ষ পদের একটিতে একজন নারী আসতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তারা।


এদিকে, পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাশী ৩২৩ জন ছাত্র নেতার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বুধবার রাত ৮ টার পরে ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশীদের সঙ্গে বসেন শেখ হাসিনা। আর এ বৈঠক চলে রাত ১১ টা পর্যন্ত। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ১ মিনিট করে পদ প্রত্যাশী সকলের বক্তব্য শোনেন। পুরো বৈঠকে ৩২৩ জন পদ-প্রত্যাশীর মধ্যে ২৫০ জনের বক্তব্য শুনেছেন তিনি। বৈঠকে নেতারা তাদের বক্তব্যে সংগঠনের নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং বর্তমান নেতৃত্বের দুর্বলতা নিয়েই বেশি কথা বলেছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।


বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৮টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক ১১টার বেশি সময় পর্যন্ত চলে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩২৩ প্রার্থীর কথা শুনে কিছুটা চমকে ওঠেন ছাত্রলীগে এক সময়ের নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানতে চান, কোনো এতো এতো ছেলেমেয়ে ছাত্রলীগের নেতা হতে চান? জবাবে প্রায় ২৫০ জন তাদের নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন। এসময় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরীর নওফেল ও সদস্য মারুফা আক্তার পপি, যুব মহিলা লীগের সভাপতি অপু উকিল, ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।


বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের নেতারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগকে পরিচালতি করে আসা সংগঠনের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট, সিন্ডিকেটে জিম্মি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, দুই নেতার সংগঠন ছাত্রলীগ, নেতৃত্বের ব্যার্থতাসহ নানাবিধ বিষয়ে কথা বলেন তারা। তবে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতির উপস্থিতিতেও ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতাদের বক্তব্য রাখার জন্য মাইক টানাটানির ঘটনা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু। এদিকে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের গণভবনে ঢোকার খবর পাওয়ার পর থেকেই কমিটির জন্য উদগ্রীব হাজারো নেতাকর্মী বৈঠকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভীড় জমান গণভবনের গেইটে।


ছাত্রলীগের নেতাদের সকল বক্তব্য শুনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় বলেন, ছাত্রলীগ তো আওয়ামী লীগের চেয়েও সিনিয়র সংগঠন। দীর্ঘদিন থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখে আসছি। কিন্তু এই ৩২৩ জন পদপ্রার্থীর ঘটনা এই প্রথম। এর আগে সাধারণত ৩ থেকে ৪/৫ জন প্রার্থী দেখে এসেছি আমরা। কমিটি গঠনের অল্প কিছু সময় নেবেন বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তোমরা এখানে অনেকজন। কিন্তু নেতা হবে মাত্র দুজন। তোমাদের কোনো আপত্তি আছে? জানতে চাইলে সকলে সম্মিলিত সুরে বলে ওঠে, ‘শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত চূড়ান্ত’।


বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল পাঠান সেতু বলেন, এতো পদপ্রার্থী একদিনে হয় নি। দীর্ঘদিন যাবত নেতৃত্বে নির্বাচনের প্রক্রিয়ার দুর্বলতা এ অবস্থার জন্য দায়ী। দুর্বল নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে চেইন অফ কমান্ড ভেঙে পড়ে। যে তরুণ প্রজন্ম ২০০৮ এর নির্বাচনে আমাদেরকে জয়ী করেছে সে তরুণ প্রজন্মকে আমরা ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারি নি। যেমন কোটা আন্দোলনে ছাত্রলীগে আমাদের অবস্থানই সুস্পষ্ট করতে পারি নি। নেতা নির্বাচনি প্রক্রিয়া সঠিক হলেই এই সমস্যার সমাধান হবে। যা আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা আশাবাদী।


ছাত্রলীগের নেতাদের নামে মাদকের অভিযোগের কথা তুলে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের সহ সভাপতি নীশিতা ইকবাল নদী। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার নামে মাদক ব্যবসার অভিযোগের কথা উল্লেখ করে নদী বলেন, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ব্যাক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের নেতাদের নামে কুৎসা রটিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা করেছেন। নদীর বক্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে এমন কোনো নিউজ পত্রিকায় হলে সোজা মামলা করে দিবা। আর কারা এমন নিউজ করে আমাকে জানিও।


ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিব বলেন, আমি একটা কলেজের সভাপতি ছিলাম, জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বে আছি। আমার কলেজে কোটা আন্দোলনকারীদের আমরা শক্তহাতে প্রতিহত করেছি। কিন্তু সেই জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ব্যর্থ। বারবার দুর্বল নেতৃত্বের কারণে এটা হচ্ছে। এ কথার সঙ্গে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা মাথা নেড়ে সায় দেন। কিন্তু এই বক্তব্যের জবাব গণভবনের ব্যাংকোয়েট হল পার হওয়ার সাথে সাথেই পেয়ে যান তিনি। অনুষ্ঠান শেষে খাবারের জন্য নির্ধারিত স্থানে আসার সঙ্গে সঙ্গেই রকিবের ওপর ঝাপিয়ে পড়েন। তারা তাকে সবার সামনে লাঞ্চিত করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর। তিনি তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তার গাড়িতে উঠিয়ে রকিবকে গণভবন থেকে নিরাপদে বাইরে পাঠিয়ে দেন। বিষয়টি স্বীকার করেছেন রকিব নিজেই।


ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সোহান খান বলেন, সরকারি চাকরিতে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বারবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। দুর্বল নেতৃত্বের জন্যই এ অবস্থা। আপনি দায়িত্ব নিলে যারা ১/১১ এর সময় থেকে এখন পর্যন্ত রাজপথে রাজনীতি করেছে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। এসময় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী কমিটির এক শীর্ষ নেতা সবার সামনেই সোহানের উদ্দেশ্যে তেড়ে যান, তখন সকলে মিলে শান্ত করেন তাকে।


প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ মে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১১ মে বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন উদ্বোধন করেন। পরদিন কাউন্সিল অধিবেশনে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষমতা ছাত্রলীগের অভিভাবক শেখ হাসিনার ওপর অর্পণ করা হবে।


ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগ থেকেই আলোচনায় ছিল সংগঠনে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ও সিণ্ডিকেটের হস্তক্ষেপের বিষয়টি। আর এই প্রেক্ষিতে কমিটি দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন সংগঠনটির অভিভাবক দেশনেত্রী শেখ হাসিনা।


বিবার্তা/শারমিন/শাহনাজ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com