শিরোনাম
প্রত্যাবাসনের শুধু আশ্বাস দিলেন মিয়ানমারের মন্ত্রী
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০১৮, ২৩:১৯
প্রত্যাবাসনের শুধু আশ্বাস দিলেন মিয়ানমারের মন্ত্রী
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রীর আশ্বাসের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। তবে ‘খুব শিগগিরই’ এই প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।


বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকের পর এক প্রশ্নের জবাবে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে আশা করছেন তারা।


বৈঠক ‘খুবই ফলপ্রসূ’ হয়েছে মন্তব্য করে মিয়ানমারের মন্ত্রী বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল ক্যাম্পে থাকা বাস্তুচ্যুত লোকজনের সঙ্গে কথা বলা এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ প্রধানত পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা।


“এখন আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা অনেক জটিলতা পেরোতে পারব এবং আমি নিশ্চিত যে, যত দ্রুত সম্ভব আমরা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব।”


রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে কি না সে প্রশ্নের জবাবে উইন মিয়াত আয়ে বলেন, মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী যত তাড়াতাড়ি তারা ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড নেবে, তত দ্রুত তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে।


“আইন অনুযায়ী তাদের জাতীয় যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যে আসতে হবে, যাতে তারপরে তারা নাগরিকত্ব পেতে পারে।”


প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের হাতে রোহিঙ্গাদের যে তালিকা দেয়া হয়েছিল তার যাচাই-বাছাই ‘খুব ধীর গতিতে’ হওয়ার কথা স্বীকার করেন মিয়ানমারের মন্ত্রী। বলেন, “এখন আমরা এই প্রক্রিয়া জোরদার করেছি।”


রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর ও জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিল-ইউএনডিপির সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা এটা খুব শিগগির চূড়ান্ত করতে পারি।


উইন মিয়াত আয়ে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী। তিনি বুধবার বাংলাদেশে এসে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন।


গত বছর ২৫ অগাস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে দমন-পীড়নের মুখে কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। রোহিঙ্গারা আসার পর দেশটির প্রথম মন্ত্রী হিসেবে রোহিঙ্গা শিবিরে যান উইন মিয়াত আয়ে।


কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা পরিচালিত একটি কমিউনিটি সেন্টারে তিনি প্রায় ৫০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের প্রত্যাবাসনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন বলে রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করেন তিনি।


মিয়ানমারের আইনে এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর রোহিঙ্গা স্বীকৃতি নেই। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্পষ্ট কোনো জবাব দেননি উইন মিয়াত আয়ে।


তিনি বলেন, “যদি তারা নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার চায় এবং নাগরিকত্ব পায় তাহলে মিয়ানমারের অন্যান্য নাগরিকদের মতো একই অধিকার পাবে। তা না হলে তাদের স্ট্যাটাস অনুযায়ী তারা অধিকার ভোগ করবে।”


রোহিঙ্গা নিপীড়নের জন্য দায়ীদের বিচার নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন তাদের নতুন প্রেসিডেন্ট।


“এবং আমরা পরিষ্কার ঘোষণা করছি যে, আমাদের আইনের শাসন থাকতেই হবে। আইনের শাসনের ওপর আমরা জোর দিচ্ছি। আইনের শাসন অনুযায়ী, তারা আইন লংঘন করলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।”


‘বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক’ পরিবেশে ‘চমৎকার’ বৈঠক হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী।


শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের জন্য মিয়ানমারের মন্ত্রীর প্রশংসা করে তাকে অভিনন্দন জানান তিনি। বলেন, “প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে যেসব সমস্যা ও বাধা রয়েছে সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।”


এই প্রক্রিয়া শুরুর জন্য উভয়পক্ষের সদিচ্ছা দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা তা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছি। উভয়পক্ষ থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব ও সদিচ্ছা রয়েছে। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া দ্রুত করতে একটি ফর্ম ব্যবহারের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।”


রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বৈঠকে মতৈক্য হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মিয়ানমারের মন্ত্রী এ বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। বেশ কয়েকটি দেশের সহযোগিতায় এই কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।”


তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপির সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছে মিয়ানমার এবং তাদের মধ্যে এ বিষয়ে ‘খুব শিগগির’ চুক্তি সই হবে।


“এখন আমরা একমত হয়েছি যে, যারা ফেরত যাবে তারা অল্প কয়েক দিনের বেশি ট্রানজিট ক্যাম্পে থাকবে না। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছে যে, যারা ফেরত যাবে তাদের যাতে জীবিকার ব্যবস্থা হয় সেজন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।


“এখানে আসার আগে তাদের যে জীবন যাপন করতে হত, তার চেয়ে ভালো ব্যবস্থা হতে হবে।”


শরণার্থীদের নিজ ভূমিতে ফেরত যেতে উৎসাহ যোগাতে স্বেচ্ছাসেবক পাঠানোর জন্যও মিয়ানমারকে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।


বৈঠকে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ এখন যেসব সমস্যা মোকাবেলা করছে সেগুলো তুলে ধরেছেন তিনি।


মন্ত্রী জানান, এখন সীমান্ত রেখায় অবস্থানরত বাস্তুচ্যুতদের ফিরিয়ে নিতে তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি। এটা তাদের জন্য খুব সহজ কাজ। মিয়ানমারের মন্ত্রী ফেরত নিতে সম্মতি জানিয়েছেন।


বিবার্তা/হাসান/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com