রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃত করে গা ঢাকা দেয়। তবে বিকৃত সেই ছবি সরানোর উদ্যোগ নেয়নি কেউ। উপরন্তু সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা একে অন্যের কথা বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ৭ই মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক মর্যাদা অর্জন করায় দেশবাসীর মধ্যে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের বন্যা। বিরল এ গৌরব উদযাপনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ঐতিহাসিক ছবিগুলো ব্যানার আকারে রাস্তার পাশে বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শোভা পাচ্ছে। রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনেও সেই ভাষণের ছবিসম্বলিত ৫টি ব্যানার টানানো হয়।ওই ব্যানারগুলো কে বা কারা কেটে ফেলেছে।
বিষয়টি বিবার্তা২৪.নেট-এর নজরে আসার পর বুধবার রাত ১১টা ২৮ মিনিটে ‘জাতির জন্য এ বিরাট অসম্মান!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর কেটে গেছে আরো ১৪ ঘণ্টা। কিন্তুবিকৃত করা সেই ব্যানারগুলো সরানো হয়নি।
বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে গিয়ে দেখা গেছে,বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ছবিসম্বলিত পাঁচটি ব্যানার রয়েছে। এর মধ্যে পার্কের দক্ষিণ পাশের প্রথম ব্যানারটির পুরো অর্ধেক কাটা। দ্বিতীয় ব্যানারটির শুধু বঙ্গবন্ধুর ছবিটি কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও বাকি ব্যানারগুলোধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ব্যানার কাটার পর ট্যাপদিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রমনা থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, এটা আমার এলাকার মধ্যে নয়,এটা শাহবাগ থানার মধ্যে।
যোগাযোগ করা হয় শাহবাগ থানার ওসি মো. আবুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমন সংবাদ আমাদের কাছে নেই। এছাড়াও ছবি সাঁটানোর বিষয় সিটি করপোরেশন দেখে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি সিটি করপোরেশের সাথে আলাপ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।
এদিকে, ছবিগুলো কেটে ফেলায় পথচারীরাও হতবাক হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে বাংলা মটর থেকে কারওয়ান বাজারের দিকে যাওয়া আবুল হোসেন নামে এক পথচারী বিবার্তাকে বলেন, এটা শুধু জাতির জনককে অপমান করা নয়, পুরো জতিকে অপমান করা হয়েছে। এই বিকৃত ব্যানার আরো আগেই সরানো উচিত ছিলো।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বিবার্তাকে বলেন, জাতির জনককে যারা অসম্মান করে, তারা জাতির কলঙ্ক। ওরা কার্যত সমগ্র জাতিকেই অসম্মান করেছে। অত্যন্ত দুঃখজনক, সংবাদ প্রকাশ আর গণমানুষের প্রতিবাদের পরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। বঙ্গবন্ধুর মাথাকাটা ছবি এখনো সরানো হয়নি! আমি লজ্জিত।
এদিকে, বুধবার রাতে বিবার্তায় সংবাদ প্রকাশের আগে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান ও প্রজন্ম'৭১ -এর সভাপতি শাহীন রেজা নূর ও গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধরী।
শাহীন রেজা নূর বলেছিলেন, যখন বিশ্ব ইতিহাসে ৭ই মার্চের ভাষণটি স্থান পায় এবং আমরা এক বিরল গৌরবের অংশীদার হই, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চেতনায় বিশ্বাসী কিছু পাকিস্তানপন্থী মানসিকতার মানুষদের দ্বারা এমন ন্যক্কারজনক ও ঘৃণিত কাজটি করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির নন, তিনি আজ বিশ্ব আসনে প্রতিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধুকে ছোট বা বিকৃত করা হলে বাঙালি ও জাতির ইতিহাসকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। এই ঘৃণিত কাজের তীব্র নিন্দা জানাই।
চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধরী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছিলেন, আজকে সমগ্র পৃথিবী ৭ই মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর সাবেক ডাকসু ভিপি, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ১৩ নভেম্বরে শাহাবাগের সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ বলেছেন। অথচ একটি গোষ্ঠী স্বাধীনতা বা বঙ্গবন্ধু কোনোটিকেই মেনে নিতে পারেনি। সেই গোষ্ঠী তাদের হীন মানসিকতার কারণে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল (ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। গত সোমবার শাহবাগে ‘৭ মার্চ উদযাপন কমিটি’ সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিবার্তা/খলিল/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]