শিরোনাম
ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম, ব্যবস্থা নেবে এনজিও ব্যুরো
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:৫২
ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম, ব্যবস্থা নেবে এনজিও ব্যুরো
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণে অনিয়মে জড়িয়ে পড়া আট বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। বৈদেশিক অনুদান সম্পর্কিত আইন লঙ্ঘনের দায়ে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক এই সংস্থা। এরই মধ্যে ঘটনার ব্যাখ্যা পাঠিয়েছে আট এনজিও।


এ বিষয়ে এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম বলেন, অভিযুক্ত এনজিওগুলোর ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে আরো তথ্য-প্রমাণ চাওয়া হয়েছে। এগুলো পাওয়ার পর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরই মধ্যে ৩/৪টি এনজিওকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে।


এনজিও ব্যুরোর উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কাজ করা নয়টি এনজিওর ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের তথ্য দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক। পরে একটি এনজিওর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়। আটটি এনজিও কাছে অনিয়মের বিষয়ে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয় এনজিও ব্যুরো। সেই ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে, এখন ব্যবস্থা নেয়া হবে।


মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের সহায়তায় কাজ করছে ১০৫টি এনজিও। এর মধ্যে আটটি এনজিও ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ:


অগ্রযাত্রা বাংলাদেশ : ১৪০ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি ডাল দেয়ার কথা থাকলেও ৭০ টাকা কেজি দামের তিন কেজি ডাল দেয়া হয়। ২০০ টাকা দামের দুইটি গামছা দেবার কথা থাকলেও ৮০ টাকা দামের একটি গামছা ছিঁড়ে দুই টুকরো করে দুটি প্যাকেটে দেয়া হয়। ডাস্টফেন, ব্রাশ, ডাস্টবিনের একটি ৩২০ টাকার সেট দেয়ার কথা থাকলেও ৪৫ টাকা মূল্যের ছোট ময়লার ঝুড়ি ও বেলচা দেয়া হয়।


কাতার চ্যারিটি : প্রতিটি ২৮ হাজার টাকা মূল্যের ১০০০টি তাবু দেবার কথা থাকলেও প্রতিটি ২৪ হাজার টাকা মূল্যের ১০০০টি তাবু দেয়া হয়। এছাড়া ৫০০০ পরিবারের জন্য ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা জেলা প্রশাসক কক্সবাজার কর্তৃক মূল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থাপন করার নির্দেশনা থাকলেও অদ্যাবধি তা মূল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থাপন করা হয়নি।


ছওয়াব : সোশ্যাল এজেন্সি ফর ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট ইন বাংলাদেশের (ছওয়াব) বরাদ্দ অনুসারে ১১ লাখ টাকার ত্রাণ সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও সরেজমিন চার লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী পাওয়া যায়।


প্লান বাংলাদেশ : ৩০০০ টাকার ডিগনিটি কিটস দেয়ার কথা থাকলেও সরেজমিনে ৯০০ টাকার ডিগনিটি কিটস পাওয়া যায়। এবং এ প্রেক্ষিতে ওই অফিস থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি।


সেভ দ্যা চিলড্রেন : ১৩৩ টাকা কেজি ডাল দেয়ার কথা থাকলেও সরেজমিনে কিছু ৮৫ টাকা কেজির ব্রানডেড ডাল আর কিছু খোলা বাজারের ৬৫ টাকা কেজির মোটা ডাল পাওয়া যায়। প্যাকেজিংয়ের খরচ ৯২.৯৬ টাকা ধরা হলেও প্রকৃত খরচ হয় ১৬ টাকা। ফলে ১৭ লাখ টাকার বেশি শুধুমাত্র প্যাকেজিংয়ের খরচই উদ্বৃত্ত থেকে যায়, যা তদন্তে বের করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া চাইল্ড রিক্রিয়েশন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে।


রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি : রোহিঙ্গা ট্রানজিট ক্যাম্পে ফিল্ড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের তথ্য সংগ্রহে অসহযোগিতা করেছে রেড ক্রিসেন্ট। এ বিষয়ে সংস্থাটির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও।


সেভ দ্যা চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন কো-অর্ডিনেটর অলি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমন হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সুরাহা হবে।


তবে এ বিষয়ে এনজিও প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক এ্যারোমা দত্ত বলেন, কিছু এনজিও কারণে এই খাতের সুনাম বিনষ্ট হতে পারে না। তিনি বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।


এনজিও কোস্ট-এর সহকারি পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। রোহিঙ্গাদের জন্য এ পর্যন্ত ৫৫০ কোটি টাকার অর্থ ছাড় করেছে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com