শিরোনাম
শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০১৮, ০৩:৩১
শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান প্রধানমন্ত্রীর
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে তাদের পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।


বুধবার বিকেলে লন্ডনের একটি হোটেলে শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সরকার প্রধানদের এ গোলটেবিল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের বিশেষ করে আজ এখানে উপস্থিত বিশ্বের ব্যবসা খাতের নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। নিশ্চিত থাকুন, আপনারা এশিয়ার সবচেয়ে গতিশীল এফডিআই-বান্ধব সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন।’


প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, কমনওয়েলথ দেশসমূহের ১৩ জন সরকার প্রধান গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা।


এ সময় কমনওয়েলথভুক্ত সকল দেশে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি খাতে একযোগে কাজ করার লক্ষ্যে কমনওয়েলথের বাস্তব সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে, কমনওয়েলথভুক্ত সকল দেশে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি খাত একযোগে কাজ করার ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ বাস্তব সহযোগিতা দিতে পারে।’ শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কমনওয়েলথ ক্ষুদ্র ও দ্বীপ রাষ্ট্র (এসআইডিএস), এলএলডিসি, আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারে বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পায়।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৯ কোটি মধ্যবিত্ত ভোক্তা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ইইউ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপানের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার। যে কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে এশিয়ার পরবর্তী শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে রিব্র্যান্ডিং করছে।’


শেখ হাসিনা জানান, টেকসই শিল্প বিনিয়োগের লক্ষ্যে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন তাঁর সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার হয়ে আছে। আমাদের সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমরা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান এবং প্রযুক্তির ব্যবহার জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য আমার সরকারের গৃহীত নীতি-কৌশলসমূহ আজ বাস্তব ফল দিচ্ছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, বালাদেশ চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কমনওয়েলথ সদস্য দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে বেসরকারি অংশীদারিত্ব আশা করে। সরকার সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় একশত অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে নারীসহ আমাদের দক্ষ জনবলের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।


তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দেশের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে। এ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করে পণ্য উৎপাদন করে দেশের অভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মূদ্রা আয় করছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নমীল দেশের জন্য এসএমই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং রফতানি বহুমুখীকরনে ক্ষেত্রে একটি চালিকা শক্তি।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার রফতানি বহুমুখিকরণের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এ সকল সেক্টরে ব্যাপক সহায়তা দিচ্ছে। সম্ভাবনাময় কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আমরা অর্থ, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তি, কাঁচামাল এবং বাজার ভিত্তিক তথ্য প্রদান করছি। সরকার এসএমই বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সিঙ্গেল ডিজিটে জামানতবিহীন ব্যাংক লোন দিচ্ছে এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য চাহিদা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিরও আয়োজন করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য নিয়ে এসএমই শিল্পের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ইলেক্ট্রোনিক কমার্সের উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে।


শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির একটি মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। আমাদের সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে এসএমই একটি গুরুত্ব সেক্টর। এ কারণেই আমাদের সরকার এই সেক্টরের উন্নয়নে সহযোগিতা ও উৎসাহ যুগিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বের জন্য বাংলাদেশ সবসময় আইন ও স্বচ্ছতা ভিত্তিক ইনক্লুসিভ এবং অবাধ বহুমুখী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে সহায়তা দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা দোহা উন্নয়ন রাউন্ড সংলাপের অগ্রগতি থমকে যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে উন্নয়নশীল দেশের গ্রুপে যোগ দিচ্ছি।


এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, তদুপরি ডব্লিউটিও-এর ১১তম মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় আমরা লক্ষ্য করেছি যে, বহুমুখী বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে আশু কোন অচলাবস্থা কেটে যাওয়ার আশাও ম্লান হয়ে যাচ্ছে।


আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য প্রসারে প্রধানমন্ত্রীর ৭-দফা প্রস্তাব


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তঃকমনওয়েলথ ব্যবসা, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনার উন্নয়নের জন্য ৭ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। ‘কমনওয়েলথ’স রোল ইন প্রমোটিং ট্রেড, ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনোভেশন’ শীর্ষক বৈঠকে বুধবার দুপুরে এসব প্রস্তাব পেশ করেন তিনি।


বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অবশ্যই বাণিজ্য প্রশাসন উন্মুক্ত, আইন ভিত্তিক, স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করবো। আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনার লক্ষ্যে দেশগুলোকে অবশ্যই অভিন্ন সুযোগ-সুবিধা জোরদার করতে হবে।


এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ৭ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এগুলো হলো:


১. সদস্য রাষ্ট্রগুলোর শিল্প সম্ভাবনা ও উৎপাদনশীলতার খাত ভিত্তিক সমীক্ষা প্রয়োজন।
২. ছড়িয়ে থাকা বিনিয়োগ সম্ভাবনাসহ অভিন্ন বিনিয়োগ নীতি, নির্দেশনা ও কৌশল গ্রহণ।
৩. বাণিজ্য সহায়ক সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন এবং পিটিএ ও এফটিএ’র অশুল্ক বাধা কমিয়ে আনা।
৪. সেবা বাণিজ্যের জন্য উদারশাসন এবং স্বতন্ত্র পেশার সেবা সুবিধার জন্য খোলাবাজার চালু।
৫. প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ যাতায়াত এবং সরকারি ও বেসরকারি ক্যাটাগরিতে নির্দিষ্ট লোকদের জন্য ভিসা সহজীকরণ।
৬. অবকাঠামো এবং যোগাযোগ প্রকল্প গ্রহণ।
৭. এসএমই এবং ব্লু ইকোনমি খাতসহ উৎকৃষ্ট কেন্দ্র এবং প্রতিষ্ঠানের সহায়তা এবং উন্নয়ন, আরএন্ডডি, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তহবিল গঠন।


কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলোর জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে, তাদেরকে বৃহত্তম সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনা শক্তির পরিচালনায় কমনওয়েলথকে অবশ্যই এই বিপুল মেধাবীদের কাজে লাগাতে হবে।


তিনি বলেন, এ জন্য আমাদের অবশ্যই প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে হবে।বিশ্ব বাণিজ্যে টানা পোড়েন, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় হুমকি এবং অর্থবাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় কমনওয়েলথ কিভাবে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনার উন্নয়নে ইতিবাচক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে সেটি এখন অধিক গুরুত্বপূর্ণ।


শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্যের অনুমিত পরিমাণ ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামান্য বেশি। বিশ্বের জিডিপিতে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি দেশের অবদান ১৬ শতাংশ, অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৮টি দেশের এই অবদান ১৯ শতাংশ।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কমনওয়েলথ দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপি’র হার ৪ দশমিক ১ শতাংশ, এই তুলনায় ইইউ’র জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ। তিনি বলেন, আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কমনওয়েলথ দেশগুলোর জনসংখ্যা ২শ’ কোটির বেশি, যা ইইউ’র ৪ গুণ। এই হিসেব থেকে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসা ও বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা বোঝা যায়।


শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এটি দেখে খুশী যে গতবছর প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথ বাণিজ্য মন্ত্রীদের বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। এ সময়ে মন্ত্রীরা অভিন্ন সংস্কৃতিকে ‘কমনওয়েলথ ফ্যাক্টর’ হিসেবে আলোচনা করেন যা কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নেই এমন দেশের তুলনায় কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যকে ২০ শতাংশ সাশ্রয়ী করেছে।


সূত্র: বাসস


বিবার্তা/হাসান/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com