শিরোনাম
রানা প্লাজা ট্রাজেডি : যে ক্ষত শুকায়নি
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০১৮, ১৭:৪১
রানা প্লাজা ট্রাজেডি : যে ক্ষত শুকায়নি
রানা প্লাজা ধসে ইটের চাপায় আটকে যায় সাদ্দামের ডান হাত আর পা, ক্ষতিগ্রস্ত হাতটির আর রক্ষা হয়নি
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

“হঠাৎ করেই বিকট শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভেঙ্গে পড়লো ভবনের একটি দেয়াল। শরীরটা কোনো রকম সেখান থেকে বের করা গেলেও ইটের চাপায় আটকে যায় ডান হাত আর পা। পরে ক্ষতিগ্রস্ত হাতটির আর রক্ষা হয়নি। থেঁতলে যাওয়া পা দিয়ে এখনও ঠিক মতো হাঁটাচলা করা যায় না।”


সিক্ত চোখে এভাবেই নিজের জীবনের কালো অধ্যায় স্মরণ করলেন সাদ্দাম হোসেন। সাভারের রানা প্লাজা ধসে অঙ্গ হারান টগবগে এই যুবক।


২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন সাদ্দাম। রানা প্লাজার ঠিক পাশের ভবনটিতে ছিল তার কর্মস্থল। কিন্তু রানা প্লাজা ধসে গিয়ে পাশের ভবনটিতে হেলে পড়লে তার জীবনেও নেমে আসে অন্ধকার।


সাদ্দাম জানান, দুর্ঘটনার পর অনেক কষ্টে অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি, কিন্তু চাকরি দিচ্ছে না কেউ। আক্ষেপ করে বলেন, ''আমার শারীরিক অবস্থা দেখে যে কাজে ব্যবহার করা সম্ভব, সেই কাজই আমি করতে প্রস্তুত।”



দুর্ঘটনার পর সহায়তা পাবার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “পুনর্বাসন করার জন্য কেউ আগ্রহী হয় না। তাই জীবনটা এখন দুর্বিসহ মনে হয়।”


২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার পাঁচ তলায় ছিলেন নিলুফা বেগম। তিনি বলেন, “ভবনটি ভেঙ্গে পড়লে দৌঁড়ে বের হতে গিয়ে পড়ে যাই। তারপর পায়ের উপর রেলিং ভেঙ্গে পড়ে, চারপাশে অন্ধকার, কিছু দেখা যায় না। আমার গায়ের ওপ্র দুটি লাশ ছিল। নয় ঘন্টা পর উদ্ধারকারীরা এলে পা ধরে টান দেয়, তাদের বললাম, বেশি টানলে পা ছিড়ে যাবে। তারপর দেয়াল কেটে ধীরে ধীরে বের করে।”


তিনি বলেন, “উদ্ধারের পর ডাক্তার প-টি কেটে ফেলার কথা বলে, কিন্তু আমরা রাজি হইনি। পাঁচ বছর পর এসে সে পা-টি ফুলে বাঁকা হয়ে গেছে। তীব্র ব্যথা হয়। চিকিৎসার জন্য অর্থ দরকার, কিন্তু কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না।”


রানা প্লাজা ধসের পর বেঁচে যাওয়া সবারই গল্পগুলো এমন। সহায়তা মিললেও করা হচ্ছে না পুনর্বাসন।


মালিকপক্ষ বলছে সহায়তা দেয়া হচ্ছে এখনও, কিন্তু সেই কথার সঙ্গে মিল খুঁজে পান না ভুক্তভোগীরা।


আহত শ্রমিক সাইদুর রহমান বলেন, “দুর্ঘটনায় আমি ও আমার স্ত্রী আহত হই, তবে আমার স্ত্রীর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। হাঁটাচলা করতে পারে না। তাই সে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে, আর এখানে না থাকার কারণে সহায়তার অর্থ পাচ্ছে না।”


বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রানা প্লাজা ট্রাষ্ট ফান্ড থেকে সহায়তা অব্যাহত রয়েছে, কিন্তু আড়াই বছরে কেউ আসেনি।


জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর গার্মেন্টস কারখানার উন্নয়ন হলেও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হয়নি। এখন ২ থেকে ৩ হাজার ক্ষুদ্র এবং মাঝারি মানের কারখানা ঝুঁকিতে রয়েছে।



পাঁচ বছর আগে এই ডোবা শ্যাওলার এখানেই ছিল রানা প্লাজা ভবনটি


২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ২,৪৩৮ জনকে জীবিত এবং ১,১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে আরো ১৯ জন মারা যান। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১,১৩৬ জন।


এর পর সোহেল রানা ওরফে রানাসহ তার পরিবারের বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদক ও রাজউক সাভার ও ধামরাই থানায় ৭টি মামলা করে। ঘটনার পর থেকে রানা কোনো মামলায় জামিন না পাওয়ায় জেলহাজতেই আছে।


রানা প্লাজার বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন


সাভারে রানা প্লাজা ধসে হতাহতের ঘটনার পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রানা প্লাজার সামনে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তারা। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার ফাঁসির দাবি করেন।


এ ছাড়া নিহত শ্রমিকদের স্মরণে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাভারের সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান। নিহত শ্রমিকদের স্মরণে সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।


বিজিএমইএর দোয়া মাহফিল


রানা প্লাজা দূর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের স্মরণে বিজিএমইএর উদ্যোগে বিজিএমইএ কমপ্লেক্স ভবনে এক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মাহফিলে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com