শিরোনাম
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ওআইসি-কে প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১১:৫২
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ওআইসি-কে প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়াসহ রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের ছয়টি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ওআইসি কনট্যাক্ট গ্রুপের বৈঠকে তিনি এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন।  

 

শেখ হাসিনার ছয় দফা প্রস্তাব হল- ১. রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সব ধরনের নিপীড়ন এ মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে। ২. নিরপরাধ বেসামরিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মিয়ানমারের ভেতরে নিরাপদ এলাকা (সেইফ জোন) তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে তাদের সুরক্ষা দেয়া হবে। ৩. বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত সব রোহিঙ্গা যেন নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ৪. রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কফি আনান কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ৫. রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে চিহ্নিত করার যে রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডা মিয়ানমার চালাচ্ছে, তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ৬. রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে না ফেরা পর্যন্ত তাদের জরুরি মানবিক সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে হবে ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশগুলোকে।

 

গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ অভিযানে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। কয়েক যুগ ধরে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশে এ দফায় চার লাখেরও বেশি শরণার্থী প্রবেশ করেছে। এই শরণার্থীদের ৬০ শতাংশই শিশু। রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই সংখ্যা ১০ লাখে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

 

অবশ্য, মিয়ানমার সরকারের দাবি, রাখাইনে সাধারণ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নয়, তারা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। তবে জাতিসংঘের দাবি, সেখানে জাতিগত নিধন চলছে। 

 

ওআইসি কনট্যাক্ট গ্রুপের বৈঠকে বিভিন্ন মুসলিম দেশের নেতাদের উপস্থিতিতে বক্তৃতার শুরুতেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে আজ মুসলমান ভাইবোনেরা জাতিগত নির্মূল অভিযানের মুখোমুখি হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের চালানো সামরিক অভিযান বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘এটা এক অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয়। আমি নিজে তাদের কাছে গেছি, তাদের মুখ থেকে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ভয়াবহ দুর্ভোগের বিবরণ শুনেছি। আমি বলব, আপনারা সবাই আসুন, এই শরণার্থীদের মুখ থেকে শুনে যান, মিয়ানমারে কীরকম নির্মমতা চলছে।’

 

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানান, নির্যাতনের শিকার চার লাখ রোহিঙ্গাকে গত তিন দশক ধরে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। এবারের চার লাখ মিলিয়ে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়েছে। ভূমি স্বল্পতা আর সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশ তাদের আশ্রয়, খাবার আর জরুরি সহায়তা দিয়ে আসছে।  

 

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী’ বলে দাবি করছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। অথচ ঐতিহাসিক নথিপত্র বলছে, রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছে শত শত বছর ধরে। মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং দাবি করেন, যারা রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি করছে, তারা ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’। এ বিষয়ে মিয়ানমারের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বক্তব্যে কান না দিতে আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

 

রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলায় ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রাখাইনে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযানের অবসান দেখতে চাই। মিয়ানমারে এই সংকটের সূচনা হয়েছে এবং সেখানেই এর সমাধান হতে হবে। এ বিষয়ে ওআইসির যে কোনো উদ্যোগে অংশ নিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

 

বিবার্তা/নিশি

 

>> রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার আভাস সুচির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com