দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি বা ত্রাণ বিতরণ ও সংগ্রহের নামে কোনো গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, সরকার বিষয়টিকে সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে। সবাইকে সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ্ কামাল, কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ এমএ হাশেম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী এ সময় বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারেরর রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে সাময়িকভাবে রাখা হচ্ছে। কুতুপালং ক্যাম্পকে ২০টি ব্লকে ভাগ করা হবে। প্রত্যেক ব্লকের জন্য একটি প্রশাসনিক ও পরিসেবা ইউনিট ও একটি গোডাউন স্থাপন করা হবে। এর ফলে সকল ধরনের সেবা প্রদান সহজতর হবে।
ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ৪ লাখ ২০ হাজার লোক ধরে প্রথমে ৮৪ হাজার শেড নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে ৭০ হাজারের অধিক শেড নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মোট ১ লক্ষ ৫০ হাজার সেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যা দেশী বিদেশী এনজিওদের সহায়তায় দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। সেডগুলো সাময়িক সময়ের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে।
ক্যাম্পের ভিতর আইন শৃংখলা রক্ষায় নতুন পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হবে এবং পর্যাপ্ত আনসার সদস্য মোতায়েন রাখা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কুতুপালং ক্যাম্পে নতুন ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ও পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ক্যাম্পের বাইরে যেসব রোহিঙ্গা থাকছেন ক্রমান্বয়ে তাদের সবাইকে একই ক্যাম্পে রাখা হবে। ইতোমধ্যে ক্যাম্পের বাইরে পাহাড়ী এলাকা ও অন্যান্য স্থানে গিয়ে যেসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, ক্যাম্প এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৮ কিলোমিটার ও এলজিইডি ৯ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ করছে এবং এই কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪টি গোডাউন নির্মাণের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ৫টি গোডাউন নির্মিত হয়েছে। বাকি ৯টির নির্মাণ কাজ এ সপ্তাহে শেষ হবে। এর বাইরে ২০টি ব্লকে ২০টি গোডাউন নির্মাণ করা হবে।
খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ৬ লক্ষ লোকের খাদ্যের সংস্থান করবে। এর বাইরে বাকী লোকদের প্রাথমিকভাবে দেশী বিদেশী সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ত্রাণ থেকে তাদের খাদ্য সরবরাহ করা হবে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা তাদের নতুন বাজেটে বাকী লোকদের অন্তর্ভুক্ত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চিকিৎসা সেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সরকারীভাবে ক্যাম্পে ৩৬টি কমিউনিটি হাসপাতাল ইউনিট করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ৫ হাজার গর্ভবতী মহিলাকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়েছে। ৭০ হাজার লোককে বিভিন্ন ধরনের টিকা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশী বিদেশী এনজিও-ও সেখানে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৩৫০০ লেট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। আরও ১৭৫০০ লেট্রিন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৯০০ সেনিটারী টয়লেট, ১৫২৮টি টিউবওয়েল স্থাপন করেছে। এছাড়াও ১৪টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও ৭টি ওয়াটার ট্রাকের মাধ্যমে খাবারের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
ত্রাণমন্ত্রী বলেন, বর্ধিত ক্যাম্প এলাকা আলোকিত রাখতে ৯ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রত্যেক খুঁটিতে স্ট্রিট ল্যাম্প লাগানো হবে। ক্যাম্পের ভিতরে বন্ধুচুলা সরবরাহ করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিবার্তা/রোকন/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]