শিরোনাম
শেষ মুহূর্তে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঘরে ফেরার তাড়া
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০১৮, ১১:২১
শেষ মুহূর্তে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঘরে ফেরার তাড়া
ছবি: জুয়েল রানা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ঈদ মানেই খুশি আর আনন্দের জোয়ার। তা যদি হয় প্রিয় মানুষদের সঙ্গে, তাহলে তো কথাই নেই। তাই প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী থেকে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। নাড়ীর টানে ঘরমুখো মানুষের চাপে নৌঘাটগুলোতে তাই শেষ মুহুর্তের উপচে পড়া ভীড় দেখা গেছে। আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। শেষ মুহূর্তে এখনো ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। সবার একটাই তাড়া বাড়ি যেতে হবে। যেকোনো মূল্যে হোক। তাই আজ সকালেও ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালীসহ সদরঘাটে এখন উপচে পড়া ভীড়। এ সকল জায়গায় শুধু মানুষ আর মানুষ। সবারই যে ঘরে ফিরতে হবে।


আজ শুক্রবার সকাল থেকেই বাড়তে থাকে জনতার ঢল। কেউ কেউ আগেই স্টেশনে এসে একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছেন। কেউবা বসে বসেই ঝিমাচ্ছেন। সকালে যানবাহনের দীর্ঘ সারি ৪ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে ঘাটে যাচ্ছেন লঞ্চের যাত্রীরা।



এদিকে, বাস, ট্রাক, পিকআপে করে যে যেভাবে পেরেছে বাড়ির পথে রওনা হয়েছে। ঘাটে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা পুলিশ ও ঘাট কর্তৃপক্ষের। ঘাটে ছোট গাড়ির চাপও অনেক বেশি। যানবাহনের এই চাপ দিনভর থাকবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।


জানা গেছে, আজ দেশের বিভিন্ন রুটে ৬৯টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে ৩২টি আন্তনগর, ৫টি স্পেশাল বাকিগুলো মেইল ট্রেন। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য রেল পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, আনসার সদস্যরা নিয়োজিত আছেন।


রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, আজ যেহেতু যাত্রীদের চাপ বেশি তাই আজ আমাদেরও নানা উদ্যোগ আছে। আমরা চাই সবাই নিরাপদে ঘরে ফিরুক।


গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল সরকারি শেষ কর্মদিবস। দিনভর রাস্তায় ছিল ঘরমুখো মানুষের ঢল তবে দুপুরের পর থেকে এ ঢল আরো বাড়তে থাকে। ইট-পাথরের শহর ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে রাজধানীবাসী।


বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়া জাহান বলেন, উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, রংপুর ও লালমনিরহাট রুটের ট্রেন ছাড়া অন্য সব রুটে রেল সময়মতো ছেড়ে গেছে। বিগত কয়েক দিনের চেয়ে ভিড় বেশি। আজই সবাই বাড়ি ফিরছেন। যাত্রীদের যেন কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।


পাটুরিয়া ঘাটে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঘাটে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকায় ফেরি পারে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।


পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘাট একেবারে যানবাহন শূন্য হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু রাত ৯টার পর হঠাৎ যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগও বাড়ে। মধ্যরাতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি প্রায় ৬ কিলোমটার এলাকা ছাড়িয়ে যায়। ফেরি পার হতে একেকটি যানবাহনকে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা।



দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ঘরমুখো মানুষের ঢল


দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশ দ্বার দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া নৌঘাটে ঈদে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। শুক্রবার সকাল থেকে এ রুটে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে।


বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার বাণিজ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে স্বাভাবিক সময়ে দিনে ১৪টি থেকে ১৫টি ফেরি চলাচল করে। ঈদ উপলক্ষে যাহবাহনের বাড়তি চাপ সামলাতে এই নৌরুটে ১৯টি ফেরি চলাচল করছে। এর মধ্যে রো রো (বড়) ফেরি নয়টি, কে-টাইপ (মাঝারি) চারটি ও ইউটিলিটি ফেরি রয়েছে ছয়টি। নদীতে বর্তমানে নাব্যতার সংকট নেই। ফলে ফেরিগুলো পূর্ণ লোড নিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে। যাত্রাপথে কোনও ফেরি বিকল হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা মেরামতের জন্য পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা ‘মধুমতি’ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।


তিনি আরও বলেন, যানবাহনের বাড়তি চাপ সামাল দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে বুধবার (১৩ জুন) থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া অন্য সব ধরনের ট্রাক ও লরি পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে। ঈদের তিন দিন পর পর্যন্ত এসব যান পারাপার বন্ধ রাখা হবে। দৌলতদিয়ায় পাঁচটি ফেরিঘাট সচল রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও ফেরির যান্ত্রিক ক্রটি দেখা না দিলে, এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রা উপভোগ করতে পারবেন।


রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি জানান, ঈদকে ঘিরে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, মলম পার্টি ও পকেটমারসহ সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড নির্মূল করতে দৌলতদিয়া ঘাটে পাঁচটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে।


ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচলে ধীরগতি


ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। কোথাও কোথাও থেমে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। আর প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল যানবাহন থাকায় বাসের ছাদে, ট্রাকে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীরা।


ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গি থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কি. মি. এলাকায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। একই সঙ্গে ঈদে ঘরমুখো তুলনায় যানবাহনের সঙ্কট থাকায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে অনেক যাত্রী।


হাইওয়ে পুলিশ জানায়, মহাসড়কের ধারণক্ষমতার চেয়ে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যান চলাচল ধীরগতি হয়ে পড়ে। এর ওপর রাতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় কোনাবাড়ি, চন্দ্রা ও কালিয়াকৈরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় থেমে থেমে চলছে গাড়ি, দেখা দিয়েছে যানজট।


তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে মহাসড়ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ।


বিবার্তা/শারমিন/শাহনাজ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com