শিরোনাম
হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০১৬, ০৯:৫৭
হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা
সেলিম হায়দার, তালা
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। অথচ অযত্ন আর অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই নয়নাভিরাম ঝিলে ভাসা ফুল। যার বাংলা নাম শাপলা, ইংরেজি নাম ওয়াটার লিলি। মণিপুরী ভাষায় থরো আংগৌবা, তামিল ভাষায় ভেলাম্বাল, সংকৃত ভাষায় কুমুডা, আর আসাম ভাষায় এই শাপলা ফুলকে নাল বলা হয়। শুধু বাংলাদেশ নয় শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল এই শাপলা। শ্রীলংকায় শাপলাকে বলে নীল-মাহানেল।


গ্রীক দার্শনিক প্লেটো ও এরিস্টটল এর এক শিষ্য থিউফ্রাস্টাস বলেছেন এটা একটি জলজ উদ্ভিদ যা প্রায় ৩’শ খ্রিস্টপূর্ব পুরনো। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাধারণতো পাঁচ প্রকার শাপলা ফুল দেখা যায়। সাদা, লাল, বেগুনি, হলুদ, নীল রঙ্গের। এর মধ্যে সাদা শাপলা হলো বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জের আনাছে কানাচে ডোবায় অহরহ দেখা যেত এই জলে ভাসা ফুল। তবে অযত্ন অবহেলা আর কৃষি জমিতে অধিক পরিমাণে কীটনাশক ও রাসয়নিক সার ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।



সাতক্ষীরা তালা উপজেলারসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনও কিছু সাদা শাপলা দেখা গেলেও লাল, হলুদ, নীল, বেগুনি শাপলা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিল জলাশয় ও নিচু জায়গায় পানি জমা থাকলে সেখানেই প্রাকৃতিক ভাবেই জন্ম নেয় আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা।


এক দশক আগেও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক শাপলা ফুল দেখা যেতো। তখন পুকুর খাল বিল ও জলাশয়গুলিতে লাল, গোলাপি, সাদা, বেগুনি, নীল ও বিরল প্রজাতির হলুদ শাপলা ফোঁটার কারণে চারিদিকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যে পরিণত হতো।


বর্তমানে সাদা প্রজাতির শাপলাগুলি বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও দেখা যাচ্ছে না গোলাপি, বেগুনি, নীল ও হলুদ শাপলা। এসব শাপলা হারিয়ে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলে নানা জনের নানা অভিযোগ রয়েছে। কারো কারো মতে কপোতাক্ষের নাব্য হ্রাস, খাল বিল ও জলাশয় ভরাট করে কৃষি জমি তৈরি, ঘর বাড়ি তৈরি, ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যেতে বসেছে।


এক সময়ে ঝিলে বিলে পুকুরে বর্ষা মৌসুমে নানা রঙ্গের শাপলার বাহারী রূপে মানুষের নয়ন জুড়িয়ে যেত। শাপলা ছোটদের খুব প্রিয়। শাপলার ড্যাপ শিশুদের প্রিয় খাবার এবং গ্রামের লোকেরা ড্যাপ দিয়ে খই ভেজে মোয়াসহ বিভিন্ন প্রকার সুস্বাদু খাবার তৈরি করে।


গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও খুব জনপ্রিয় এই শাপলা। অনেকে আবার শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া লাল শাপলার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে।


শাপলা ফুল দিনের বেলা ফোটে এবং সরাসরি কাণ্ড ও মূলের সাথে যুক্ত থাকে। শাপলার পাতা আর ফুলের কাণ্ড বা ডাটি বা পুস্পদণ্ড পানির নিচে মূলের সাথে যুক্ত থাকে। আর এই মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে এবং পাতা পানির উপর ভেসে থাকে। মূল থেকেই নতুন পাতার জন্ম নেয়। পাতাগুলো গোল এবং সবুজ রঙের হয়। কিন্তু নীচের দিকে কালো রঙ। ভাসমান পাতাগুলোর চারদিক ধারালো হয়। পাতার সাইজ ২০ থেকে ২৩ সেন্টিমিটার এবং এদের ব্যাপ্তি প্রায় ০.৯ থেকে ১.৮ মি। এই ফুলে ৪ থেকে ৫ টি বৃতি থাকে ও ১৩ থেকে ১৫ টি পাপড়ি থাকে। ফুলগুলো দেখতে তারার মত মনে হয়। কাপের সমান বৃতিগুলো ১১-১৪ সেমি হয়ে থাকে। প্রায় বছরের সব সময় শাপলা ফুটতে দেখা যায় তবে বর্ষা ও শরৎ এই উদ্ভিদ জন্মানোর শ্রেষ্ঠ সময়।



বিবার্তা/সেলিম/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com