শিরোনাম
আজ চা শ্রমিক দিবস: জাতীয় স্বীকৃতি পায়নি ৯৭ বছরেও
প্রকাশ : ২০ মে ২০১৮, ১০:১৬
আজ চা শ্রমিক দিবস: জাতীয় স্বীকৃতি পায়নি ৯৭ বছরেও
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

২০ মে, ঐতিহাসিক চা শ্রমিক দিবস। ১৯২১ সালের এই দিনে ব্রিটিশদের অত্যাচার থেকে মুক্ত হতে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা-শ্রমিক নিজেদের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় চাঁদপুরের মেঘনাঘাটে ব্রিটিশ সৈন্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হাজার হাজার চা শ্রমিককে হত্যা করে ।


এরপর থেকে ২০ মে চা-শ্রমিকেরা ‘চা-শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন। তবে বার বার দাবি জানানো এবং অনেক আন্দোলনের পরও ৯৭ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি দিবসটি। ঘুচেনি চা শ্রমিকদের বঞ্চনা।


চা শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চানপুর চা বাগানের শ্রমিক নিপেন পাল জানান, চা শ্রমিকদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এদেশে এনে স্বল্প মজুরির মাধ্যমে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের কাজ করানো হয়। তাই শ্রমিকরা নিজ মুল্লুকে ফিরে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। এখনো চা শ্রমিকরা বঞ্চিত আছে। চা শ্রমিক দিবস উপলক্ষে চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগান এবং লস্করপুর চা বাগানে র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।


পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে চীন ছাড়া বিশ্বের অন্য কোথাও চায়ের প্রচলন ছিল না। ১৮৫৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে চা চাষ শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সে সময় বৃহত্তর সিলেটে চা বাগান তৈরির জন্য ভারতের আসাম, উড়িষ্যা, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়। ‘গাছ হিলেগা, রুপিয়া মিলেগা’ এমন প্রলোভনে শ্রমিকরা বাংলাদেশে এলেও তাদের ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি। বিশাল পাহাড় পরিষ্কার করে চা বাগান করতে গিয়ে হিংস্র পশুর কবলে পড়ে কত শ্রমিকের জীবন গেছে তার কোনো হিসেব নেই। এছাড়া ব্রিটিশদের অত্যাচার তো ছিলই।



তাদের অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদে তৎকালীন চা শ্রমিক নেতা পন্ডিত গঙ্গাচরণ দীক্ষিত ও পন্ডিত দেওসরন ‘মুল্লুকে চল’ (দেশে চল) আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯২১ সালের ২০ মে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক সিলেট থেকে হেঁটে চাঁদপুর মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছেন। তারা জাহাজে চড়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলে ব্রিটিশরা গুলি চালিয়ে শত শত চা শ্রমিককে হত্যা করে মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। যারা পালিয়ে এসেছিলেন তাদেরকেও আন্দোলন করার অপরাধে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।


মেঘনা ঘাটে আসাম রাইফেলসের গোর্খা সৈনিকরা নির্মমভাবে চা শ্রমিকদের হত্যা করে। এর পর যারা বেঁচে ছিলেন তারা নিরুপায় হয়ে আবার বাগানে চলে আসেন। তবে চা শ্রমিকরা যাতে ট্রেনে না চলতে পারেন তার জন্য সহজ-সরল শ্রমিকদেরকে বাগানের নামাঙ্কিত একটি করে ট্যাগ দেয়া হয়। সেই ট্যাগ দেখলেই শ্রমিকদেরকে নামিয়ে দেয়া হতো।



নিপেন পাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে চা-শ্রমিকরা তীর-ধনুক নিয়ে যুদ্ধ করে। কিন্তু দেশে এখনো চা শ্রমিকরা ভূমির অধিকার ধেকে বঞ্চিত।


চা শ্রমিক নেতা কাঞ্চন পাত্র জানান, এখনো চা শ্রমিকদের জীবনমানের কোনো উন্নয়ন হয়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের মৌলিক চাহিদা এখনো পূরণ হয়নি। অবিলম্বে চা শ্রমিকদের চুক্তি নবায়ন, দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা, রেশন হিসাবে সাপ্তাহিক ৫ কেজি চালসহ ৭ দফা দাবি না মানতে হবে।


তিনি ২০ মে রাষ্ট্রীয়ভাবে চা শ্রমিক দিবস ঘোষণা এবং ওই দিন স্ববেতনে ছুটি বাস্তবায়নেরও দাবি জানান। পাশাপাশি চা শ্রমিকদের চাকরি ক্ষেত্রে কোটারও দাবি জানান তিনি।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com