শিরোনাম
পাস হলো ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০১৮, ১৪:৫৪
পাস হলো ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ দেশ গড়তে ৭.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে।


আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে নির্দিষ্টকরণ বিল, ২০১৮ পাসের মাধ্যমে এ বাজেট পাস করা হয়। গত ৭ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বাজেট পেশ করেন।


বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীগণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবিগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।


প্রধান বিরোধীদল মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে বিরোধীদলের ৯ জন সংসদ সদস্য মোট ৪৪৮টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে ৫টি মঞ্জুরি দাবিতে আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়।


এরপর সংসদ সদস্যগণ টেবিল চাপড়িয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৮ পাসের মাধ্যমে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন। এরপর অর্থমন্ত্রী স্পিকারের অনুমতি নিয়ে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্যদের সবাইকে বাজেটোত্তর নৈশভোজে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানান।


২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের পঞ্চম বাজেট। আর এটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পেশ করা ১২তম বাজেট এবং এক নাগাড়ে ১০ম বাজেট। এছাড়া গত অর্থ বছরের মতো এবারও সংসদে বিরোধীদলের উপস্থিতিতে বাজেট পেশ করা হলো।


এদিকে গত ১০ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও অন্যান্য মন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধীদলের সদস্যরা মূল বাজেট ও সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।


মঞ্জুরি দাবির ওপর আলোচনার সুযোগ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা শিক্ষাখাতে অনিয়ম-দুর্নীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যর্থতা, জনগনের স্বাস্থ্য সেবা সংকট, দুর্যোগ মোকাবিলা প্রস্তুতির অভাব ও রেলখাতের অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন।


বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩.৪ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১.৭ শতাংশ। এছাড়া এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ০.৪ শতাংশ। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.৩ শতাংশ।


বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১.৫ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।


বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৪.৯ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৫৪ হাজার ৬৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২.১ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২.৮ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.৭ শতাংশ এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ২৯ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।


বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।


বাজেটের উন্নয়নের লক্ষ্য ও কৌশল হচ্ছে টেকসই উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন।


এদিকে বাজেটে সামাজিক অবকাঠামোগত খাতে মোট বরাদ্দের ২৭.৩৪ শতাংশ, যার মধ্যে মানবসম্পদ খাতে- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে ২৪.৩৭ শতাংশ, ভৌত অবকাঠামো খাতে ৩০.৯৯ শতাংশ- যার মধ্যে রয়েছে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১২.৬৮ শতাংশ, বৃহত্তর যোগাযোগ খাতে ১১.৪৩ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৫.৩৬ শতাংশ।


এছাড়া সাধারণ সেবা খাতে ২৫.৩০ শতাংশ, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) এবং বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ ৪.৭৮ শতাংশ। এছাড়া সুদ পরিশোধ বাবদ ১১.০৫ শতাংশ। নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে অবশিষ্ট ০.৫৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।


প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ, সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।


এদিকে মঞ্জুরি দাবিগুলোর মধ্যে অর্থ বিভাগে সর্বোচ্চ ২ লাখ ২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ১৫৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা, তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২৯ হাজার ৬৬ কোটি ২১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, চতুর্থ সর্বোচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ২৪ হাজার ৮৯৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা, পঞ্চম সর্বোচ্চ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ২৪ হাজার ৩৮০ কোটি ২৪ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগে ২২ হাজার ৯৩৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে ২২ হাজার ৪৬৬ কোটি ২০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, জননিরাপত্তা বিভাগে ২১ হাজার ৪২৬ কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ১৮ হাজার ১৬৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১৪ হাজার ৬৩৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ১৬ হাজার ২৩ কোটি ৩৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ১৩ হাজার ৯১৪ কোটি ৬৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে ১৩ হাজার ৭১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ২’শ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মঞ্জুর করা হয়।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com